সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০১:১১

৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাতারগুলে শৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সিলেট বিভাগে পুনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৪০টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় জলাবন রাতারগুল, মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক ও এর জলপ্রপাত এলাকা সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাতারগুলের প্রবেশপথে পাঁচজনের ব্যবহার উপযোগী দুটি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে। এতে সরকার খরচ করবে মোট ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ একটি গণশৌচাগার নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা খরচ হবে। এছাড়া এই প্রকল্পে আরও দুটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হবে ৫০ লাখ টাকা খরচে। অর্থাৎ একটি পাবলিক টয়লেটে খরচ করা হবে ২৫ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজজাদ হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পটা পাস হয়েছে। দুই টয়লেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।’

রাতারগুলের মতো এলাকায় পাঁচজনের ব্যবহার উপযোগী একটি গণশৌচাগার নির্মাণে ৩০ লাখ করে খরচ করা হচ্ছে, এটা কতটা যৌক্তিক? জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখেন ভাই, এখনো কাজ শুরু হয়নি, এখনো বরাদ্দ পাইনি। এখনো নকশা ইস্টিমেট হয়নি, কাজেই এই বিষয়ে এখনই কথা বলার সময় হয়নি। প্রকল্পে বরাদ্দ পাওয়া যাক, বরাদ্দ ইস্টিমেট হোক, তারপরে এটা নিয়ে কথা বলা যাবে।’

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া বিভিন্ন খাতে, বিশেষ করে গণশৌচাগার নির্মাণে বরাদ্দের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা চলছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পরিসরে।

‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিরসনে সিলেট বন বিভাগে পুনঃবনায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি সম্প্রতি অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেক সভায়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ করা হচ্ছে ৭০ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর।

প্রকল্প সূত্র জানায়, এর আওতায় আদমপুর ও মাধবী পুরাতন রেস্ট হাউজ সংস্কারে ৮ লাখ ৫১ হাজার ১০০ টাকা, চার মিটার উচ্চতার ৫০০ মিটার রিটেইনিং দেয়াল নির্মাণে ৫০ লাখ, দুটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে ট্যুরিস্টদের জন্য ১৮৬ বর্গমিটার আরসিসি ভিজিটিং প্লেস নির্মাণে ৩৭ লাখ, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের শেষ প্রান্তে ১৬ মিটার আরসিসি প্রটেকশন বেড়া নির্মাণে ২০ লাখ, মাধবকুণ্ড ইকোপার্কে ৪০০ বর্গমিটার গাইড দেয়াল নির্মাণে ৪০ লাখ, ২ মিটার উচ্চতার ৭৫০ আর এম বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণে ৭৫ লাখ, রাতারগুলে প্রবেশপথের দুটি ঘাটে পাঁচজন ব্যবহারকারীর উপযোগী পাকা গণশৌচাগার নির্মাণে ৬০ লাখ, রাতারগুলে দুই ঘাটে আরসিসি পার্কিং প্লেস নির্মাণে ২ কোটি ৮২ লাখ, রাতারগুলে ২০ জন পর্যটক বসার জন্য দুটি ঘাটে পাকা পর্যটন ছাউনি কাম ট্যুরিস্ট শপ নির্মাণে ৮০ লাখ এবং মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকার ছড়া পুনঃখননে ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে, দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষের চারা দিয়ে বাগান তৈরির মাধ্যমে বনভূমির জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ করা এবং বাঁশ, মুর্তা ও বেতবাগান তৈরির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা।

প্রকল্পের বিষয়ে বন অধিদফতরের বক্তব্য, সিলেট বিভাগে মোট ভূমির ৭০ হাজার ৩২১ দশমিক ৬২ হেক্টর বনভূমি সিলেট বন বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন। এ বিভাগে রয়েছে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণির আবাসস্থল এবং জীববৈচিত্র্য-সমৃদ্ধ চিরসবুজ উষ্ণমণ্ডলীয় বনাঞ্চল। এ অঞ্চলে বন বিভাগের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যতের জন্য কাঠ, জ্বালানি, ঘাস জাতীয় বনজদ্রব্যের যোগান নিশ্চিত করার পাশাপাশি ক্ষয়িষ্ণু বনকে সংরক্ষণ করা।

এই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে বিরান পাহাড়ি বনভূমি রয়েছে, যেখানে নতুন বাগান তৈরির সুযোগ রয়েছে। যেমন বিক্ষিপ্তভাবে জন্মানো গাছের ফাঁকা জায়গা, পাহাড়ের নিচু এলাকা যেখানে বর্ষায় পানি জমে, সড়ক ও রেলপথের পাশে পতিত জমি ইত্যাদি। এসব জায়গায় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সমৃদ্ধ করা, প্রাকৃতিকভাবে গজানো চারা সংরক্ষণ ব্লক বাগান, উডলট বাগান, সড়ক বনায়ন, রিডল্যান্ড বনায়ন, আগর বাগান সৃজন, বাঁশ, বেতন ও মূর্তা বাগান সৃজন ইত্যাদি বিবিধ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বাগান তৈরি করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলে বনজসম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্যপ্রাণির সংখ্যা বেড়ে যাবে। এরকম পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার ৪০টি উপজেলায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এই প্রকল্পের আওতায় ১২০০ হেক্টর ব্লক উডলট, ২০০ হেক্টর এনরিচমেন্ট বনায়ন, ৩০০ হেক্টর আগর বনায়ন, ৩০০ হেক্টর উপযুক্ত প্রজাতি বনায়ন, ২০০ হেক্টর বাঁশ বাগান, ১০০ হেক্টর বেত বাগান, ১৪০০ হেক্টর মূর্তা বাগান ও ২০০ কিলোমিটার স্ট্রিপ বাগান ও ৩০০ হেক্টর অ্যাসিস্টেড ন্যাচারাল রিজেনারেশন বাগান তৈরি করা হবে। আর ইনস্টিটিউশন বনায়নের জন্য ৩ লাখ চারা রোপণ করা হচ্ছে।

১৯টি জলাভূমির উন্নয়ন, একটি বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস কমপ্লেক্স, একটি এসিএফ অফিস, চারটি রেঞ্জ অফিস, ৮টি বিট অফিস/ক্যাম্প অফিস নির্মাণ করা হবে। অন্য স্থাপনাগুলোর মধ্যে ১ হাজার মিটার আরসিসি রাস্তা, ৫টি কালভার্ট, সাইড ড্রেন নির্মাণ, যানবাহন কেনা, একটি ফোর হুইলার জিপ, একটি ডাবল কেবিন ফোর হুইলার পিকআপ, ১০টি মোটরসাইকেল, ৫টি ইঞ্জিনযুক্ত দেশি নৌকা কেনা হচ্ছে।

এছাড়া ২টি রেফ্রিজারেটর, ১৬টি এয়ারকুলার, একটি সার্ভে সরঞ্জাম (ক্যাম্পাস ইত্যাদি), ১২টি পানির পাম্প, ক্রোকারিজ, জিপিএস পাঁচটি, তিনটি ফটোকপিয়ার, পাঁচটি জেনারেটর, পাঁচটি কম্পিউটার ও ফার্নিচারও কেনা হচ্ছে। সূত্র: জাগো নিউজ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত