বিশ্বনাথ প্রতিনিধি

২৮ জুন, ২০১৯ ০০:০৯

বিশ্বনাথে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা: সালিশের নামে সময়ক্ষেপন, মামলা করলো পুলিশ

১৭বছর বয়সী এক ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আব্দুল বারিক (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী যৌণ নিপিড়নের অভিযোগে মামলাও করেছে।

মঙ্গলবার (২৫জুন) রাতে থানা পুলিশের এসআই দেবাশীষ শর্ম্মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন, (মামলা নং ২০)।

গ্রেপ্তারের পর বুধবার (২৬জুন) বিকেলে বারিককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতেও পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিশ্বনাথ থানায় চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, প্রতারণার ৫টি মামলা রয়েছে। বারিক উপজেলার দীপবন্দ (বিলপার) গ্রামের মৃত মমশ্বর আলীর ছেলে।

ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনাটি স্থানীয় মাতব্বরা সলিশে শেষ করার নামে অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলো বলে অভিযোগ ওঠেছে।

তবে, বিষয়ে থানা পুলিশ, আশুগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ, নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মাতব্বরা একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। তাছাড়া তারা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্যও করেছেন।  

বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) শামসুদ্দোহা পিপিএম এ বিষয়ে সতত্যা জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করায় সালিশকারীরা মেয়েটিকেও লুকিয়ে রাখে। পরে মেয়েটিকে খোঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পান। জিজ্ঞিসাবাদে মেয়েটি জানায়, তার বাবা বেঁচে নেই, কোন ভাইও নেই। মানবিক কারণে তিনি সিলেটের নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন’র সঙ্গে কথা বলে ওই ছাত্রীর পাঁশে দাঁড়ান। তাছাড়া ঘটনার একদিন পর আশুগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন জিডি করতে থানায় গিয়েছিলেন বলেও জানান।

স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরীর এক ছাত্রী ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। আর টিসি আনতে গত সোমবার উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আশুগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যায়। বিদ্যালয় থেকে টিসি নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় পাশের গ্রাম বাবুনগরে গেলে বারিক তাকে টেনে ঝুপের পাশে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় তার চিৎকারে বাবুনগর ও পাঁচঘরী গ্রামের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে পাঁচঘরীর সবজি চাষী আব্দুর রুপের বাড়িতে নিয়ে যান এবং অধ্যক্ষকে খবর দেন।

ওইদিন অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন, ছাত্রীর চাচা শফিক মিয়া ও পাাঁচঘরির সিরাজ মিয়াসহ স্থানীয় মাতব্বররা পুলিশে খবর না দিয়ে রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত বারিকের ভাই আয়না মিয়ার সঙ্গে যোগড়াযোগ করেন। তারা পুলিশকে না জানিয়ে বিষয়টি সালিশে নিস্পত্তির চেষ্টা করেন।

মঙ্গলবার দুপুরে আশুগঞ্জ বাজারে স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিনের পিতা দোহাল গ্রামের হাজী ইর্শাদ আলীর সভাপতিত্বে সালিশ বৈঠকও করেন। কিন্তু এর আগেই পুলিশ অপরাধী বারিককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যান।

ছাত্রীর চাচা শফিক মিয়া এ প্রতেবদককে বলেন, ঘটনার পরপরই তিনি বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেনর নিকট গিয়েছেন। কিন্তু অধ্যক্ষ তাকে পুলিশে খবর দিতে বলেন নি। তাছাড়া তার মতের বাইরে অধ্যক্ষ ও আতিকুর রহমান মাষ্টার মিলে বিষয়টি সালিশে মিমাংশার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে পাঁচঘরী মাতব্বর সিরাজ মিয়া ও হলিচাইল্ড স্কুলের পরিচালক আতিকুর রহমান আতিক বলেন, অপরাধীকে বাঁচাতে নয়, শফিক মিয়া ও মেয়েটির পরিবারকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতেই তারা সালিশ করেছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, আয়োজকরা প্রশাসনের প্রতিনিধি রাখার কথা বলে তার পিতা হাজী ইর্শাদ আলীকে সভাপতি দিয়ে নিস্ফল বৈঠক করেছেন।

ঘটনার একদিন পর থানায় গিয়ে জিডি করতে চাইলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে নিজেকে মামলার স্বাক্ষী দাবি করে অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, মেয়েটি তার প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত না থাকায় তিনি মামলার বাদী হন নি। তাছাড়া তাকে না জানিয়ে মেয়েটির চাচা ও স্থানীয় মাতব্বররা মিলে সালিশ বৈঠক করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত