হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:৫১

উচ্ছেদের দুই মাস পরই ফের বেদখলে রেলওয়ের শতকোটি টাকার ভূমি

গত বছরের নভেম্বরে প্রভাবশালীদের দখল থেকে শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ের প্রায় ২ দশমিক ৮৭ একর জায়গা উদ্ধার করে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ৷ কিন্তু দুই মাস পেরোতে না পেরোতেই আবার দখলদারদের কবলে চলে গেছে রেলওয়ের ওই জায়গাগুলো৷

গত ২৭ নভেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের স্টেশন ও রেলগেট এলাকা সংলগ্ন ভানুগাছ সড়কের পাশে অবৈধ ও প্রভাবশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করে নিজেদের জায়গায় উদ্ধার করেছিলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দু'মাস পেরোতেই সেই উদ্ধারকৃত জায়গায় আবারো শুরু অস্থায়ী স্থাপনা তৈরী কাজ। উচ্ছেদ অভিযানের সময় মাইকিং করে দখলদারদেরকে তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু কেউ কথা শুনে নি। অভিযান শেষ করে রেলের কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার পর থেকেই আবার দখল শুরু হয়৷ দুইমাসের মাথায় এসে উদ্ধারকৃত ২ দশমিক ৮৭ একর ভূমির প্রায় পুরোটাই আবার চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে৷

অভিযানকালে ৩ শতাধিক অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছিলো। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার নজরুল ইসলাম। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহমুদুর রহমান।

শুক্রবার সরেজমিনে রেলওয়ের এই জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে, উদ্ধারকৃত ভূমিতে আবারো রেলওয়ের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চলছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড লাগিয়ে অস্থায়ীভাবে দোকান কোটা নির্মাণ করা হয়েছে। বসেছে পান-সিগারেট ও মোবাইল রিচার্জ করার দোকান৷ বাঁশ কাঠ দিয়ে অস্থায়ীভাবে তৈরী করা ফার্নিচারের দোকানগুলোতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মালামাল। খালি জায়গাগুলো ভরে উঠছে নতুন সব দোকান কোটায়।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক অবৈধ দখলদার বলেন, সবাই আগের দখলকৃত জায়গায় নতুন করে দোকান কোটা তৈরী করছেন তাই আমিও আমার আগের জায়গায় দোকান নির্মান করেছি৷ রেল কতৃর্পক্ষ যদি আবার উচ্ছেদ করে তাহলে আমরা সরে যাবো।

তিনি বলেন, এসব উচ্ছেদ লোক দেখানো একবার উচ্ছেদ করে গেলে আর কবে আসবে উচ্ছেদ করতে তার কোন ঠিক নাই৷ এখন যদি পজিশন নিয়ে না রাখি তাহলে তা অন্যরা দখল করে নেবে৷

জানা যায়, গত ৩৮ বছর ধরে অবৈধ দখলে ছিল রেলের শতকোটি টাকার এই ভূমি। এর আগে কয়েকদফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও উদ্ধার করা যায়নি ভূমি। রেলওয়ের মালিকানাধীন শ্রীমঙ্গল স্টেশন এলাকার ভানুগাছ রোডের পূর্বপাশ সংলগ্ন রূপশপুর মৌজায় ২৮৭ শতক ভূমি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাংশের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর দখলদার শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় ‘কৃষি নার্সারি প্রকল্প’র নামে ১৩৫ শতক ভূমি দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এছাড়া শহরের শতাধিক প্রভাবশালী একই দাগের ১৫২ শতক ভূমি দখলে নিয়ে গড়ে তুলছিলেন শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

সূত্র মতে, এই ১৫২ শতক ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। এতে সরকার এ খাত থেকে বছরে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।

একটি সূত্র জানায়, সরকারী রাজস্ব বাড়াতে ১৯৮১ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব জমিতে ১৮২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সে সময় হানিফ ও আরও কয়েকজন দখলদারদের করা একটি স্বত্ব মামলার জটিলতায় রেল বিভাগ সেসব প্লটের দখল বুঝিয়ে দিতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, দখলদাররা সংশ্লিষ্ট শাখার এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ভুয়া ও জাল দলিল সৃষ্টি করে ভূমি দখলে নিতে একের পর এক মামলা করেন। তবে সব মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক খারিজ হয়। রেলের পক্ষে উচ্চ আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও দখল ধরে রাখে প্রভাবশালীরা।

এরআগে ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারি প্রকল্পসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল বিভাগ অভিযান চালায়। এসময় দখলদাররা মুক্তিযোদ্ধা ব্যানার ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সামনে নিয়ে সেই অভিযানে বাঁধা দেয়। বাঁধার মুখে পড়ে রেল বিভাগ অভিযান স্থগিত করে চলে যায়।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, রেলওয়ের জায়গা দখলমুক্ত করার কাজটা রেল মন্ত্রনালয়ের। তারা যখন উচ্ছেদ অভিযান করে তখন আমরা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলাম। এখন আবারো এই জায়গা দখল হচ্ছে। আমরা বিষয়টি রেল মন্ত্রনালয়ের নজরে আনবো। তারা আবারো উচ্ছেদ অভিযান করতে চাইলে আমাদের সহযোগিতা পাবে।

রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এই জায়গাগুলো দীর্ঘদিন দখলদারদের কবলে ছিলো আমরা দুমাস আগে জায়গাটি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে এসেছিলাম। এখন কাউকে এই জায়গা লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত রেলবিভাগ নেয়নি। আমরা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি জায়গাগুলো পুণরায় দখলের চেষ্টা চলছে। আমি আমার সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে জানিয়েছি। রেল বিভাগের পক্ষ থেকে দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷

আপনার মন্তব্য

আলোচিত