নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:৫৫

‘ডিজিটাল’ হচ্ছে সিলেট বিভাগ, অনলাইনেই মিলবে সকল সেবা

ডিজিটালাইজড হচ্ছে সিলেট বিভাগ। নাগরিক দুর্ভোগ হ্রাস ও সেবাপ্রাপ্তিকে সহজ করতে সিলেটকে ‘ডিজিটাল বিভাগ’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘মুজিব বর্ষ’কে সামনে রেখে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ বিভাগ ‘ডিজিটাল’ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।

মঙ্গলবার দুপুরে ‘ডিজিটাল সিলেট বিভাগের কার্যক্রম ও অগ্রগতি’ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের হলরুমে এ মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার তাহমিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সিলেটকে ডিজিটাল বিভাগ করতে কয়েকটি ধাপে কাজ চলছে। এর মধ্যে রয়েছে সুশাসন সংক্রান্ত ডিজিটাল সেবা, আমার গ্রাম আমার শহর সংক্রান্ত ডিজিটাল সেবা, তরুণদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত ডিজিটাল সেবা প্রভৃতি।

সুশাসন সংক্রান্ত
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার জানান, চলতি বছরের জুলাই থেকে সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ই-ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। এক্ষেত্রে সিলেটের চারটি জেলা দেশের শীর্ষ ৬টি জেলার মধ্যে অবস্থান করছে। গেল জুলাইয়ে সিলেট ছিল ১৬তম স্থানে, এখন ৬ষ্ঠ স্থানে। সুনামগঞ্জ ১৭তম স্থানে ছিল গেল জুলাইয়ে, এখন ২য় স্থানে। হবিগঞ্জ ছিল ৩য় স্থানে, এখন যৌথভাবে ১ম স্থানে। মৌলভীবাজার ছিল ১৩তম স্থানে, এখন যৌথভাবে ১ম স্থানে আছে।

মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গেল ১ সেপ্টেম্বর থেকে সিলেট বিভাগের ৪০টি উপজেলায় শতভাগ ই-মিউটেশন (অনলাইনে ভূমির নামজারি, www.land.gov.bd) চালু করা হয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় কমিশনারের সাথে মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাদের যোগাযোগের জন্য ‘বার্তা’ (barta.gov.bd) নামের অ্যাপস চালু করা হচ্ছে। এই অ্যাপস-এর মাধ্যমে বিভাগীয় কমিশনার সকল জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিংবা সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) একসাথে যেকোনো তথ্য প্রেরণ বা নির্দেশনা দিতে পারবেন। অন্যদিকে মাঠ পর্যায় যেকোনো জরুরি তথ্য, ছবি, ভয়েস রেকর্ড তাৎক্ষণিকভাবে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো যাবে। এটি আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে চালু হতে পারে।

‘আমার গ্রাম আমার শহর’ সংক্রান্ত
মতবিনিময় সভায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সিলেট বিভাগে যেকোনো নাগরিক ৩৩৩ কল সেন্টারে ফোন করে এখন ৫০টির মতো সেবার আবেদন দাখিল করতে পারবেন। এর সেবাসমূহের মধ্যে আছে- ‘একসেবা’ (eksheba.gov.bd) প্ল্যাটফর্ম থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তির আবেদন দাখিল, খতিয়ান/পর্চার আবেদন দাখিল, নগদ কৃষি (ছাদ কৃষি)’র অনলাইন ব্যবস্থাপনা, তথ্য অধিকার আইনের আওতায় সরকারি অফিস থেকে বিভিন্ন তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির আবেদন দাখিল ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির লক্ষ্যে বেকার নিবন্ধন প্রভৃতি।

তিনি জানান, ৩৩৩ এর মাধ্যমে সরকারি সেবা প্রাপ্তির পদ্ধতির বিস্তারিত তথ্য, পর্যটন কেন্দ্রসমূহের তথ্য, সামাজিক সমস্যা (বাল্যবিবাহ, খাদ্যে ভেজাল, ভোক্তা অধিকার, মাদক, জুয়া, ইভটিজিং, পরিবেশ দূষণ, সরকারি সম্পত্তির ক্ষয়সাধন, পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়) প্রতিকারে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিতকরণ, ইসলামিক মাসআলা-মাসায়েল জানান, নিরাপদ অভিবাসন (বিদেশে গমন) সংক্রান্ত তথ্য ও অভিবাসনে প্রতারণার স্বীকার হলে অভিযোগ দাখিল, ই-টিন সংক্রান্ত তথ্য, রেলসেবা সংক্রান্ত তথ্য ও অভিযোগ দাখিল প্রভৃতি সেবা পাওয়া যাবে।

বিভাগীয় কমিশনার জানান, সিলেট বিভাগের সকল জেলায় ডিজিটাল রেকর্ড রুম পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল জমির পর্চা ইলেকট্রনিক উপায়ে এবং ইউডিসির মাধ্যমে প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ৩৩৩ এর মাধ্যমে যেকোনো নাগরিক পর্চার আবেদন দাখিল করতে পারবেন।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর-এর মাধ্যমে প্রদানকৃত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আগামী ডিসেম্বর থেকে সিলেট বিভাগে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভাতা গ্রহীতাদের মধ্যে ৭০ ভাগের তথ্য ডিজিটালাইজ করা হয়েছে।

সিলেট বিভাগে কৃষকদের ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রমও শুরু হয়েছে বলে জানানো হয়। ইতিমধ্যে মৌলভীবাজার জেলার সকল কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে। বাকি তিনটি জেলার আংশিক ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম চলমান। ডাটাবেজ হয়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের কৃষি সেবা কৃষকদের ফোনের মাধ্যমে প্রদান করা সম্ভব হবে। কৃষক ৩৩৩১ নম্বরে ফোন করে তার এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে কৃষি সহায়তা নিতে পারবেন। পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রক্রিয়া শুরু করে সফলতাও মিলেছে।

বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ছাদকৃষি সংক্রান্ত সেবা দেওয়া হচ্ছে। সিলেট বিভাগের যেকোনো নাগরিক ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে ছাদকৃষি সংক্রান্ত সকল সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া এটুআই-এর উদ্যোগে ছাদকৃষি সংক্রান্ত একটি অ্যাপসও তৈরি করা হয়েছে। সিলেট বিভাগের সকল সরকারি দপ্তরের ছাদে ছাদকৃষি তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয় মতবিনিময় সভায়।

তরুণদের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত
সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)-এর মাধ্যমে উদ্ভাবিত স্কিলস পোর্টালের মাধ্যমে (skills.gov.bd) বেকার যুবকদের রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। প্রশিক্ষণ প্রদানকারী সকল প্রতিষ্ঠান সমূহের সমন্বয়ে পর্যায়ক্রমে রেজিস্ট্রেশনকৃত যুবকদের বিভিন্ন ট্রেডে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

তিনি আরো জানান, সিলেট বিভাগের শিল্পকারখানার চাহিদা নিরূপণ করা ও চাহিদা মোতাবেক বেকার যুবকদের দক্ষতা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত