জকিগঞ্জ প্রতিনিধি

২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০১:০১

জকিগঞ্জে আতঙ্কের নাম সালাম মেম্বার

তিনি একজন ইউপি সদস্য। তবে জনপ্রতিনিধি হয়েও জনগণের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেছেন তিনি। আব্দুস সালাম নামের সিলেটের জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডর এই সদস্য সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন এক যুবককে হাত-বা বেঁধে মারধরের মাধ্যমে।

গিয়াস উদ্দিন নামে ওই যুবককে মারধরের ভিডিও বুধবার থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে চড়ে। এ ভিডিও নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আব্দুস সালামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

উপজেলার চারিগ্রামের মৃত মহিবুর রহমান ঢালইর পুত্র আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে গিয়াস উদ্দিন (৩৫)কে মারধর ছাড়াও জুলুম নির্যাতন, দখলবাজি, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভয়ে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয় না কেউ।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও মারধরের ঘটনাও ঘটেছিলো প্রায় চার মাস আগে। তবে এই ঘটনায়ও এতোদিন থানায় কোনো অভিযোগ করেননি নির্যাতনের শিকার হওয়া গিয়াস উদ্দিন। অবশেষে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় মামলা করেন গিয়াস।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর আব্দুস সালাম বিচারের নামে স্থানীয় আব্দুল মান্নান নামের একজনকে জনসম্মুখে নির্যাতন করেন। এই অপমান সহ্য করতে না পেরে মান্নান বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মান্নানের চাচাতো ভাই শাকিল আহমদ।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, সালাম মেম্বার এলাকার সরকারি আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি তার কব্জায় রেখে নারী ও মাদকের আখড়ায় পরিণত করেছেন। পুলিশের সাথেও রয়েছে তার সখ্যতা। কেউ সালাম মেম্বারের অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের শায়েস্তা করেন বিভিন্ন ভাবে।

জকিগঞ্জ আশ্রয়ণ কেন্দ্রের একাধিক বাসিন্দা জানান, আশ্রয়ণ কেন্দ্রের একটি ঘর প্রায় ছয় বছর ধরে দখলে রেখে সেখানে নারী রেখে নানা অনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন সালাম। সরকারি জায়গা ও কেন্দ্রের পুকুর দখল করে তার অনুসারীদের মাঝে বিতরণ করে দিয়েছেন।

সেখানকার সংখ্যালঘু পরিবারের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সালাম মেম্বারের নির্যাতনে তার ভাই ১০ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪ মাস আগে গিয়াস উদ্দিন নামের যুবককে ইউনিয়নের নোয়াগ্রামের গ্রামের বাসিন্দা ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য এবাদুর রহমানের বাড়িতে অনেক মানুষের উপস্থিতিতে হাত পা বেঁধে বাঁশের সাথে ঝুলিয়ে মারপিট করছেন ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম।

নির্যাতনের শিকার গিয়াস উদ্দিন জানান, স্থানীয় যুবক শাহজান তার কাছ থেকে থেকে ২৫শ টাকা ধার নিয়েছিল। সে টাকা ফেরত না দেওয়ায় শাহজাহানের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন গিয়াস। এই মোবাইল নেয়াকে চুরি হিসেবে উল্লেখ করে শাহজাহান ও আনোয়ার গিয়াসকে ধরে এবাদ মেম্বারের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানেই সালাম মেম্বার মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালান। গিয়াস জানা, একটানা প্রায় দেড় ঘণ্টা তাকে মারধর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) মীর মো.আব্দুন নাসের বলেন, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে ভারতে পালানোর সময় কানাইঘাট সীমান্ত থেকে সালাম মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইউপি সদস্য এবাদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান নামে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন বলেন, গিয়াস উদ্দিনকে মারধর ছাড়াও আরও অনেক অভিযোগ আছে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে। পুলিশ এসব অভিযোগের তদন্ত করছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সালামকে শুক্রবার আদালতে হা্জির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত