নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:৩৮

৪ পদে প্রার্থী ত্রিশের অধিক নেতা

সিলেট জেলা ও মহানগর আ. লীগের সম্মেলন

সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক পদে কারা আসছেন তা জানা যাবে আজ (বৃহস্পতিবার) আজ সম্মেলনের পর বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনেই ঘোষণা হয়ে যাবে সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নাম। তবে এই চার পদপ্রত্যাশীদের রীতিমত জট লেগে আছে। অন্তত ত্রিশ নেতা জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদের মধ্যে থেকেই আজ বাছাই করা হবে ৪ জনকে।

১৪ বছর পর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে আজ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় সম্মেলন শুরু হবে। এদিকে, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। তোরণ, ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ডে ছেয়ে গেছে পুরো নগরী। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় করা হয়েছে আলোকসজ্জা।

দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ার কারণে এবার আওয়ামী লীগে পদপ্রত্যাশীর তালিকাও অনেক দীর্ঘ। প্রদপ্রত্যাশীরা নিজেদের সমর্থনে ব্যানার-ফেস্টুন টানানোর পাশাপাশি, নগরীতে মিছিলও করছেন। তবে সকলেই তাকিয়ে আছেন দলীয় সভানেত্রীর দিকে। শেষপর্যন্ত দলীয় সভানেত্রীই দুই কমিটির সভাপতি-সম্পাদক বাছাই করবেন বলে জানিয়েছেন তারা। ফলে ভোটের মাধ্যমে নয়, সমঝোতাই কমিটি হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

কমিটিতে পুরনোরাই থাকছেন না নতুনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নেতৃত্ব এ প্রশ্ন দলের কর্মীদের মধ্যে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি-সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এই দুই পদে রয়েছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও আসাদউদ্দিন আহমদ। লুৎফুর ও কামরান স্বপদে বহাল থাকতে চাচ্ছেন। অপরদিকে, শফিক-আসাদও চাচ্ছেন স্ব স্ব কমিটির সভাপতির পদ।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ পেতে আগ্রহী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদও। গত কয়েকদিন ধরেই ইমরান আহমদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার অনুসারীরা। বুধবার ইমরানের সমর্থনের নগরীতে মিছিলও হয়েছে। সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীও এই পদ পেতে আগ্রহী। এই দু’জনই বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। তবে এমপি হওয়ার কারণে দলের শীর্ষ পদে তাদের আসার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

জেলার সভাপতি পদপ্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন- সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ ও বর্তমান সহ-সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ।

আর সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন- বর্তমান সহসভাপতি শাহ ফরিদ আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, নিজাম উদ্দিন ও সুজাত আলী রফিক, কোষাধ্যক্ষ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোশাহিদ আলী, মো. আলী দুলাল, দফতর সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল ও উপ-দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরী।

মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতেও রয়েছে। আগামী কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটি তিনি আরও ভালো পদ পেতে পারেন, এজন্য সিলেটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া হতে পারে কামরানকে- এমন আলোচনা রয়েছে সিলেট আওয়ামী লীগে। তবে কামরান এবারও মহানগর সভাপতির পদ পেতে ইচ্ছুক। তার সাথে এই পদ পেতে আগ্রহীদের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সহসভাপতি এডভোকেট মফুর আলী, এডভোকেট রাজ উদ্দিন আহমদ এবং যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার আলোয়ার।

এই কমিটিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীর তালিকা অনেক দীর্ঘ। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে আগ্রহী বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন ও বিজিত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল ও এটিএম হাসান জেবুল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র এবং বন ও পরিবেশ সম্পাদক জগদীশ চন্দ্র দাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিন্স ছদরুজ্জামান এবং সদস্য সালেহ আহমদ সেলিম।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, নেতাকর্মীরা আমাকে সভাপতি পদে চাচ্ছেন। তবে আমি নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী মনে করি। দরীয় সভানেত্রী আমাকে যে পদের যোগ্য মনে করবেন আমি সেই পদেই সন্তুষ্ট।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা সম্মেলনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছি। সম্মেলনকে ঘিরে দলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আজ সকালে আলীয় মাদ্রাসা মাঠে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন ও বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি গঠন করা হবে।

নেতৃত্ব প্রত্যাশীর দীর্ঘ তালিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, তাছাড়া দীর্ঘদিন পর এবার কাউন্সিল হচ্ছে। তাই অনেকে প্রার্থী থাকতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রধান শেষ হাসিনার নির্দেশেই শীর্ষ ৪ নেতা বাছাই করা হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আজকের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি থাকবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও আব্দুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজসহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের পর এবার সম্মেলন হচ্ছে সিলেট আওয়ামী লীগে। অন্যদিকে ২০১১ সালের নভেম্বরের পর এবার আসবে নতুন কমিটি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত