সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ জুন, ২০১৯ ১৮:৪৫

ওসি ও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জেল খাটানোর অভিযোগ

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

সিলেট সদর উপজেলার খাদিমপাড়া ইউনিয়নে অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করায় এবং প্রতিবাদ বন্ধে উপঢৌকন না নেওয়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটানোর অভিযোগ উঠেছে শাহপরাণ (রহ.) থানার সদ্যপ্রাক্তন ওসি আক্তার হোসেন এবং খাদিমপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট আফসর আহমদের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আজমল আলী নেপুর।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- খাদিমপাড়া ইউনিয়নের মুরাদপুর ও পীরের চক গ্রাম সুরমা নদীর তীরে অবস্থিত। এই দুটি গ্রামে রয়েছে পৃথক স্কুল, মাদরাসা, কবরস্থানসহ অসংখ্য বসতবাড়ি। কিন্তু  একটি গোষ্ঠি এই সুরমা নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে চাইলে এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে তাতে বাধা প্রদান করেন। এমনকি বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে এলাকাবাসী একাধিক মানববন্ধন করেছে। কিন্তু ওসি আখতার ও চেয়ারম্যান আফসর আহমদ চিহ্নিত দখলবাজদের নিয়ে বালু উত্তোলনের চেষ্টা চালিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তারা প্রতিবাদ বন্ধ করতে তারা আমাকে ১০ লাখ টাকা উপঢৌকন দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু আমি তা নেইনি। পরে এলাকার ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং মানববন্ধন করলে  বালু উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে নানা হুমকী দেন। যার পরিণতি হিসেবে আমাকে মিথ্যা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় কারাভোগ করতে হয়। এছাড়া তারা আমাকে একাধিক মিথ্যা মামলার আসামী করেছেন।

তিনি আরো বলেন- তার প্রতিবেশি আলতা মিয়ার (৬০) বাড়িতে যাতায়াতের নিজস্ব কোনো রাস্তা ছিল না। এই বাড়ির লোকজন পাশের বাড়ির আবদুল কাহির গেদন মিয়ার বাড়ির রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতো। এতে প্রায় আলতা মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন প্রায় সময় বাধার সম্মুখিন হতেন। এই অবস্থায় গত ১৫ মে গেদন মিয়া তার বাড়ির রাস্তায় বেড়া দিয়ে আলতা মিয়ার পরিবারের লোকজনের চলাফেরা বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি আমাকে ও গ্রামের লোকজনকে জানান আলতা মিয়া। তখন আমি উদ্যোগ নেই  আমার ও আমার গোষ্ঠির লোকজনের জায়গার উপর দিয়ে তাদেরকে রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার। এতে বাধা প্রদান করেন রাছনা বেগম ও গেদন মিয়া। বিষয়টি আপসে নিষ্পত্তি করতে ১৬ মে রাছনা বেগমের বাড়িতে গ্রামের পঞ্চায়েতের বৈঠক বসে। বৈঠক বসার পর রাছনা বেগম ও তার আত্মীয় দৌলত মিয়া অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।

এই অবস্থায় উত্তেজনা দেখা দিলে সালিশ ব্যক্তিরা আমাকেসহ আমার গোষ্ঠির লোকজনকে সরিয়ে দেন। খবর পেয়ে শাহপরান থানার এসআই বুরহান উদ্দিন একদল পুলিশ নিয়ে রাত বারটায় ঘটনাস্থলে যান। ঘটনা জেনে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। ১৭ মে উভয় পক্ষকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেন এসআই বুরহান উদ্দিন। কিন্তু নানা কারণে ১৭ মে আমি অভিযোগ করতে পারিনি থানায়।

আজমল আলী নেপুর বলেন- ১৮ মে থানার কনস্টেবল খুরশিদ মিয়া মুরাদপুরে যান শালিস ব্যক্তিত্ব ইলয়াছ মিয়া বতাইকে গ্রেফতার করতে। বিষয়টি জানতে পেরে আমি খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বেলালকে অবগত করি। পরে পুলিশ ইলিয়াছ মিয়াকে গ্রেফতার না করেই ফিরে যায়। এদিন আবার ইলিয়াছ মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করতে গেলে তিনি জনতার সমাবেশের মধ্য দিয়ে সটকে পড়েন। রাত ৯ টার দিকে আমি শাহপরাণ থানায় যাই অভিযোগ নিয়ে। পুলিশের পরামর্শে ওই অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলাম। আমি থানায় যাওয়ার পর ওসি আক্তার আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে হুমকী দেন। ওসি আক্তার আরো বলেন আসামি ইলিয়াছ মিয়াকে আমি গ্রেফতার করতে দেইনি। এসময় আমি ওসির বক্তব্যের প্রতিবাদ করি।  

তিনি অভিযোগ করে বলেন- কিছুক্ষণ পর আমাকে থানায় বসিয়ে বাইরে যান ওসি ও পরিদর্শক তদন্ত। ফেরে রাত ১২টায়। এর পরপরই থানায় প্রবেশ করেন স্থানীয় রাছনা বেগম, সোনরা বেগম, আছিয়া বেগম আলম মিয়া ও নিরালম। রাতে আমার লোকজন থানায় গিয়ে আমার সম্পর্কে জানতে চায়। কিন্তু ওসি আখতার কোনো উত্তর দেয়নি তাদের। ১৯ মে সকাল ৯ টায় আমাকে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এই মামলায় আমাকে এক মাসের বেশি সময় কারাভোগ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন- এছাড়াও চেয়ারম্যান আফসরের লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান কল্লগ্রামের ফখরুল ইসলাম দুলু তাকে প্রাণে মারার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। তার গ্রুপের হুমকিতে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া এ ঘটনার জন্য ওসি আক্তার হোসেন, চেয়ারম্যান আফসর ও ফখরুল ইসলাম দুলুর শাস্তি দাবী করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- খাদিমপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সিরাজ মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, মুরাদপুর গ্রামের মুরব্বী ইসলাম উদ্দিন, খলিল মিয়া, আরব আলী, আলাউদ্দিন মিয়া, তফুর মিয়া, গিয়াস মিয়া, ফটিক মিয়া, সুল্লুছ মিয়া, ইলিয়াছ মিয়া, হিফজুর রহমান, আব্দুল মিয়া, কাওছার মিয়া, জুনেদ মিয়া, হোসেন মিয়া, জায়েদ মিয়া, ফারুক মিয়া, মামুন মিয়া, ফেরদৌস মিয়া প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত