শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

০৭ মার্চ, ২০২০ ০১:৩৭

শ্রীমঙ্গলে ইউপি সদস্যের বাল্যবিয়ের আয়োজন পণ্ড করে দিলো প্রশাসন

পয়ত্রিশ বছরের শাওন পাশী শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট ইউপি সদস্য। কুলাউড়া উপজেলার একটি চা বাগানের এক কিশোরীর সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্প্রতি ওই কিশোরী শ্রীমঙ্গলের ভূরবুড়িয়ার নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। গত বৃহষ্পতিবার রাতে করা হয় বিয়ের আয়োজন। আমন্ত্রণ করা হয় স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ হাজারো অতিথিকে। কিন্তু বিনামেঘে বর্জপাতের মতো প্রশাসনের অভিযানে আটকে যায় এ জনপ্রতিনিধির বাল্য বিয়ের আয়োজন।

অভিযান পরিচালনাকারী সরকারী কর্মকর্তা সুদীপ দাশ রিংকু মুঠোফোনে বলেন, অতি সম্প্রতি নারী ও শিশু নির্যাতন অথবা পাচারের ঘটনা প্রতিরোধে সরকারী কল সেন্টার ১০৯’ এ ফোন আসার প্রেক্ষিতে, ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাল্যবিবাহের সত্যতা পান এবং বিয়ের কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়।

তিনি আরো জানান, মেয়েটির বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ বা কোন আইনগত কাগজ দেখাতে পারেননি মেয়ের পিতা এবং বিয়ে সংশ্লিষ্টরা। বিয়ের কনের কাছে তার বয়স জানতে চাইলে কনে তার বয়স বলতে পারেনি। সে জানায়, এক বছর আগে ৫ম শ্রেনীতে পড়তো। এখন পড়াশোনা করে না। মেয়েটির গড়ন দেখে, বয়স আনুমানিক ১৫ বছর হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। নাবালিকা মেয়েটির কোন আইনগত অভিভাবক বিয়ে বাড়িতে ছিলেন না। তবে মেয়েটি শাওন পাশীকে ভালোবাসে এবং তাকেই বিয়ে করবে বলে জানায়। অভিযানকালে এনজিও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স’র কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান সাথে ছিলেন। মেয়েটির সামাজিক নিরাপত্তা ও মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহমুদুর রহমানের নির্দেশে অভিযানকারী কর্মকর্তা, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রতন নায়েকের বাড়িতে তাকে রাখা হয়।

পরে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে, কালিঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়ের উপস্থিতিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাকে তার পিতা ও ভাইয়ের নিকট তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উভয়পক্ষের নিকট থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া না পর্যন্ত বিয়ে সংগঠন করা যাবে না মর্মে মুচলেকায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে মেয়েটির বয়স নিরুপনে কোন চিকিৎসা কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে শাওন পাশী প্রথমদিকে কিছুটা অসংলগ্ন কথা বললেও একপর্যায়ে বলেন, ‘তিনি এরকম একটি বিয়ের আয়োজন করায় অনুতপ্ত, যা উচিত হয়নি। আচমকা প্রশাসনের অভিযানে কারনে এ আয়োজনে নেওয়া অতিথি আপ্যায়নের খরচসহ বেশ ক্ষতি হয়েছে।’

পুর্বাশা এলাকার বাসিন্দা পংকজ নাগসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রশাসনের অভিযানের সময় রান্নাবান্নার আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়, বিয়ের গেট খুলে ফেলা হয়। রাতে আমন্ত্রিতরা বিয়েতে যোগদানের জন্য এলে অনেকেই বিব্রতবোধ করেন।

এ বিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “একজন ইউপি সদস্য যিনি জনপ্রতিনিধি, যেখানে তার বাল্যবিবাহ বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করার কথা সেখানে সে নিজেই বাল্যবিবাহ করতে যাচ্ছিলেন। এটি সত্যিই দুঃখজনক ও আইনত অপরাধ। আমরা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না, মেয়েটির বিয়ের আইনগত বয়স পূর্ণ না হওয়ার আগে পুনরায় বিয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে প্রশাসনের তরফে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ‘ঘটনার দিন আমি স্টেশনে ছিলাম না, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযান পরিচালনা করেছেন। বাল্যবিবাহ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, আমরা যেখানেই বাল্যবিবাহ সংগঠনের সংবাদ পাবো, সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে এ ব্যাপারে আরো সচেতন হওয়া উচিত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত