জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

২৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৬:০৯

গোলাপগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন, সরকার নির্ধারিত দামে কৃষকদের অনাস্থা

সিলেটের গোলাপগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে চলছে আমনের ভরা মৌসুম। পাকা ধানে ভরপুর হয়ে উঠেছে পুরো মাঠ। অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতেই উপজেলা জুড়ে আমন ধান কাটা-মাড়ার মহা উৎসব শুরু হয়ে গেছে। কৃষকরা এখন সোনালী ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দিন রাত মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্য সব বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে মাঠে মাঠে আমন ধানের মাথা ভাল রয়েছে। ফলে এবার আমনের বাম্পার ফলের আশা করছেন কৃষকেরা। তবে বাম্পার ফলনের আনন্দ নিমেষেই শেষ হয়ে যায় ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কায়।

ইতোমধ্যে সরকার আমন ধানের দাম নির্ধারণ করেছেন। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মৌসুমে আমন ধান প্রতি মণ (৪০ কেজি) ১০৪০ টাকা করে কেনবে সরকার। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে লটারির মাধ্যমে এ দামে ধান ক্রয় করা হবে বলে জানা যায়। তবে সরকারের দাম নির্ধারণে আস্থা রাখতে পারছেনা উপজেলার কৃষকেরা।

উপজেলার বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সরকার একই দাম নির্ধারণ করলেও কৃষকেরা সে সুফল একেবারে পায়নি। ধানের বাজার পুরোটাই চলে গিয়েছিল সিন্ডিকেটের দখলে। যার কারণে বোরো ধান বিক্রি করে কৃষকদের উৎপাদন খরচই তুলতে পারেনি। এবারও সে শঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এছাড়াও কৃষকের অভিযোগ, সকলের কৃষি কার্ড না থাকায় সরকার নির্ধারিত গুদামে ধান দিতে পারেন না তারা।

উপজেলা ভাদেশ্বর ইউনিয়নের মীরগঞ্জ গ্রামের কৃষক তাজ উদ্দিন জানান, এবার তিনি ১৬ বিঘা জমিতে উফসি ১০ জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে ধান কাটাও শুরু করেছেন। ধানের মাথা ভাল থাকায় এবার বাম্পার ফলনের আশা তার। তবে, সরকারের নির্ধারিত মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে তার। এছাড়াও তিনি এখনো কৃষি কার্ড প্রাপ্ত হননি বলেও জানান।

একই ইউনিয়নের জিল্লুর রহমান নামে আরেক কৃষক জানান, তিনি প্রতি বছর প্রায় ৫ কেয়ার জমি চাষ করেন। আবারো ১১ জাতের আমন ধান চাষাবাদ করেছেন, ফলনও খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু এখনো কৃষি কার্ড পাননি। কার্ড না থাকায় সরকারী গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন না। বাজারে ভাল দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

জানা যায়, গোলাপগঞ্জে উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নে প্রায় ৬০ ভাগ জমিতেই আউশ, আমন, বোরো ধান চাষ হয়নি এছাড়া ফুলবাড়ি, লক্ষীপাশা, লক্ষণাবন্দ, বাঘা, গোলাপগঞ্জ সদর, ঢাকাদক্ষিন, আমুড়া, পৌর এলাকাসহ সব এলাকাতেই আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে।

এদিকে মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। সারা উপজেলায় একসাথে আমন ধান কাটা শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব শ্রমিকদের পাওয়া যাচ্ছে তারা বেশি মজুরী চাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার খায়রুল আমিন জানান, এবার পুরো উপজেলায় ১২ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের কল্যাণে সব ধরনের সহযোগিতা করায় আমনের ভাল ফলন হয়েছে। এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে কৃষি কাজে আগ্রহ সৃষ্টি লক্ষে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত