জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

৩০ আগস্ট, ২০১৯ ২১:৪৫

জৈন্তাপুরে নদী-পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবাদী অবস্থান ও গণজমায়েত

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমীন মুরশিদ বলেছেন, “বাউলীখাল নদীর উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সে নদীকে হত্যার আয়োজন করা হয়েছে। অবৈধ এ বাঁধের প্রভাবে নদী ভাঙ্গন তীব্র রূপ ধারণ করেছে, নদীগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ক্ষেত-খামার। নদী-নালা, খাল-বিল-হাওর-বাওর, বিলের প্রাণ, পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। বদলে যাচ্ছে ভূপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য। তাই অবিলম্বে এ অবৈধ বাঁধ অপসারণ করতে হবে।”

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিকাল ৩টায় নদী ও পরিবেশ বিষয়ক এক গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সারি নদী বাঁচাও আন্দোলন, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে জৈন্তাপুর উপজেলার ৪ নম্বর বাংলাবাজারে রাংপানি নদীর তীরে এ গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়।

সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল-হাদীর সঞ্চালনায় ও জৈন্তাপুর ইউ/পি চেয়ারম্যান মো. এখলাছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিল।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সোহেল আহমদ,আব্দুল কাদির,ইউপি সদস্য বিলাল আহমদ,আবুল হাসনাত, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, ৩ নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা লুৎফুর রহমান লেবু, চারিকাটা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলাম চৌধুরী তোফায়েল, অধ্যাপক মনোজ কুমার সেন, বাপা হবিগঞ্জের সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল, মো. খাইরুল ইসলাম, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সহসভাপতি মিনহাজ উদ্দিন প্রমুখ।

এছাড়াও কর্মসূচীতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

প্রধান অতিথি শারমীন মুরশিদ আরও বলেন, “একটি প্রাণবন্ত নদীর উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ কেবলমাত্র বেআইনি নয়, এটি একটি অপরাধও। জনগণের করের টাকা দিয়ে নদী হত্যা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না। বর্তমান সরকার নদীখেকো ও ধ্বংসকারীদের তালিকা তৈরি করছে। নদীখেকোদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। নদী দখল, দূষণ ও ভরাটের কাজে যারা লিপ্ত তারা যতোই শক্তিশালী হোক না কেনো, তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

তিনি স্থানীয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পরিবেশ ও প্রকৃতির দিকটির প্রতি যত্নবান হওয়ারও আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, “হিদাইরখাল কোন ছড়া নয়, নয় কোন মানবসৃষ্ট ছোট খাল। আবহমানকাল থেকে চলা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট প্রাণবন্ত প্রমত্তা এক নদী হচ্ছে হিদাইরখাল। এ বাঁধের কারণে প্রায় ৩৪ টি হাওর, ৩৫ টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ও প্রায় ১০ টির মতো ছোট-বড় নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বাঁধের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত দু’টি প্রকল্পও হুমকির মুখে পড়েছে। এটি প্রকৃতির উপর এক মারাত্মক নিপীড়ন ছাড়া আর কিছু নয়।”

স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের ব্যক্তি স্বার্থে নির্মিত এ বাঁধ অনতিবিলম্বে অপসারণ করে  সেখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

গণজমায়েত কর্মসূচীতে বক্তারা আরও বলেন, “উত্তর-পূর্ব সিলেটের পানির মূল প্রবাহ হচ্ছে সারি-ডাউকী-পিয়াইন নদী। মেঘালয়ের পাহাড়ি পানি এসব নদী দিয়েই প্রবাহিত হয়। সাধারণত পাহাড়ি ঢল নেমে আসলে ঘণ্টা দুই-এক কিংবা দুই-একদিন অবস্থান করে সে পানি নেমে যেত। কিন্তু হিদাইরখাল বাঁধ তৈরির ফলে এখন সারি ও তার শাখা-প্রশাখার পানির উচ্চতা অনেক বৃদ্ধি পায় এবং নিষ্কাসনের পথ বন্ধ হওয়াতে সেই পানির স্থায়িত্বকাল অনেক বেড়ে গেছে। সহজে নামতে না পারার কারণে তা নদীর পারের মাটিকে নরম করছে এবং চাপ বৃদ্ধি করছে যার কারণে তা জনপদকে বিলীন করতে শুরু করছে। ৩৫ বছর পুরনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত জাফলং-সানকীভাঙ্গা বেড়িবাঁধ-কাম-রাস্তা বিভিন্ন স্থানে পানি ফুলে ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে বড় বড় গর্ত, খানাখন্দ অবস্থা সৃষ্টি হওয়াতে জনসাধারণ, যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাওরের মানুষজন উদ্বাস্তু হওয়ার উপক্রম হয়েছে।”

বক্তারা একইসাথে সারি নদী, বড়গাঙ্গসহ সকল নদ-নদীর দখল,দূষণ, ভরাট ও নব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত