সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ২১:৪৮

গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন গড়ে তুলুন

বাসদ (মার্কসবাদী)-এর জনসভায় বক্তারা

রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০২তম বার্ষিকী এবং বাসদ(মার্কসবাদী) এর ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সিলেট কোর্ট পয়েন্টে জনসভা করেছে বাসদ (মার্কসবাদী)। সংগঠনের সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সুশান্ত সিনহার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় কার্যপরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল এবং সিলেট জেলার সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব।

জনসভায় কমরেড আলমগীর হোসেন দুলাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়ন এর বিরাট প্রচার চলছে। তারা দাবি করছেন, মানুষের আয় বেড়েছে, দেশে কর্মসংস্থান বেড়েছে। অথচ দেশের মধ্যবিত্ত-গরীব-নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে পারছেন না। পিঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া, টিসিবি-কে কার্যকর করা হচ্ছে না, পর্যাপ্ত পরিমাণ দ্রব্যেও সরবরাহ নিয়ে খোলা বাজারে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির আয়োজন নেই। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন-ফি বাড়ছে, প্রতিবছর বাড়ছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি তেলের দাম। বাড়ছে যাতায়াতের খরচ, রেলসহ গণপরিবহনের উদ্যোগ নেই। দীর্ঘদিনের দাবি সিলেট-ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন চালু করার। ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে চলে যায় বেতনের বেশিরভাগ। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেসরকারিকরণের কারণে চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ কার্ডিয়াক সেন্টার আজও চালু হয়নি, বাড়ানো হয়নি রোগী ভর্তির আসন সংখ্যা। এর উপর শহরেও ডেঙ্গু আতঙ্ক, যানজট, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা মেরামত, বিশুদ্ধ পানি ও গ্যাসের সংকট। মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিটি পরিবার সবসময় শঙ্কায় থাকেন। দেশে অব্যাহতভাবে নারী-নির্যাতন, ধর্ষণ। শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের নির্মমতায় অভিভাবকরা আতঙ্কগ্রস্ত।

ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকের আহাজারি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। প্রতিদিন সব হারিয়ে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে শহরে কাজের সন্ধানে আসছে হাজার হাজার লোক। সস্তা দরে তারা শ্রম বিক্রি করছে। গ্রামের ছোট চাষি, ভাগ চাষি, খেতমজুর থেকে শুরু কওে শহরের রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দোকান কর্মচারী কিংবা চা বিক্রেতা সবাই ঋণের চক্রে বন্দি। সপ্তাহের শেষে কিস্তি পরিশোধের আতঙ্ক তাদেও তাড়া করে বেড়ায়। গার্মেন্টসে চাকরি করা ৪০ লক্ষ শ্রমিক দিনে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত খাটে, মজুরি যা পায় তাতে সংসার চলে না। বকেয়া মজুরির দাবিতে পাটকল শ্রমিকদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভে শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। চা শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে, দৈনিক মজুরী ৪০০টাকা দাবি করলেও তা উপেক্ষিত। এর বাইরে একটা বড় অংশের মানুষ আছে যারা প্রতিদিন কাজ পায় না, কিছু পেলে করে, না পেলে খাওয়াও জোটে না। তারা অনেকে থাকে ফুটপাতে-রাস্তায়-স্টেশনে।’

দেশের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই অবস্থার পরিবর্তনে লড়াই করা ছাড়া কোনো পথ নেই । এই ফ্যাসিবাদী স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে এবং তার পিছনে থাকা এই পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকাঠামোর বিক্ষোভ প্রতিবাদে রাস্তায় নামতে হবে। আমাদের দল গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও দেশের কৃষক-শ্রমিক-ছাত্রসমাজ-পেশাজীবীসহ জনজীবনের সংকট নিরসনে ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আমাদের শিক্ষা দেয় ধারাবাহিক আন্দোলনের পথে একদিকে জনগণের ন্যায্য দাবি আদায় করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে জনগণের রাজনৈতিক শক্তি গড়ে উঠবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত