নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০২:০২

বিশাল আয়োজন, তবু পাঠকের সাড়া নেই

সিলেট বিভাগীয় বইমেলা

সিলেট নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে চলছে বিভাগীয় বইমেলা। সোমবার (২৩ নভেম্বর) শুরু হওয়া ৭ দিন ব্যাপি এ মেলার শেষ দিন আজ। পুরো আলিয়া মাদ্রাসা মাঠজুড়ে বিশাল আয়োজনে করা হচ্ছে এবারের বইমেলা। আয়োজন বিশাল হলেও মেলা তেমন জমেনি বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা। প্রচার-প্রচারণার অভাবে বিরাট আকারের এই মেলাও ক্রেতা শূন্য বলে জানিয়েছেন তারা।

গত শনিবার এই মেলার উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কালাম আবদুল নাসের চৌধুরী। আজ (২৯ ডিসেম্বর) সমাপনি অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এ মেলা শেষ হবে।

এবারই প্রথম নগরীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিশাল পরিসরে বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিদিন দুপুর ৩টা হতে শুরু করে মেলা চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এর আগে সিলেট বিভাগীয় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো গত জুন মাসে সিলেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন মোহাম্মদ আলি জিমনেশিয়ামে।

এবারের বইমেলায় ঢাকা থেকে আগত ২৮টি ও স্থানীয় ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৪২ টি স্টল অংশ নিয়েছে। প্রকাশনী ছাড়াও সিলেটের কিছু বইয়ের দোকানও বইমেলায় অংশ নিয়েছে।

এর ছাড়া রয়েছে বাংলা একাডেমী, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, চিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, মুক্তিযুদ্ধ সংসদ, এগ্রোসিন নার্সারি, ই.ই.এল.টি.এস প্রশিক্ষণ, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, পিঠা ও চায়ের স্টল।

সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এ মেলায় প্রতিদিন সিলেটের বিকেল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত থাকছে খ্যাতনামা শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুইজ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সেমিনার, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্র, মুক্তিযোদ্ধার মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা, চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু, জন্ম শতবর্ষে তরুণদের ভাবনায় বঙ্গবন্ধু বিষয়ক আলোচনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কবিতা আবৃত্তির আয়োজন করা হচ্ছে।

ঢাকা হতে আগত কাকলী প্রকাশনীর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, তার স্টলে হুমায়ূন আহমেদ ও মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই বেশি বিক্রয় হচ্ছে। তিনি জানান, বই বিক্রয় মোটামুটি হচ্ছে। গতবারে বিভাগীয় বইমেলা ইনডোরে হওয়ায় দর্শনার্থী ছিল কম। এবার আলিয়া মাঠে এ আয়োজন করায় মেলায় দর্শনার্থীর বেশ আগমন হয়েছে। তবে ক্রেতার সংখ্যা কম। নিয়মিত এ মাঠে মেলার আয়োজন করলে মেলা আরও জমবে বলে অভিমত জানান তিনি।

চৈতন্য প্রকাশনীর সমন্বয়ক সাদিক আহমেদ বলেন, দর্শক সমাগম থাকলেও বইয়ের ক্রেতা কম। খোলা মাঠে মেলার আয়োজন করায় এবারে দর্শক উপস্থিতি বেশ ভাল। অনেকে সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য মেলায় উপস্থিত হচ্ছেন।

সময় প্রকাশনীর সঙ্কর দাস জানান, এবারের বইমেলা বেশ বড় পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে। তবে বই বিক্রয় কম হচ্ছে। অনেকেই বই নেড়েচেড়ে দেখে চলে যাচ্ছেন। তবে মেলার শেষ দিনে বিক্রয় বাড়বে আসা করছেন তিনি।

বইমেলায় ঘোরতে আসা দর্শনার্থী কিশলয় মুশাররফ জানান, বিভাগীয় বইমেলা হিসেবে এ বইমেলার প্রচার আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। তাহলে আরও ক্রেতা-দর্শক সমাগম বাড়ত। তিনি বলেন, মেলায় অনেক মা-বাবা তাদের শিশুকে নিয়ে এসেছেন। শিশুদের জন্য একটি শিশু কর্নার রাখার প্রয়োজন ছিল। এবারে বইমেলায় বইমেলায় পোর্টেবল বাথরুম রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ জানান তিনি।

মেলার দর্শনার্থী উপজেলা শিক্ষা অফিসার রিমা দাস বলেন, এবারের বইমেলা বেশ ভাল লেগেছে। সিলেটবাসিদের জন্য এ বইমেলা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সিলেট বিভাগীয় বইমেলায় এবার বই ছাড়াও আরও কিছু স্টল কে স্থান দেয়া হয়েছে। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য শীতকালীন ঐতিহ্যবাহী পিঠা নিয়ে বসেছে ‘সংক্রান্তি’।

সংক্রান্তি'র কর্ণধার উত্তরা সেন পম্পা বলেন, আমরা বিভিন্ন স্থানে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে থাকি। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বাংলার ঐতিহ্যবাহি পিঠার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে আমাদের এ উদ্যোগ।

মেলায় বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করছে ‘সেইফটি সোশ্যাল অর্গানাইজেশন’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনটির কো অর্ডিনেটর মুক্তার হোসেন মান্না জানান, এখন পর্যন্ত ৫শ'র উপর দর্শনার্থীদের ব্লাডগ্রুপ নির্ণয় করা হয়েছে। কারো রক্তের প্রয়োজন হয়ে রক্ত ম্যানেজ করে দেই আমরা।

বইমেলায় শাহ আলম গ্যালারির উদ্যোগে মেলা চলাকালীন সময়ে চলছে চিত্র প্রদর্শনী। সেখানে খ্যাতিমান চিত্র শিল্পীদের আঁকা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। প্রদর্শনীর দায়িত্বে থাকা নাহিদুল ইসলাম জানান, বইমেলার পাশাপাশি সৃষ্টিশীল কর্মে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন তারা।

সংস্কৃতি কর্মী উত্তম কাব্য বলেন, বই মেলার বইয়ের স্টলের পাশাপাশি চিত্র প্রদর্শনী, ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়, পিঠা স্টল দেখে ভাল লেগেছে। এখানে নিয়মিত বইমেলার আয়োজন করা হলে ভাল হবে। তবে মেলার জন্য আরও প্রচারণার দরকার ছিলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত