নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ জানুয়ারি, ২০২০ ১৯:২৯

দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার আলোয় পথ দেখাতে চায় চাঁদনী

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিজগ্রাম গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদের বড় মেয়ে তাবাসসুম ফেরদৌসি চাঁদনী। জন্মের পর থেকে পৃথিবীর আলো দেখতে পায়নি সে। তবে তার এই সীমাবদ্ধতা তাকে দমাতে পারে নি। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও স্বপ্ন দেখে অন্যকে পথ দেখানোর। প্রতিকূল অবস্থায়ও পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফল করে গর্বিত করেছে তার শিক্ষক ও পরিবারকে। এখন তার স্বপ্ন আরও পড়ালেখা করে শিক্ষক হবার। তার মতো দৃষ্টিশক্তিহীনদের শিক্ষার আলোয় পথ দেখাতে চায় চাঁদনী ।

চাঁদনী জানান তার পথ চলার কথা। হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা চাঁদনীর পিতা আনসার-ভিডিপি সদস্য। পরিবারে তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় সে। বাকি দুই ভাইও পড়ালেখা করছেন। টানাটানির সংসারে যখন লেখাপড়ার ব্যয় চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তখন  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চাঁদনীর দায়িত্ব নেয় সিলেটে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ‘গ্রিন ডিজেবল ফাউন্ডেশন’। এই সংস্থাটির আবাসিক ছাত্রী হিসেবে শিশু শ্রেণী থেকে শিক্ষাজীবন শুরু তার। এরপর আর চাঁদনীকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। মেধাবী চাঁদনী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ৪.০৮ পয়েন্ট পায়। জেএসসি পরীক্ষার মাত্র তিনদিন আগেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী পিতার ক্যান্সার ধরা পড়ার খবরে এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায় তার পৃথিবী। তখন নিজের মানসিক শক্তি দিয়ে জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন চাঁদনী। জেএসসি পরীক্ষায় ৪.২১ পেয়ে এখন নবম শ্রেণীর ছাত্রী।

তার স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে চাঁদনী বলে, আমার ইচ্ছা আমি ব্রেইলের শিক্ষক হবো। যারা আমার মতো দৃষ্টিহীন আমি তাদের শিক্ষার জন্য কাজ করতে চাই।

সে তার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে, স্যারেরা না থাকলে আমার পক্ষে এতদূর আসা সম্ভব হতো না। এখনো আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। যেখানে আমার শিক্ষকরাই আমার অভিভাবক। তারা আমাকে পথ দেখান।

লেখাপড়ার পাশাপাশি গান, আবৃত্তিও করে চাঁদনী। তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ গ্রিন ডিজেবল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বায়েজিদ খান। বায়েজিদ খান বলেন, যখন মেয়েটির বাবার ক্যান্সার আক্রান্ত হবার খবর পেলাম আমরা ভাবিনি সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে পরীক্ষায় অংশ নেয় এবং ভালো ফল করে। এটা সত্যিই আমাদের জন্য গর্বের। তবে কিছুটা আক্ষেপ আছে জিপিএ ফাইভ না পাওয়ায়। চাঁদনী যে ধরণের ছাত্রী সে জিপিএ ফাইভ পেতোই।

 

এই প্রতিষ্ঠানে চাঁদনীর সঙ্গী আরও ৯ জন। তাদের সবার সাথেই চাঁদনীর সম্পর্ক অনেকটা পরিবারের সদস্যদের মতো। একইসাথে লেখাপড়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন সকল কাজে একে অন্যের সহচর।

গ্রিন ডিজেবল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বায়েজিদ খান জানান, চাঁদনীসহ ১০ জন আবাসিক ছাত্রছাত্রী রয়েছেন এখানে। তাদের জন্য ৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও একজন মাওলানা রয়েছেন। সংগীত বিষয়ক শিক্ষক রয়েছেন একজন। যিনি স্বউদ্যোগে তাদের শেখান। দিনের শুরুটা হয় ধর্মীয় ক্লাসের মাধ্যমে। এরপর নিয়মিত পাঠদান। এখানে তাদের থাকা-খাওয়াসহ যাবতীয় খরচ চলে বিভিন্ন ব্যক্তির দেয়া অনুদানে। সরকার থেকে যে সামান্য অর্থ পাওয়া যায় তাতে কিছুই হয় না। আর একারণেই বিভিন্নভাবে অনুদানের অর্থ যোগাড় করেই তাদের লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ মেটাতে হয় সংস্থাটিকে।



আপনার মন্তব্য

আলোচিত