নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:২৫

বিয়ানীবাজারে প্রসূতির অস্ত্রোপচারে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ

সিলেটের বিয়ানীবাজারে ফারজানা জাহান (২৮) নামে এক গৃহবধূর প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারে চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে রোগী সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চিকিৎসকরা।

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফারজানা জাহানের স্বামী ৭১ টিভির ফ্রান্স প্রতিনিধি সাংবাদিক নুরুল ওয়াহিদ তার স্ত্রীর প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারে চিকিৎসকের অবহেলার কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি লাইভ দেন।

এতে নুরুল ওয়াহিদ অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রী অস্ত্রোপচারে ভুল চিকিৎসা করেছেন ডা. অসীম কুমার সাহা। তিনি অস্ত্রোপচারের পর ময়লা পরিষ্কার না করে আবর্জনা রেখে সেলাই করে দেন। এরপর রোগী সেলাইয়ে ব্যথা অনুভব করেন। পরে ৩০ আগস্ট সেলাই কাটার কথা বলা হয়। ওই দিন রোগী সকাল ১০টায় বিয়ানীবাজারে ডা. অসীম কুমার সাহার চেম্বারে গেলে বেলা ২ টা পর্যন্ত তাকে বসিয়ে রাখা হয়। পরে চিকিৎসকের সহকারী বিকালে ফি দিয়ে টিকেট নিয়ে আবার দেখা করতে বলেন। বিকালে চেম্বারে গেলে চিকিৎসক রোগীকে ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর ক্লিনিকে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রোগীর অবস্থা ভালো না বলে জানান। তাই রোগীকে সিলেটে নিয়ে এসে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।   

তবে এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন ফারজানা জাহানের প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার করা চিকিৎসক নরসিংদী সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. অসীম কুমার সাহা। একই ধরনের মন্তব্য করেন পরবর্তীতে চিকিৎসা নেওয়া সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. শাহিনা ফেরদৌসি চৌধুরী।

জানা যায়, সিলেটের বিয়ানীবাজারে আলফা পল্লী ক্লিনিকে গত ২২ আগস্ট অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন ফারজানা জাহান। ওই সময় তার অস্ত্রোপচার করেন ডা. অসীম কুমার সাহা। পরবর্তীতে তিনি সেলাইয়ে ব্যথা অনুভব করলে  ৩০ আগস্ট বিয়ানিবাজারস্থ ডা. অসীম কুমার সাহার চেম্বারে যান। সেখান থেকে তিনি রোগীকে আবার আলফা পল্লী ক্লিনিকে পাঠান ড্রেসং করানোর জন্য। ওইদিন রাতেই রোগীর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে তাকে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ফারজানা।

এ ব্যাপারে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. শাহিনা ফেরদৌসি চৌধুরী বলেন, প্রসব পরবর্তী ৪০দিন পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হওয়া স্বাভাবিক। অনেকের আরো বেশিদিন এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। ফারজানা জাহান মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ নিয়ে আমদের হাসপাতালে ভর্তি হন। তাই আমরা তাকে ডিএনসি করাই। যেহেতু রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাই আমি নিজেই ডিএনসি করি। ডিএনসির মাধ্যমে তার জরায়ুর রক্ত পরিষ্কার করে দেওয়া হয়। তবে তার সেলাইয়ে তেমন কোনো ইনফেকশন ছিল না। তারপরও আমরা ডেসিং করে দেই।

ফারজানা জাহানের স্বামীর অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি নিজে অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। তার সেলাইয়ে কোনো ময়লা ছিল না। একটু সেলাই খোলা ছিল। এটা স্বাভাবিক বিষয়। ডেলিভারির পর পেটে কোনো ময়লা থাকে না। তাছাড়া আমি ওইদিন যা যা করেছি সব সব ফাইলে লিখা আছে। তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে তাকে রক্ত দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রোগী অনেক ভালো আছেন।

তিনি বলেন, আমরা রোগীদের সঠিক সেবা দিতে সর্ব্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিন্তু এখন রোগীদের সেবা দিতেও ভয় করে। কারণ মানুষজন না বুঝে গুজব ছড়ান। নরমাল বা সিজার যেকোনো প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ অনেক স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা নিয়েও এখন ডাক্তারদের দোষারোপ করা হয়।
 
এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. অসীম কুমার সাহা বলেন, অপারেশনের পর রোগীর সমস্যা ছিল ব্যথা। এজন্য তাকে ব্যথার ওষুধ দেওয়া হয়। রোগীর যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি অবগত ছিলাম না। কারণ তারা যেদিন চেম্বারে আসেন সেদিন সেলাই ড্রেসিংয়ের জন্য আসেন। ওই সময় আমাকে রক্তক্ষরণের কথা বলা হয়নি। যেহেতু চেম্বারে ড্রেসিং করা যাবে না তাই আমি তাদেরকে ক্লিনিকে যেতে বলি। এরপর ক্লিনিক থেকে আমাকে বলা হয় তারা এখানে আর চিকিৎসা নিতে চাচ্ছেন না। রোগীর স্বজনরা রোগীকে সিলেট নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাচ্ছেন। তাই রোগী স্বজনদের চাহিদার প্রেক্ষিতে হাসপাতাল থেকে তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ২ সেপ্টেম্বর রোগীর স্বামী প্রবাস থেকে আমাকে কল করেন। তিনি বলেন, আমি তার স্ত্রীর পেটে ময়লা রেখে সেলাই করে দিয়েছি। তার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন। ৭ ব্যাগ রক্ত লেগেছে। রোগী আইসিইউতে ছিল। আমি তার কথা শুনে আশ্চর্য হলাম। সাথে সাথে অনেক মর্মাহত হলাম। কারণ আমার একজন রোগী আইসিইউতে আর আমি জানি না। তাই আমি খবর নিয়ে জানতে পারি সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহিনা ফেরদৌসি ম্যাডাম তার চিকিৎসা করছেন। আমি ম্যাডামকে কল দিয়ে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই আমার রোগীর চিকিৎসা করার জন্য। পরে জিজ্ঞাস করি কি সমস্যা হয়েছে। তিনি বলেন, রক্তক্ষরণ হচ্ছিল তাই জরায়ু পরিষ্কার করে দিয়েছি। আর সেলাই ড্রেসিং করা হয়।

ডা. অসীম কুমার সাহা বলেন, প্রসব পরবর্তী ৪০দিন রক্তক্ষরণ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ইনফেকশন সাধারণত ২ ধরনের হয়। জরায়ুর ভিতরে এবং বাইরে। এই রোগ ক্ষেত্রে এগ্রেসিভ ইনফেকশন হয়েছে। যার ফলে উনার জরায়ু দিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। এরকম সমস্যা ১০০ জনের মধ্যে ১ জনের হয়। এই রক্তক্ষরণের জন্য কোনো ডাক্তারকেই দায়ী করা যায় না। এই রোগীর এই সমস্যা যদি আমাকে বলা হতো তাহলেও আমি তার চিকিৎসা করতে পারতাম। আমি চিকিৎসা করলে এই গ্যাপ তৈরি হতো না।

তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার মানুষ না। আমি ইতোমধ্যে আমার এক কলিগকে পাঠিয়ে এই রোগীর খবর নিয়েছি। ওই হাসপাতালে তিনি যার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনিও বলেছেন বর্তমানে রোগী অনেক ভালো আছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত