সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০২:০৩

সুনামগঞ্জে নিউমোনিয়ার প্রকোপ: সদর হাসপাতালে দেড় মাসে ৮ শিশুর মৃত্যু

সুনামগঞ্জে শীতের শুরুতেই নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত এক সপ্তাহে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে দুই শতাধিক শিশু। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অসুস্থ শিশুদের মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালটিতে সংকট রয়েছে চিকিৎসকেরও। এরই মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এখানে নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত দেড় মাসে মারা গেছে আট শিশু।

সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এখানে নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে শিশু ভর্তি হচ্ছে অন্তত ২০টি, যাদের অধিকাংশেরই বয়স এক মাস থেকে এক বছরের মধ্যে। গত এক সপ্তাহেই দুই শতাধিক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ভর্তি আছে আরো শতাধিক। তবে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা ২৯টি হওয়ায় সব শিশুর জন্য বেডের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাদের ওয়ার্ডের বারান্দায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে জনবল ও চিকিৎসক সংকটে ভুগছে সুনামগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। এখানে ৬২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১০ জন। সম্প্রতি আটজন যোগদান করলেও তারা এখনো চিকিৎসা শুরু করেননি।

এ অবস্থায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। বিশেষ করে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। তাছাড়া হাসপাতালে পানির সংকট রয়েছে। সংকট রয়েছে ক্যানোলাসহ অন্য চিকিৎসা সরঞ্জামেরও। একাধিক রোগী অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না। অধিকাংশ ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।

শহরের তেঘরিয়া এলাকার রাখী আচার্য বলেন, হাসপাতাল থেকে ওষুধ তো দেয়া হয়ই না, সিট  পেতে গেলেও একটি সিন্ডিকেটকে টাকা দিতে হয়। তাছাড়া তাদের ব্যবহারও ভালো না।

সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের ইয়াসমিন বেগম বলেন, গত বুধবার তার ছেলেকে এখানে ভর্তি করেছেন। কিন্তু ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে দুটি ইনজেকশন দিলেও কোনো ওষুধ দেয়া হয়নি। সব ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পাগলা এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার শিশুকে এখানে নিয়ে আসার পর চিকিৎসক বেশকিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে দিয়েছেন। যার সবই তাকে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করাতে হয়েছে।

চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরেই এ সংকট চলছে। তার পরও তারা রোগীদের সেবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালের লোকবল ও চিকিৎসক সংকটের সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

রোগীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু ওষুধ হাসপাতালে পাওয়া যায় না। যাদের বাইরে থেকে ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের রোগী কল্যাণ সমিতির (সমাজসেবা) ফান্ড থেকে সহায়তা করা হয়।

তবে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাস দাবি করেন, এ বছর এখানে নিউমোনিয়ার প্রকোপ তেমন গুরুতর নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী দেখা গেছে, গত নভেম্বরে পাঁচ  ও ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ পর্যন্ত তিন শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসব শিশুকে যখন নিয়ে আসা হয়, তখনই তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। ভালো করে চিকিৎসা দেয়ার আগেই তারা মারা যায়। তাছাড়া এ হাসপাতালে সব ধরনের ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। কোনো ওষুধের ঘাটতি নেই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত