সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ১৯:০৯

‘ভারতে রপ্তানি বৃদ্ধিতে আইন-কানুন শিথিল করা প্রয়োজন’

গোহাটিতে স্টেকহোর্ল্ডাস মিট শেষে সিলেট চেম্বারের সংবাদ সম্মেলন

আসামের গোহাটিতে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্টেকহোর্ল্ডাস মিট’ শীর্ষক সম্মেলনে যোগদান শেষে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৩ টায় জেলরোডস্থ চেম্বার কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।

সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের চমৎকার বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সিলেট চেম্বার কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহ বাংলাদেশী পণ্যের এক বিশাল বাজার। বাণিজ্য বৃদ্ধির এ অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল ‘ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্টেকহোর্ল্ডাস মিট’ এ যোগদান করে। এই সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবনাগুলো দুইদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিনিধিদলের দলনেতা ও সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন সাহা বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, আমদানি-রপ্তানি ও যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং দুই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আসামের গোহাটিতে গত ২২-২৩ অক্টোবর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র পক্ষ থেকে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট এক প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।

লিখিত বক্তব্যে সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি আরও জানান, আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল বলেছেন, বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুই দেশের স্বার্থকে অটুট রেখে ব্যবসা-বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। আসাম সরকার বাংলাদেশের সাথে বিশেষ করে সিলেটের সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে শিল্প ও পর্যটন খাতের বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সময় যেসব চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার। এই বন্দর ব্যবহারের ফলে ভারতীয় হলদিয়া বন্দরের প্রায় ৮০ শতাংশ রাজস্ব চলে যাবে বাংলাদেশে। এতে ভারতেরও অনেক লাভ হবে। তিনি হলদিয়া বন্দর থেকে পণ্য আনতে আসামের প্রায় ১২০০ কি.মি. পথ পাড়ি দিতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করলে তা ৬০০ কি.মি.তে নেমে আসবে। যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে।

সিলেট চেম্বারের সহ-সভাপতি তার লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপির বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে নানা জটিলতায় বাংলাদেশ থেকে মাত্র ১.৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হচ্ছে। এ ঘাটতি নিরসন করে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে সমতা আনতে দুই দেশকেই আন্তরিক হতে হবে। ভারতের আরোপিত ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাঁধা, খাদ্য পণ্যের টেস্টিং প্রক্রিয়া, ন্যুনতম রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ সহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী পণ্য ভারতে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। যদিও ভারত ‘সাপটা চুক্তি’র আওতায় বাংলাদেশকে অনেকগুলো পণ্যে ডিউটি ফ্রি সুবিধা প্রদান করছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য এসব আইন, নিয়ম-কানুন শিথিল করা একান্ত প্রয়োজন। এতে উভয় দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে।

সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন সাহা আরও জানান, আমরা সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে উক্ত সম্মেলনে অনেকগুলো প্রস্তাবনা পেশ করেছি। যার মধ্যে সিলেটের আগর-আতর ও চা প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগ, আসামের সাথে নৌ যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নদীপথে লাইটার জাহাজ চালনা, গোহাটি-শিলচর-করিমগঞ্জ-শেওলা বাস সার্ভিস চালু, রপ্তানিযোগ্য মসলা জাতীয় পণ্যের গুণগত মান রক্ষার্থে বর্ডার সংলগ্ন ল্যাবরেটরি স্থাপন ইত্যাদি অন্যতম। তিনি জানান, আসামের বিনিয়োগকারীগণ সিলেটের শিক্ষা ও শিল্প খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিলেট চেম্বার নেতৃবৃন্দ।

এসময় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি তাহমিন আহমদ, পরিচালক মো. মামুন কিবরিয়া সুমন, মো. এমদাদ হোসেন, পিন্টু চক্রবর্তী, আব্দুর রহমান, মো. আব্দুর রহমান (জামিল), হুমায়ুন আহমদ, মো. নজরুল ইসলাম, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব, আমিনুজ্জামান জোয়াহির, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী, ফখর উস সালেহীন নাহিয়ান এবং বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধিবৃন্দ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত