সিলেটটুডে ডেস্ক

৩০ জুন, ২০১৯ ০০:২৭

সিলেটে ৫৮৫ কিলোমিটার সড়কই ভাঙ্গাচোরা, সংস্কারে প্রয়োজন ৯০৮ কোটি টাকা

সিলেট বিভাগে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতাধীন সড়কের ৫৮৫ কিলোমিটারই ভাঙ্গাচোরা। মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা (এইচডিএম) বিভাগের বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সিলেট বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জ সড়ক বিভাগে ৯৪ দশমিক ৭ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগে ১২৮ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার, সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগে ১৩৬ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার ও সিলেট সড়ক বিভাগে ২২৫ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার সড়ক ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় রয়েছে। এই জোনের সড়কগুলো মেরামত করতে ব্যয় করতে হবে ৯০৮ কোটি টাকা।

সওজ অধিদপ্তরের ১০ জোনের জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কে জরিপ চালিয়ে বিশ্লেষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এইচডিএম। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কী পরিমাণ ভাঙাচোরা সড়ক আছে, সেটি নিরূপণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব সড়ক মেরামত ও পুনর্নির্মাণে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে। এইচডিএমের হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছর সওজের মালিকানাধীন ৮ হাজার ৬৬২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।

সারা দেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীন সড়কগুলোর ৮ হাজার ৬৬২ কিলোমিটারই ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। সড়কগুলোর খারাপ অংশের কোথাও পুনর্নির্মাণ, কোথাও সংস্কার, কোথাও পিচ ঠিক করা আবার কোথাও ‘ডাবল বিটুমিনাস সারফেস ট্রিটমেন্ট’ (ডিবিএইচ) করা জরুরি বলে উঠে এসেছে মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা (এইচডিএম) বিভাগের বিশ্লেষণে।

সারা দেশে সওজের অধীন সড়কের পরিমাণ ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক ৩ হাজার ৮১২ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ৪ হাজার ২৪৬ ও জেলা সড়ক ১৩ হাজার ২৪২ কিলোমিটার। অধিদপ্তরের ১০ জোনের জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা সড়কে জরিপ চালিয়ে বিশ্লেষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এইচডিএম। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কী পরিমাণ ভাঙাচোরা সড়ক আছে, সেটি নিরূপণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব সড়ক মেরামত ও পুনর্নির্মাণে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছে। এইচডিএমের হিসাবে, ২০১৯-২০ অর্থবছর সওজের মালিকানাধীন ৮ হাজার ৬৬২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।

আওতাধীন সড়কগুলোয় ভাঙাচোরা অংশের পরিমাণ, কোথায় কী ধরনের সংস্কারকাজ প্রয়োজন—তা নিরূপণ করে প্রতি বছরই জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে এইচডিএম। এর আলোকে সওজের ভাঙাচোরা সড়ক ও সেগুলো সংস্কারে কী পরিমাণ অর্থের দরকার হবে, তার একটা ধারণা বের করে সংস্থাটি। যদিও প্রতি বছর সড়ক-মহাসড়ক সংস্কারের জন্য চাহিদামাফিক বরাদ্দ পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

এইচডিএমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার, পুনর্বাসন, পুনর্নির্মাণ করতে হবে কুমিল্লা জোনে। এ জোনের অধীনে রয়েছে সওজের ছয়টি উপবিভাগ। এ ছয় উপবিভাগে সব মিলিয়ে ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক বিভাগে ১০৬ দশমিক ১৩ কিলোমিটার, চাঁদপুর উপসড়ক বিভাগে ১৩৭ দশমিক ৫১ কিলোমিটার, কুমিল্লা সড়ক বিভাগে ৪৮০ দশমিক ৪২ কিলোমিটার, ফেনী সড়ক বিভাগে ১৬৯ দশমিক ৩২ কিলোমিটার, লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগে ১২০ দশমিক ৫৬ কিলোমিটার ও নোয়াখালী সড়ক বিভাগে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে আরো ১৩৬ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক। এসব সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

কুমিল্লার মতো রাজশাহী সড়ক জোনের অধীনেও রয়েছে ছয়টি সড়ক উপবিভাগ। এর মধ্যে নওগাঁ সড়ক বিভাগে ২০৫ দশমিক ২৫ কিলোমিটার, নাটোর সড়ক বিভাগে ১৮৮ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক বিভাগে ৯৭ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার, পাবনা সড়ক বিভাগে ২৩৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার, রাজশাহী সড়ক বিভাগে ১৭১ দশমিক ২৫ কিলোমিটার ও সিরাজগঞ্জ সড়ক বিভাগে ২২৮ দশমিক ৪২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হবে আগামী অর্থবছর। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।

কুমিল্লা ও রাজশাহীর পর সবচেয়ে বেশি সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হবে সওজের চট্টগ্রাম জোনে। এ জোনের বান্দরবান সড়ক বিভাগে ২১৪ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগে ২৯৮ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার, কক্সবাজার সড়ক বিভাগে ১৪৪ দশমিক ৭১ কিলোমিটার, দোহাজারী সড়ক বিভাগে ১৭৭ দশমিক ৮১ কিলোমিটার, খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগে ২১৬ দশমিক ১৭ কিলোমিটার ও রাঙামাটি সড়ক বিভাগে আরো ৭৪ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এসব কাজে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।

১০টি সড়ক উপবিভাগ নিয়ে গঠিত সওজের রংপুর জোন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ জোনের বগুড়া সড়ক বিভাগে ২৩২ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার, দিনাজপুর সড়ক বিভাগে ১৫৬ দশমিক ১২ কিলোমিটার, গাইবান্ধা সড়ক বিভাগে ৩৪ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার, জয়পুরহাট সড়ক বিভাগে ৩৯ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার, কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগে ৮৩ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার, লালমনিরহাট সড়ক বিভাগে ৮৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার, নীলফামারী সড়ক বিভাগে ৬৯ দশমিক ২২ কিলোমিটার, পঞ্চগড় সড়ক বিভাগে ২৮ দশমিক ১৫ কিলোমিটার, রংপুর সড়ক বিভাগে ১০৪ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার ও ঠাকুরগাঁও সড়ক বিভাগে ৭৩ দশমিক ১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হবে। এসব কাজে ব্যয় হবে ৮৪৬ কোটি টাকা।

খুলনা সড়ক জোনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৯০২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে বাগেরহাট সড়ক বিভাগে ১১৩ দশমিক ৯৯ কিলোমিটার, চুয়াডাঙ্গা সড়ক বিভাগে ৩৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার, যশোর সড়ক বিভাগে ৮৯ দশমিক ৪১ কিলোমিটার, ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগে ১৮৯ দশমিক ৮৪ কিলোমিটার, খুলনা সড়ক বিভাগে ১১৯ দশমিক ২২ কিলোমিটার, কুষ্টিয়া সড়ক বিভাগে ১০৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার, মাগুরা সড়ক বিভাগে ৪৭ দশমিক ৬২ কিলোমিটার, মেহেরপুর সড়ক বিভাগে ৬৪ দশমিক ৮১ কিলোমিটার, নড়াইল সড়ক বিভাগে ২৫ দশমিক ৬৯ কিলোমিটার ও সাতক্ষীরা সড়ক বিভাগে ১০৬ দশমিক ২২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এসব সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ৬৪৩ কোটি টাকা।

৯৯৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে ময়মনসিংহ সড়ক জোনে। এর মধ্যে জামালপুর সড়ক বিভাগে ৯৩ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার, কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগে ১৩১ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার, ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগে ২৩০ দশমিক ১৭ কিলোমিটার, নেত্রকোনা সড়ক বিভাগে ১৬৬ দশমিক শূন্য ৯ কিলোমিটার, শেরপুর সড়ক বিভাগে ১১৯ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার ও টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগে কাজ করতে হবে আরো ২৫৪ দশমিক ১১ কিলোমিটার সড়কে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮০ কোটি টাকা।

একইভাবে ঢাকা সড়ক জোনের গাজীপুর সড়ক বিভাগে ১৩০ দশমিক ৯৬ কিলোমিটার, ঢাকা সড়ক বিভাগে ১৬১ দশমিক ৪১ কিলোমিটার, মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগে ৭৭ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার, মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগে ১১৫ দশমিক ৭২ কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগে ১২৩ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার ও নরসিংদী সড়ক বিভাগে সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন হবে ১৯২ দশমিক ৪১ কিলোমিটার সড়ক। ব্যয় হবে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা।

বরিশাল জোনে ২০১৯-২০ অর্থবছর সব মিলিয়ে ৫৭৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্যে বরগুনা সড়ক বিভাগে ৩৪ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার, বরিশাল সড়ক বিভাগে ১৫৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার, ভোলা সড়ক বিভাগে ১১৪ দশমিক শূন্য ৪ কিলোমিটার, ঝালকাঠি সড়ক বিভাগে ৭৫ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার, পটুয়াখালী সড়ক বিভাগে ৯৬ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার ও পিরোজপুর সড়ক বিভাগে পড়েছে ১০০ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার। সড়কগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৬০ কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছর সবচেয়ে কম সড়ক সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হবে গোপালগঞ্জ জোনে। জোনটিতে আগামী অর্থবছর ৪৮৮ কিলোমিটার সড়কে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে ফরিদপুর সড়ক বিভাগে ১৩৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার, গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগে ১৪০ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার, মাদারীপুর সড়ক বিভাগে ৮০ দশমিক ৭২ কিলোমিটার, রাজবাড়ী সড়ক বিভাগে ৪৮ দশমিক ৩৩ কিলোমিটার ও শরীয়তপুর সড়ক বিভাগে রয়েছে ৮৪ কিলোমিটার। সংস্কার ও নির্মাণকাজে খরচ হবে ৪৭২ কোটি টাকা।

এইচডিএমের প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সওজ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউর রহমান রাজন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়ক সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই প্রতি বছর এইচডিএমের প্রতিবেদনটি তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের কোথায় কোথায় ভাঙাচোরা সড়ক রয়েছে, তার একটা ধারণা পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে এইচডিএম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, এটা মূলত আমাদের ‘নিডস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’। আগামী এক বছর কী পরিমাণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে ও সেসব কাজ করতে কত টাকা দরকার, তা-ই বিস্তারিতভাবে এইচডিএমের এ অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টে তুলে ধরা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত