সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ২৩:৪৭

সিপিবির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ ২৩ ফেব্রুয়ারি

গণতন্ত্রহীনতা, দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসনের প্রতিবাদে এবং জনগণের ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনা ও বৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্বি-দলীয় অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বাম বিকল্প রাজনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি রোববার বেলা ২ টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আয়োজনে বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

‘গণতন্ত্রহীনতা ও লুটপাট রুখো। গদি-নীতি-ব্যবস্থা বদলাও। স্বদেশ বাঁচাও।’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশরক্ষা অভিযাত্রা উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিলেট কিন ব্রিজ পয়েন্টে অনুষ্ঠিতব্য এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় সিপিবি, শাহপরান থানা শাখা, সিলেটের উদ্যোগে এক পথসভা নগরীর শিবগঞ্জ পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হয় এবং পথসভা শেষে লিফলেট বিলি করা হয়।

পথসভায় বক্তারা বলেন, গণতন্ত্রহীনতা ও বিচারহীনতার কারণে সারাদেশে এক ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক ধনিক শ্রেণির লোক ছাড়া খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষসহ নারী থেকে শুরু করে শিশু পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ আজ দিশেহারা। রেলে-বাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গার্মেন্টসে কোথাও কোনো নিরাপত্তা নেই। নারী ধর্ষণ হচ্ছে অহরহ। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত। যুবকদের চাকরি নেই। অন্যদিকে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে জনগণের পকেট খালি করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। বাস-রেল দুর্ঘটনায় প্রতি বছর শত শত যাত্রী মৃত্যুবরণ করছে। কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। স্বাধীনভাবে কথা বলারও অধিকার নেই। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মেহনতি মানুষের রাজত্ব কায়েম করতে হবে। তবে শুধুমাত্র গদির পরিবর্তন হলেই চলবে না, সাথে সাথে সমাজ ব্যবস্থারও পরিবর্তন করতে হবে।

বক্তারা বলেন, দেশের উন্নয়নের মূল কারিগর শ্রমিক-কৃষকদের অবস্থাও শোচনীয় পর্যায়ে। কথায় কথায় শ্রমিক ছাটাই-হয়রানি। মালিকদের নিয়মিত শোষণের শিকার শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত। চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি বর্তমানে মাত্র একশত দুই টাকা। এ মজুরি দিয়ে চা-শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং তাদের স্বাস্থ্য-শিক্ষার ব্যাপারে মালিকপক্ষ একেবারেই উদাসীন।

বক্তারা আরও বলেন, সারা দেশের মতো সিলেটের উন্নয়নের ব্যাপারেও শুধু ফাকা বুলি আওড়ানো হচ্ছে। গণপরিবহন হিসেবে রেলের বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও এখন পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে রেলের উন্নয়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে ভাঙ্গাচোরা ট্রেন, সংস্কারবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ দুর্বল রেললাইন ও রেলব্রিজের কারণে এ রুটে ট্রেন দুর্ঘটনা এখন নিয়মিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন যাবত এ রুটে নতুন কোনো ট্রেন দেওয়া হয় নাই। সিলেট-ময়মনসিংহ রুটে ট্রেন চালু এবং ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ নতুন রেল লাইন নির্মাণের জোর দাবি থাকা সত্বেও এ যাবত তা করা হয়নি। ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ এখনও শুরু হয়নি।

বক্তারা আরও বলেন, সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বেড নিয়ে নোংরা দুর্গন্ধময় পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। তার উপরে পেয়িং বেডের নামে চলে স্বাস্থ্যবাণিজ্য। প্রতিশ্রুতি সত্বেও সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা হয়নি। সিলেটের বিমানবন্দরটিও বহু যুগ ধরে শুধু নামেই আন্তর্জাতিক। এ সকল অবস্থা তুলে ধরে বক্তারা উক্ত সমস্যাসমূহের সমাধানের মাধ্যমে সিলেটবাসীর কাঙ্ক্ষিত ও বাস্তব উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জোর দাবি জানান।

আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সিপিবি আয়োজিত সমাবেশে সদলবলে যোগদান করে সমাবেশকে সফল করে তোলার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি বক্তারা আহ্বান জানান।

সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হাবিবুল ইসলাম খোকার সভাপতিত্বে ও যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ পথসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি সিলেট জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাছান, খেলাঘর সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক তপন চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি সরোজ কান্তি, সাধারণ সম্পাদক নাবিল এইচ, মহানগর সংসদের সভাপতি হাছান বক্ত চৌধুরী কাওছার, সহ-সাধারণ সম্পাদক মনীষা ওয়াহিদ প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত