নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জুন, ২০১৯ ২১:৫৯

মন্ত্রীরা যাওয়ার পরই খুলে নেওয়া হয় গাউন

সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ছবি নিয়ে বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোচনা চলে। হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের সেই ছবিতে দেখা যায়- গাউন পরে হাসপাতালের পরিস্কার বিছানায় শুয়ে আছেন দু'জন রোগী। পরিরস্কার-পরিচ্ছন্ন ওই ওয়ার্ডে রয়েছে ফুলের টবও।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচালে রেল দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে বুধবার ওসমানীতে আসেন দুই মন্ত্রী। এমনিতে এখানে রোগীদের গাউন প্রদান করা না হলেও মন্ত্রীদের আসার কারণে বুধাবার ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত দুই রোগীকে গাউন পড়িয়ে শুইয়ে রাখা হয়।

রোগীদের নিয়ে এমন আচরণের সমালোচনা করেন অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী। নিত্যাকার দেখা অপিরচ্ছন্ন-নোংরা ওসমানী হাসপাতালের ওয়ার্ডের সাথে বুধবারের ছবি মেলাতেও না পেরে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার ওই দুই রোগীর সাথে আলাপ করে জানা যায়, মন্ত্রীরা আসার আগে বুধবার সকালেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাউন প্রদান করেছিলো তাদের। মন্ত্রীরা যাওয়ার পর ওইদিন দুপুরেই গাউনগুলো ফিরিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ইউনুছ রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওসমানী হাসপাতালে রোগীদের গাউন প্রদান করা হয় না। বুধবার মন্ত্রীরা আসার কারণে রেল দুর্ঘটনায় আহত দুই রোগীকে দুটি গাউন দেওয়া হয়েছিলো।

এ বিষয়ে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

রোববারের রেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মোহাম্মদ শরীফ হোসেন ও সেলিম রেজা। হাসপাতালের ৩য় তলার পুরুষ অর্থোপেডিক্স বিভাগের ৯ নং ওয়ার্ডের পেয়িং বেড ৪ ও ১৬ নং বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তাঁরা। রেল মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন দেখতে আসবেন, তাই মঙ্গলবার রাতে ওয়ার্ড থেকে তাদের নিয়ে আসা হয় নিচতলার ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে। পরদিন বুধবার সকালে তাদের সবুজ রঙের দুটি গাউন পরতে দেওয়া হয়।

সকালেই সেখানে মন্ত্রীদ্বয় এসে আহতদের খোঁজ খবর নেন এবং আহতদের দশ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করার কথা জানান। তবে মন্ত্রীরা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাবার পর পরই আহত দুই রোগীর গাউন খুলে তাদেরকে আবার ৯ নং ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে তারা দুজনই পুরুষদের অর্থোপেডিক্স বিভাগে ভর্তি আছেন।
বৃহস্পতিবার ওসমানী হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের পেয়িং বেড ৪-এ শুয়ে আছেন সেলিম রেজা

বৃহস্পতিবার ওসমানী হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের পেয়িং বেড ৪-এ শুয়ে আছেন সেলিম রেজা

এ ব্যাপারে উপবন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় আহত ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেলিম রেজা (৪৫) বলেন, ওসমানী হাসপাতালে আসার পর আমাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ থেকে অর্থোপেডিক্স বিভাগে ভর্তি দেয়। মঙ্গলবার রাতে আমাকে নিচের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে জানতে পারি এখানে মন্ত্রীরা আসবেন আমাদের খোঁজ খবর নিতে। সে সময় আমাকে সবুজ রংয়ের একটি পোশাক দেয়া হয় পড়ার জন্য। মন্ত্রীরা বেড়িয়ে যাবার পরপরই সেই কাপড় খুলে নেয়া হয় এবং আধা ঘণ্টার মধ্যেই আমকে আবার অর্থোপেডিক্স বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়।"

সেলিম রেজা পেশায় স্কুল শিক্ষক। তাঁর বাড়ি রাজশাহী জেলায়। তিনি বর্তমানে মৌলভীবাজারের বড়লেখার চান্দগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরিরত আছেন।

ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে একই ওয়ার্ডে ১৬ নং বেডে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ শরীফ হোসেন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমাকেও মঙ্গলবার রাতে অর্থোপেডিক্স বিভাগ থেকে ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন মন্ত্রীরা আসার আগে নতুন কাপড় দেয়া হয় পড়ার জন্য এবং মন্ত্রীরা যাওয়ার পর তা আবার খুলে নিয়ে অর্থোপেডিক্স বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়।"

শরীফ হোসেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী।

প্রসঙ্গত, ২৩ জুন রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস বরমচালের বড়ছড়া সেতু এলাকা পার হওয়ার সময় বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনের ১৭টি বগির মধ্যে পাঁচটি বগি ছিটকে বড়ছড়ায় গিয়ে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে চারজন নিহত ও শতাধিক যাত্রী আহত হন।

আহতদের দেখতে বুধবার (২৭ জুন) সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত