হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:৫৬

খাতাকলমেই ৫০ শয্যা, লোকবল নেই ৩১ শয্যারও

শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

২০১২ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছিলো শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে শয্যাসংখ্যা বাড়ালেও বাড়েনি লোকবল। ৩১ শয্যার অনুপাতে প্রয়োজনীয় লোকবলও নেই এখানে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষ লোকের চিকিৎসার প্রাণকেন্দ্র। ২০১২ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করে এ হাসপাতালের নতুন ভবন ও কার্যক্রম উদ্বোধন করেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ৫০ শয্যা হাসপাতালের অনুপাতে পদ সৃষ্টি ও পদায়নের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হলেও অদ্যাবধি নেওয়া হয়নি কোন কার্যকর ব্যবস্থা।

হাসপাতালে কর্মরত পরিসংখ্যানবিদ এ.টি.এম. আনোয়ার গাজী জানান, বারবার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বাস্তবে চিকিৎসা সেবা ৩১ শয্যার সেই আগের তিমিরেই রয়ে গেছে আর ৫০ শয্যা রয়েছে খাতা-কলমে। ৫০ শয্যা অনুপাতে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। রয়েছে ৩১ শয্যা হাসপাতালের সুবিধারও কম জনবল। জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত না থাকায় চিকিৎসা সেবাদানকারী চিকিৎসকসহ অন্যান্যদের হাসপাতালে আসা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করতে গলধঘর্ম হতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ রোগীকে এখানকার বহিঃবিভাগে চিকিৎসাসেবা নেন। আর আন্তঃবিভাগে প্রতিদিনই ৮৫% শয্যায় রোগী ভর্তি থাকেন। তবে অপ্রতুল চিকিৎসকের কারণে এই বিপুল সখ্যক রোগীকে সেবা প্রদানে বিপাকে পড়তে হয় কর্মরতদের।  

জানা যায়, এ হাসপাতালে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ’র মতো দুটি গুরুত্বপুর্ণ পদই শূন্য। আন্তঃবিভাগ ও জরুরী বিভাগে নেই কোন মেডিক্যাল অফিসার। জরুরী ক্ষেত্রে ‘অন কলে’ মেডিক্যাল অফিসার ডেকে রোগীর সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্তমানে ৯ জন ডাক্তার রয়েছেন পদায়নকৃত, কিন্তু কনসালটেন্ট (গাইনী) প্রেষণে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন। চক্ষু বিভাগে রয়েছেন একজন টেকনিশিয়ান। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন ঢাকায় প্রেষণে, শুধুমাত্র সপ্তাহে একদিন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেন। জরুরী বিভাগে নেই একজনও মেডিক্যাল অফিসার। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) দিয়ে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা সেবা চালানো হচ্ছে জরুরী বিভাগে।

শূন্য রয়েছে একজন ফার্মাসিস্টের পদ আর দিনের শুরু থেকে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত প্যাথলজি বিভাগ চলছে একজন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট দিয়ে চলছে। ডেন্টাল বিভাগে পদায়নকৃত একজন চিকিৎসক ও মেডিক্যাল এসিষ্ট্যান্ট (ল্যাব) প্রেষণে ঢাকা রয়েছেন। ফলে পদ শূন্য না থাকায় নতুন লোকও পদায়ন করা যাচ্ছে না।

এছাড়া রয়েছে নার্স সংকট। নার্সের দুটি পদ রয়েছে শূন্য আর তিনজন উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রেষণে রয়েছেন। প্রশাসন বিভাগে প্রধান সহকারীর পদ খালি পড়ে আছে বহুদিন ধরে। এমএলএসএস আর জুনিয়র মেকানিক্স দিয়ে চলছে টিকেট ক্লার্কের কাজ। দু’জন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও রয়েছে আয়া, ঝাড়ুদার, পিয়ন সংকট।

এদিকে, জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা। হাসপাতালের এক্সরে মেশিন নষ্ট থাকায় রেডিওলজী এন্ড ইমেজিং বিভাগে নেই কোন কার্যক্রম। টেকনোলজিস্ট ও সনোলজিস্টের (চিকিৎসক) অভাবে অত্যাধুনিক আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়৷ স্বাভাবিক প্রসূতি সেবা ও সিজারিয়ান অপারেশন ব্যতীত এ হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাবে হয় না ছোটখাটো অপারেশনও।

এতো জনবল সংকটের পরও রয়েছে চিকিৎসকের আবাসন সংকট। ৬১ উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দৈনন্দিন কাজ ও তদারকির নিমিত্তে গাড়ি অদ্যাবদি বরাদ্দ পায়নি এ হাসপাতালটি। অনলাইনে কাজের সুবিধার্থে ২০১২ সালে দেওয়া কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারদের নোটবুকগুলো নষ্ট অথচ নতুন করে দেওয়া হয়নি এখনো কোন বরাদ্দ।

এসব ব্যাপারে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (এমসিএইচ -এফপি) ডা. রঞ্জন চন্দ্র দাশ বলেন, সীমাবদ্ধতা থাকার পরও আমরা যথাসম্ভব সকল ধরনের সেবাগ্রহীতাদের সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। বিশেষ করে স্বাভাবিক প্রসব নিশ্চিতকরণ, প্রসুতি মা ও অনুর্ধ পাঁচ বছর বয়সী শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং জন্মনিরোধক পদ্ধতি গ্রহণে উৎসাহিত করতে আমরা আশাতীত সাফল্য পেয়েছি।

শ্রীমঙ্গল ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচএফপিও মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘সিলেট বিভাগের মধ্যে একটি ব্যস্ততম হাসপাতাল এটি। চা শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এ উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় গড়ে ৩০০ রোগী আসেন। কিন্তু জনবল সংকট প্রকট। বর্তমানে ৩১ শয্যার জনবলই পুরো নেই, কিন্তু ৫০ শয্যা চালাতে হচ্ছে। পুর্ণ জনবল মঞ্জুরী হলে পুর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে আরো ভালো সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এ মুহুর্তে আমরা ডেঙ্গু সচেতনতা ও প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত