ওসমানীনগর প্রতিনিধি

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ২২:২৬

ওসমানীনগরে স্কুলছাত্রীকে ‘শ্লীলতাহানি’, পিয়ন আটক

সিলেটের ওসমানীনগরে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যান্টিন বয় কাম পিনের বিরুদ্ধে। শ্লীলতাহানির শিকার ওই শিক্ষার্থী উপজেলার সাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ঐ ছাত্রী সাদীপুর গ্রামে তার খালার বাড়িতে থেকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে আসছিলো।

ঘটনাটি গত ৩১ আগস্ট দুপুর ১টার দিকে ঘটলেও অভিযোগ উঠেছে সাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাদীপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তিরা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সমঝোতার চেষ্টা করেন। এছাড়া ঘটনাটি থানা পুলিশকে না জানাতে ভিকটিমের পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এদিকে প্রভাবশালীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে অভিযুক্ত গফুরকে বাঁচাতে চাইলেও শেষ রক্ষা পাইনি অভিযুক্ত গফুর।

জানা যায় ভিকটিমের পরিবার এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ ঘটনায় মামলা করতে আগ্রহী না হওয়ায় ওসমানীনগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে নারী ও মিশু নির্যাতন দমন আইলে(মামলা নং-৮) দায়ের করা হয়েছে বলে ওসি এসএম আল মামুন নিশ্চিত করেছেন। তবে ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা মান সম্মানের ভয়ে মামলা করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। মামলার পর বুধবার রাতেই সাদিপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পিয়ন উপজেলার ধরখা গ্রামের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে আব্দুল গফুরকে (৫০) আটক করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাদীপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থান পাশাপাশি। ৩১ আগস্ট টিফিনের ছুটিকালীন সময়ে ওই ছাত্রী সহপাঠীদের সাথে নাস্তা খাওয়ার জন্য সাদিপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে যায়। এসময় ওই বিদ্যালয়ের ক্যান্টিন বয় পিয়ন আব্দুল গফুর খারাপ উদ্দেশ্যে ভিকটিম ছাত্রীকে হাত ধরে টেনে ক্যান্টিনের ভেতরে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

পরে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গত মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে দুপক্ষ নিয়ে দুই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিশয়টি ধামাচাপা দিতে সালিশ মীমাংসায় বসেন। শালিসকারীরা শ্লীলতাহানির শিকার ছাত্রীকে দিয়ে গফুরকে বেতরাঘাত ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে জুতা পেটা করান। এ সময় অভিযুক্ত গফুর উপর ৫ হাজার টাকা জরিমানা সহ উপস্থিত সকলের সামনে ক্ষমা প্রার্থনা করানো হয় গফুরকে দিয়ে।

এদিকে এরকম বিচার সালিশ মেনে না নিয়ে তাৎক্ষনিক সাদিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করে শ্লোগান দিতে শুর করলে অভিযুক্ত গফুর সহ শালিসকারীরা বৈঠক থেকে চলে যান। বিষয়টি থানা পুলিশ ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সবশেষ গতকাল বুধবার গফুরকে আটক করে এবং রাতেই ওসমানীনগর থানার এসআই সাইফুল মোল্লা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে গফুরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।

এ ব্যাপারে সাদিপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার ভৌমিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্ত পিয়ন গফুরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আমার শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একটি সভার মাধ্যমে রেজুলেশন করেছি।

ঘটনাটি থানা পুলিশ ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে না জানিয়ে কেন বিচার সালিসে বসা হল সে বিষয়ে প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার ভৌমিকের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি পাশাপাশি কমিটির লোকজন বিষয়টি না জানাতে আমাকে বারণ করেছেন।

ওসমানীনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দীপালি সরকার বলেন, ওসি ও ইউএনও স্যারের মাধ্যমে বুধবার ঘটনাটি আমি জেনেছি। এর আগে প্রধান শিক্ষক বা স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে ঘটনাটি অবগত না করায় আমি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি।

ওসমানীনগর উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, পিয়ন কর্তৃক ছাত্রী শ্লীলতাহানির খবর শুনেই আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসমানীনগর থানার ওসিকে জানিয়েছি। অভিযুক্ত পিয়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকেও নির্দেশ দিয়েছি। এ ব্যাপারে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আল মামুন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এটি খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত জায়গায় বাচ্চারা যদি যৌন হয়রানির শিকার হয় তাহলে তারা আর কোথায় নিরাপদ থাকবে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের কারণে ভিকটিমের পরিবার ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক মামলা করতে আগ্রহী হয়নি। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে এবং অভিযুক্ত গফুরকে আটক করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত