বাহুবল প্রতিনিধি

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১৮:৩২

বাহুবলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব, ইজারা বাতিলের দাবি

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের অভ্যন্তরে রয়েছে ‘কামাইছড়া’ নামে একটি বালু মহাল। এ মহালটিকে ঘিরে আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকার ফসলী, পতিত ও কৃষি জমিতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর গর্ত কুড়ে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। যার ফলে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম ও আশপাশের পাড়াগুলো প্রায় সকল রাস্তাঘাট ধসে ছড়া, খাল ও জমির সাথে একাকার হয়ে গেছে। এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ফোঁসে উঠেছেন স্থানীয় জনতা ।  

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে তিন শতাধিক লোক স্বাক্ষরিত দু’টি আবেদন দেওয়া হয়। একটি আবেদনে উপজেলার কামাইছড়া বালু মহালের ইজারা বাতিল ও অপর আবেদনে অবাধে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে বায়ু ও শব্দ দূষণ এবং রাস্তাঘাট ধ্বংসের প্রতিকার চাওয়া হয়েছে।

জানা যায়, বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত সুন্দ্রাটিকি গ্রাম। গ্রামটির আশপাশে কামারগাঁও, তালুকগাঁও, সাতানিগাঁও, মাঝেরহাটি ও কুমারহাটি নামে কয়েকটি পাড়া রয়েছে। রশিদপুর ও রামপুর চা বাগানের পাদদেশে অবস্থিত গ্রামগুলোতে কয়েক সহস্র লোক বসবাস করে। সুন্দ্রাটিকি গ্রাম ও আশপাশের পাড়াগুলোর অভ্যন্তরে রয়েছে ‘কামাইছড়া’ নামে একটি বালু মহাল। এ মহাল থেকে ড্রেজার মেশিনদ্বারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ট্রাক্টর দ্বারা বালু বহন করা হয়।  যার ফলে আশপাশের কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকার ফসলী, পতিত ও কৃষি জমিতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে গভীর গর্তকুড়ে বালু উত্তোলন করছে একটি অসাধু ও প্রভাবশালী চক্র ।

এসব বালু উত্তোলনের ফলে এলাকায় অকাল বন্যা ও নদী, জমিজমা এবং বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়ছে। বদলে যাচ্ছে জমির শ্রেণি। এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে এলাকার লোকজনের। এছাড়াও উক্ত বালু বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে যন্ত্রদানব খ্যাত ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টর ওই গ্রাম ও পাড়াগুলোর শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে চলে দিবানিশি। ট্রাক্টরের বিশাল আকৃতির চাকায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট।



সরজমিনে দেখা যায়, সুন্দ্রাটিকি গ্রাম ও আশপাশের পাড়াগুলো প্রায় সকল রাস্তাঘাট ধসে ছড়া, খাল ও জমির সাথে একাকার হয়ে গেছে। চলাচলের সুবিধার্থে লোকজন সকালে ইট-বালি ফেলে কিংবা বাশের খুঁটি গেঁথে গাইড ওয়াল দিয়ে ভাঙা রাস্তা চলাচলের সামান্য উপযোগী করছেন, তো বিকেলেই বেপরোয়া ট্রাক্টর আবার ভেঙে একাকার করে দিচ্ছে। এতে গ্রাম ও পাড়াগুলো বাসিন্দাদের চলাচলে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। এছাড়াও রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালানোর ফলে ধুলোবালি উড়ে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। এতে গ্রামবাসীর মাঝে বাড়ছে রোগ-বালাই।

এ নিয়ে প্রতিদিন কথা কাটাকাটি, ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে। বাঁধা, নিষেদ, আপত্তি দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ভাবে। কিন্তু বালু উত্তোলনকারী চক্রটিকে কোন ভাবেই দমানো যাচ্ছে।

সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া তানিয়া আক্তার বলেন, বালুবাহী ট্রাক্টর আমাদের গ্রামের রাস্তাঘাট নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে আমরা ভাল কাপড় ও জুতো পড়ে স্কুলে যেতে পারি না। এছাড়া ট্রাক্টর ও ড্রেজার মেশিনের শব্দে বাড়িতে পড়াশুনায় মনোযোগের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এমনকি রাতে ঘুমাতে পর্যন্ত পারি না।

একই গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রুবেল মিয়া বলেন, রাস্তা দিয়ে একটার পর একটা ট্রাক্টর চলাচলের ফলে ধুলোবালি উড়ে। এতে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও ভয় হয়, কখন যে ট্রাক্টরের আমাদের মেরে চলে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুমারহাটির জনৈক ব্যক্তি বলেন, সুন্দ্রাটিকি গ্রাম ও আমাদের পাড়াটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় এর ভূ-প্রকৃতি ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। উঁচু, নিচু ও সমতল ভূমিতে এ জনপদটিতে জনবসতির পাশাপাশি ছিল প্রচুর ফসলী জমি। বালুখেকোদের থাবায় এ জনপদ এখন বসবাস উপযোগিতা ও চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এসব বন্ধ করতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।

বালু উত্তোলনকারীদের বিরামহীন যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ এলাকার লোকজন প্রতিবাদে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন। তারা প্রাথমিক ভাবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন করে প্রতিকার চেয়েছেন। প্রয়োজনে তারা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা হক জানান, কামাইছড়া বালু মহালটি বন্ধের দাবিতে এর আগেও একটি আবেদন করেছিল এলাকাবাসী। আমি ইতিমধ্যে মহালটির ইজারা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বরাবরে সুপারিশ করেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত