শাকিলা ববি

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:৩৬

রাইড বসানোর পরও চালু হচ্ছে না সিলেটের শেখ হাসিনা শিশু পার্ক

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উদ্যোগে সিলেটর দক্ষিণ সুরমা এলাকার আলমপুরে পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে। মাটি ভরাট, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপন, দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণসহ পার্কের যাবতীয় কাজ ২০০৯ সালে শেষ হয়। পার্কের অবকাঠামোগত কাজ শেষ করার পর প্রায় ৮ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে পার্কটি। এরপর আবার ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর থেকে পার্কে রাইড বসানোর কাজ শুরু হয়। তখন ৬ মাসের ভিতর পার্কটি চালু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল সিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে রাইডগুলো বসানোর পর আরও ২ বছর অতিক্রম হলেও চালু করা হচ্ছে না সেই শিশু পার্ক।

জানা যায়, পার্কটির অবকাঠামোগত কাজ শেষ করার পর নামকরণ সংক্রান্ত জটিলতায় পরে সিসিক কর্তৃপক্ষ। ২০০৬ সালে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের প্রচেষ্টায় পার্কটির জন্য বরাদ্দ আসে। তাই প্রথমে ‘সাইফুর রহমান পার্ক’ নামে কাজ শুরু হয় এই শিশু পার্কের। পরবর্তীতে সরকার বদল হওয়ার পর এই নাম নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রায় ৮ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখা হয় পার্কটি। পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকাকালীন পার্কের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের মূল্যবান সব জিনিসপত্র চুরি হয়ে যায়। পরবর্তীতে ‘সিলেট ন্যাচারাল পার্ক’ নামে পার্কটি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সিসিক। এরপরও জটিলতা না সারায় ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্ক’ নামকরণ করা হয় পার্কটির।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে পার্কটি তৈরির জন্য। রাইড বসানোর কাজও প্রায় শেষ। প্রায় ১৫টি রাইড বসানো হয়েছে। এর মধ্যে আছে রেলগাড়ি, স্লিপার, সসরাইড, বোট, হানি, সুইং, নাগরদোলা ইত্যাদি। পার্কটি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকাকালীন বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনের সরঞ্জামাদি চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে বর্তমানে বিকল্পভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। এছাড়া দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় কিছু রাইডের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যায়। সেগুলোও সংস্কারের কাজ চলছে।  

সিলেট নগরীতে বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত স্থানের অভাব রয়েছে। তাই এই পার্ককে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই নগরীর বাসিন্দাদের। বিশাল পরিসরে এরকম একটি পার্ক তৈরি করার পরও চালু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাধারণ জনগণ  ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও।

নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা রকিবুল হাসান বলেন, বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও এই পার্ক এখনো চালু হয়নি। পার্কটি কথা যখন প্রথম শুনি তখন আমার সন্তানরা স্কুলে পড়তো। এখন আমার সন্তানরা স্কুল পেরিয়ে কলেজে পড়ছে। তারপরও পার্ক চালু হয়নি।  

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরীতে এমনিতেই বিনোদনের জায়গার অভাব। তার উপর যদি একটি পার্কের জন্য এত টাকা খরচ করে তৈরি করার পর ফেলে রাখা হয় তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক। এই পার্ক তৈরিতে যে টাকা খরচ হয়েছে সেখানে জনগণের ট্যাক্সের টাকাও আছে। আমার মতে এটাও এক ধরনের দুর্নীতি। এভাবে যারা সরকারের ও জনগণের টাকা নষ্ট করছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। নামকরণসহ সকল জটিলতা শেষ করে পার্কটি জনসাধারণের জন্য অতিসত্বর চাল করা এখন সময়ে দাবী।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, গত বছরই পার্কটি উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পার্কটি আমরা চালু করতে পারিনি। বর্তমানে রাইড বসানোসহ প্রায় সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নাম সংক্রান্ত জটিলতাও আর নেই। ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশু পার্ক’ নামেই পার্কটি চালু হবে। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর নামে নামকরণ করা হয়েছে তাই এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ শেষ হবে। বিদ্যুতের সংযোগ ও কিছু রাইডের সংস্কার শেষ হলেই পার্কটি চালু করা যাবে। এখনো কোনো তারিখ না হলেও আগামী ২ মাসের ভিতরে পার্কটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত