শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

০৬ জানুয়ারি, ২০২০ ১৮:৫১

আগাম বৃষ্টিতে শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের সম্ভাবনা

শীতের সময় সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত চা শ্রমিকদের জীবন যাপনে কিছুটা ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠেছে। তবে চা উৎপাদনের জন্য খুশির সংবাদ এনে দিয়েছে এই হঠাৎ বৃষ্টি। মৌসুমের প্রথম দিকেই এই বৃষ্টিপাত নতুন চা মৌসুমের জন্য আশাবাদী করে তুলেছে এই শিল্প সংশ্লিষ্টদের । আগাম বৃষ্টিপাতের ফলে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে শ্রীমঙ্গলে চা বাগানগুলোতে।

শীতকালে পানির পরিমাণে এমনিতেই দুষ্প্রাপ্য হয়। বিশেষত সিলেট বিভাগে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস পায়। এমনকি গভীর নলকূপ থেকে পানি নিষ্কাশনকে আরও কঠিন করে তোলে এবং প্রাকৃতিক ছড়াগুলোতে পানির অপ্রতুলতা দেখা দেয় । সব চা গাছ এই সীমাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই সারা দেশের ১৬৬ টি চা বাগানের প্রায় ৫ শতাংশ চা বাগান কৃত্রিম সেচ দিতে সক্ষম এই বাগানগুলো পাইপ ব্যবহার করে পানি স্প্রে করে।

বিভিন্ন চা বাগানের দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলেটে ডিসেম্বরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩ মিলিমিটার। যা গড় বৃষ্টিপাত ৯ মিলিমিটার এর নিচে। তবে আগাম বৃষ্টিপাতের ফলে ইতিমধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ জানুয়ারির গড় ৯ দশমিক ৪ মিমি পেরিয়ে ১২ মিলিমিটারে পৌঁছে গেছে। এই আর্দ্রতা প্রায় একমাস ধরে মাটি ধরে রাখবে ৷ এছাড়াও বৃষ্টির পানিতে নাইট্রোজেনের উচ্চ মাত্রা থাকে যা মাটির নাইট্রোজেনেশনকে সহায়তা করে ৷  চা উৎপাদনকারীরা বিশ্বাস করেন যে মৌসুমের শুরুর দিক থেকেই চা গাছে কুঁড়ি আসবে এবং ফলস্বরূপ মার্চ থেকে অক্টোবরে মধ্যেই পাতা তোলা শুরু হবে ৷

২০১৮ সালে চায়ের উৎপাদন ছিলো প্রায় ৮২.১৩ মিলিয়ন কিলোগ্রাম। এটি দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ  ছিল এবং বাংলাদেশ চা বোর্ড আশা প্রকাশ করে যে ২০১৯ এ চা উৎপাদনের চূড়ান্ত পরিমাণটি প্রায় ৯৫ মিলিয়ন কিলোগ্রামে পৌঁছে যাবে। ২০২০ সালে আরেকটি বাম্পার ফলন আসবে বলে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশী চা সংসদের চেয়ারম্যান শাহ আলম আশা করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি গত বছরের মতো দাম ভাল পেতে পারি তবে আমরা একটি বিশাল লাভের মার্জিনকে সুরক্ষিত করতে সক্ষম হতে পারি৷ বাংলাদেশ ২০১৮-২০১৯ সালের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৪,১,৪৭০,৩১১ ডলারের চা রফতানি করেছে, যা ২০১৭-২০১৮ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪.২২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল ‘

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বাগান মালিকদের অব্যবহৃত জমিকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিবছর চা আবাদে আড়াই শতাংশ বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের থেকেও সুপারিশ রয়েছে। চা বোর্ড অনুসারে প্রথমে ১৮৪৪ সালে সিলেটের মালিনিছড়া চা বাগানে বাণিজ্যিকভাবে ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ২৯৯,৩৩৯ একর জমি আবাদাধীন। সারা দেশের চা বাগানের মধ্যে ৯১ টি মৌলভীবাজারে, হবিগঞ্জে ২৫ টি, সিলেটে ১৯ টি, চট্টগ্রামে ২২ টি, পঞ্চগড়ের সাতটি, রাঙ্গামাটিতে দুটি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি রয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত