ছাতক প্রতিনিধি

৩০ মার্চ, ২০১৯ ২২:৫৯

১০ দিন ধরে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন বন্ধ

রাষ্ট্রায়াত্ব ছাতক সিমেন্ট কারখানায় উৎপাদন দশ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। কারখানার অভ্যন্তরের ৪ টি সিমেন্ট মিল অকেজো হয়ে পড়ার কারণে কারখানায় সিমেন্ট উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানা গেছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন কারখানা শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

কারখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, গত কয়েক মাস ধরে তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। কারখানায় উৎপাদনও বর্তমানে বন্ধ হয়ে পড়েছে।

তারা জানান, মূল কারখানায় স্থাপিত ৪ টি সিমেন্ট মিলের মাধ্যমে সিমেন্ট উৎপাদন করা হতো। ইতিমধ্যে দুটি সিমেন্ট মিল ৫০৪, ৫১৬ অকেজো হয়ে পড়ায় দু’বছর ধরে অন্য দুটি মিল মেরামতের মাধ্যমে কারখানার উৎপাদন সচল রাখা হয়েছিল। এরমধ্যে একমাস আগে ৫১০ মিলটি বিকল হয়ে পড়লে ৫২১ মিল দিয়েই কারখানায় নামেমাত্র উৎপাদন হতো। বর্তমানে এ মিলটিও অকেজো হওয়ায় কারখানায় সম্পূর্ণরূপে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়েছে।

ব্যক্তি মালিকানায় ১৯৩৭ সনে আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট কোম্পানী নামে এ কারখানাটি ছাতকে প্রতিষ্টিত হয়।  ১৯৬৬ সন থেকে কারখানা ইপিআইডিসি’র নিয়ন্ত্রনে আসে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমে বিএমওজিসি, পরে বিএমইডিসি এবং সর্বশেষ ১৯৮২ সালের পহেলা জুলাই থেকে বিসিআইসি’র নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ছাতক সিমেন্ট কারখানাটি সবসময়ই ছিলো সরকারের একটি লাভজনক প্রতিষ্টান।

জানা যায়, সর্বশেষ ২০০৩-০৪ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮০ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন সিমেন্ট উৎপাদিত হয় ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। এরপর থেকেই কমতে শুরু করে কারখানাটির উৎপাদন। গুনতে হচ্ছে লোকসান। অথচ ছাতক সিমেন্ট কারখানার পাশেই বহুজাতিক বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কোম্পানি প্রতিবছরই বিশাল অংকের মুনাফা গুনছে।

ছাতক সিমেন্ট কারখানা সূত্রে জানা যায়, কারখানার বর্তমান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা দৈনিক ৫০০ মে.টন। কিন্তু বন্ধ হওয়ার আগে দিনে উৎপাদন হতো দু থেকে আড়াইশ’ মে. টন সিমেন্ট। ২০১১-১২ অর্থ বছর থেকেই বিভিন্ন অজুহাতে কারখানাটি লোকসানমূখি হয়ে পড়ে। এ অর্থ বছরেই কারখানাকে লোকসান গুনতে হয়েছে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ক্রমান্বয়ে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ও ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২১ কোটি টাকা।

২০১১ সালে ছাতক সিমেন্ট কারখানা আধুনিকায়নে ৬শ ৬৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বিসিআইসি’র কারখানাটি আধুনিকায়নে ব্যালেন্সিং মর্ডানাইজেশন রেনোভেশন এন্ড এক্সপেনশন (বিএমআরই) প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। বিএমআরই সম্পন্ন হলে এ প্রকল্পে ড্রাই প্রসেসের মাধ্যমে বছরে ৩ লাখ মেট্রিক টন ক্লিংকার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে বছরে ৭৬ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে জানান কারখানার একাধিক কর্মকর্তা।

ছাতক সিমেন্ট কারখানার সাবেক সিবিএ সেক্রেটারী আবু মোহাম্মদ সেলিম জানান, গত দু’বছর ধরেই মূলত কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। মাসের মধ্যে ৩/৪ দিন উৎপাদন হয় আর বাকি দিনগুলো বন্ধই থাকে।

কারখানা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী খলিলুর রহমান জানান, গত ১০ দিন ধরে এ কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

কারখানায় উৎপাদন বন্ধের ব্যাপারে ছাতক সিমেন্ট কারখানার এমডি শ্যামলেন্দু দত্তের সাখে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে এ ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত