কুলাউড়া প্রতিনিধি

১০ অক্টোবর, ২০১৯ ১৬:৩৪

ইউপি ডিজিটাল কেন্দ্রের উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রের পুরুষ উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিক সম্ভুর বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি, সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, ও নারী কর্মীকে অনৈতিক প্রস্তাব প্রদানের অভিযোগ ওঠেছে।

এসব অভিযোগে কাদিপুর ইউপি পরিষদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ইউপি সদস্যরা জরুরী সভায় রেজুলেশনের মাধ্যমে সুকুমার মল্লিককে অব্যাহতি প্রদান করেন। বিষয়টি চাউর হলে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বুধবার ৯ অক্টোবর বেলা দুটার দিকে কাদিপুর ইউপি কার্যালয়ে সুকুমারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রে প্রায় ১২ বছর আগে পুরুষ উদ্যোক্তা হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান সুকুমার মল্লিক সম্ভু। নিয়ম অনুযায়ী ইউপি সচিবের নিকট জন্মনিবন্ধনের অনলাইন সার্ভারের আইডি ও পাসওয়ার্ড সংরক্ষিত থাকার কথা। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্র সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সুবিধার্থে পুরুষ উদ্যোক্তা সুকুমারের কাছে জন্মনিবন্ধন সার্ভারের আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়। সেই সুযোগে সুকুমার উৎকোচের বিনিময়ে জন্ম নিবন্ধন প্রদান, সংশোধন ও জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়াও নিবন্ধিত স্থানীয় বাসিন্দাদের নাম ও জন্মতারিখ ঠিক রেখে জন্মনিবন্ধন সার্ভারের অনলাইন নিবন্ধনে ওই সকল বাসিন্দাদের ঠিকানা অন্যত্র পরিবর্তন করতেন। পরে সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়ের মাধ্যমে সেগুলো আবার সংশোধন করে দিতেন। এমনকি ডিজিটাল কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সার্ভার ও ইন্টারনেট কানেকশনে সমস্যা দেখিয়ে পৌরশহরের উত্তরবাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে এসে টাকার বিনিময়ে অনলাইনে পাসপের্টের আবেদনসহ বিভিন্ন আবেদন করে দিতেন।

২০১৭ সালে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দার অনলাইন জন্মনিবন্ধনে ঠিকানা অন্যত্র হওয়ার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করলে তাৎক্ষণিক বিষয়টি সংশোধন করা হয়।

সম্প্রতি সুকুমার মল্লিক তাঁর সহকর্মী ডিজিটাল কেন্দ্রের নারী উদ্যোক্তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং বছর দেড়েক ধরে এ বিষয়টি নিয়ে চাপ দিতে থাকেন ও হয়রানী করছেন এমন অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি ওই নারী উদ্যোক্তা পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ পরিষদের সকল সদস্যদের অবহিত করেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর কাদিপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়াসহ পরিষদের সকল সদস্য নানা অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সকল সদস্যদের সিদ্ধান্তক্রমে ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রের পুরুষ উদ্যোক্তা সুকুমার মল্লিকের এমন অনিয়ম ও অপকর্মের কারণে তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং রেজুলেশনের অনুলিপি কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হয়।

হয়রানীর শিকার ইউপি ডিজিটাল কেন্দ্রের ওই নারী উদ্যোক্তা মোবাইলে বলেন, আমার সিনিয়র সহকর্মী ও বিবাহিত হয়েও আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আমি তাঁকে একাধিকবার না করা সত্ত্বেও তিনি আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন এবং হয়রানি করেন। উপায়ন্তর না দেখে বিষয়টি সম্প্রতি আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সকলকে বিষয়টি জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কাদিপুর ইউপির সচিব উত্তম কুমার পাল বলেন, সেবা গ্রহীতাদের সুবিধার্থে তাঁর কাছে আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হয়েছিলো। ২০১৭ সালে ইউনিয়নের নাগরিকদের ঠিকানা পাল্টে ফেলার বিষয়টি নজরে আসার পর আমরা আবার ঠিকানা সংশোধন করি।

এত মানুষের ঠিকানা পাল্টে ফেলার বিষয়টি নজরে আসার পরেও উদ্যোক্তা কিভাবে দুবছর ধরে জন্মনিবন্ধন সার্ভারে আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে কাজ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব কোন সুদুত্তর না দিয়ে বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিলাম।

সুকুমার মল্লিক সম্ভু বলেন, এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ইউনিয়নের নাগরিকদের ঠিকানা পাল্টে ফেলার বিষয়ে জানতে চাইলে এব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন আমি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি সবাইকে স্পষ্ট করবো।

সংবাদ সম্মেলনে কাদিপুর ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাতির মিয়া বলেন, কিছুদিন আগে সুকুমার আমার কাছে চারটি জন্মনিবন্ধন সনদে স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসেন। এর মধ্যে দুটি জন্মনিবন্ধনে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বয়স সংশোধনের বিষয়টি আমার কাছে ধরা পড়ে। এসময় তিনি আমাকে টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেন। তাই আমি ওই দুটি জন্মনিবন্ধনে কোন স্বাক্ষর দেইনি। এর আগেও সবার অগোচরে সুকুমার স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েকটি জন্মসনদ প্রদান করেন এবং সেগুলোও ধরা পড়ে। তখন তাঁকে এসব কাজ না করার জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানী ও বিভিন্ন কাজে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি।

এছাড়াও সুকুমারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল কেন্দ্রের নারী উদ্যোক্তাকে হয়রানী ও অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ জানতে পারি।

এসব বিষয়ে সম্প্রতি পরিষদের সকল সদস্যদের নিয়ে এক জরুরী সভায় সবার সিদ্ধান্তক্রমে তাঁকে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় ও বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও অবগত করা হয়।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, সুকুমারকে কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তপত্র পেয়েছি। তাঁর বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ খতিয়ে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত