জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

২২ জানুয়ারি, ২০২০ ১৮:০২

জৈন্তাপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকীতে বেড়িবাঁধ

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বড়নয়াগাং নদীর ভাঙ্গন রোধ এবং বন্যার পানি থেকে জনবসতি ও কৃষিজমি রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিলো পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে এই বেড়িবাঁধই এখন ভাঙ্গনের হুমকীতে পড়েছে। এই নদী থেকে বালু উত্তোলনে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বড়নয়াগং নদীর খেয়াঘাট নামক এলাকার দুই পাড় কেটে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে শ্রমিকরা। নদীর তীরের পাশে ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্ত করেও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত বালু নদীর পাশেই মজুদ করা হচ্ছে। সেখান থেকে ট্রাক ও পিক-আপযোগে বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তীর থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে পাউবো’র বেড়িবাঁধে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে ও ভাঙ্গণরোধে সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসন কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এই নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে বালু উত্তোলন বন্ধে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় নি প্রশাসন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অবৈধ ও অপিরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পাউবোর সারী-গোয়াইন প্রকল্পের বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে আগামী বর্ষায় নদী ভাঙ্গনের শিকার হওয়ার আতঙ্কে আছে এই এলাকার লোকজন।

তারা জানান, এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের ফলে বাঁধ ভেঙ্গে লক্ষীপ্রসাদ, লক্ষীপ্রসাদ হাওর, রুপচেং, ফেরীঘাট, লামনীগ্রাম, ভিত্রিখেল, ভিত্রিখেল ববরবন্দ সহ ১০-১৫টি গ্রামের বসতবাড়ি ও ফসলী জমি হুমকীর মুখে পড়বে।

এরআগে ১৯৮৮ সালের পাহাড়ি ঢল ও আকস্মিক বন্যায় এই বেড়ি বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে এই এলাকার বিস্তৃর্ণ অঞ্চল তরিয়ে যায়। দেখা দেয় ব্যাপক ভাঙ্গন। এরপর একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে এই নদী থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ছিফত উল্লাহ, মো. রফিক আহমদ, মো. আমিন আহমদ, ফয়জুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, রুহুল আমিন, কবির আহমদ, শেখর বাবু, আলমাছ উদ্দিন, মিসিরাই মিয়া, বতাই মিয়া, কুটি মিয়া, মিজানুর রহমান, বশির আহমদের নেতৃত্বে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

তবে নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে ছিফত উল্লাহ ও মিসিরাই মিয়া জিজ্ঞাসাবাঁধ বলেন, অন্যরা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করেছে। আমরা ইজরা নিয়েই বড়নয়াগাং নদী হতে বালু উত্তোলন করছি। তবে এসংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজং জানান, বড়গাং নদী হতে বালু উত্তোলনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে আমরাও বালু উত্তোলনের জন্য এই নদী কাউকে ইজারা দেইনি। যারাই বালু উত্তোলন করছেন তারা অবৈধভাবে কাজটি করছেন। এ ব্যাপারে তদন্তপুর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত