তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৭ মার্চ, ২০২০ ১৮:৫১

তাহিরপুরে এখনো শেষ হয়নি হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ

উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কৃষক

বাঁধে কাজ শুরু এবং সমাপ্ত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় সরকার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি হাওররক্ষা বাঁধের কাজ। এখনো তাহিরপুরের একাধিক বাঁধ ও বেড়িবাঁধের কাজ চলমান রয়েছে। তাই উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় সময় পাড় করছেন হাওরপারের লাখ লাখ কৃষক পরিবার।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার বোরো ফসল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। তবে সর্বশেষ ১৮ হাজার ১৫০হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ অর্জিত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান উদ দোলা জানান, এই পর্যন্ত আবাদকৃত জমিতে কোন ধরনের সমস্যা নেই। আশা করি এবার কৃষকগন তাদের কষ্টের ফলানো জমিতে ভাল ফলন পাবে।

জানা যায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাহিরপুরে ৭০টি বাঁধে ৭৫শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু কৃষকের দাবি কাজ হয়েছে ৫০-৬০ভাগ। তবে কোথাও কোথাও ৩০ভাগও হয়নি। হাওরের কৃষকদের সাথে ঐকমত পোষণ করে হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি সংবাদ সম্মেলন করে এ মনগড়া তথ্য প্রত্যাখ্যান করে। এবং হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার বৃহত্তর শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, শমসা, চুনখলা, বলদা, গুরমা, ফানা হাওরসহ ২৩টি ছোট বড় হাওরে ৭২কিলোমিটার হাওর রক্ষা বাঁধ ও বেড়িবাঁধের জন্য ৭০টি হাওর রক্ষা প্রকল্প (পিআইসি) ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এসব বাঁধের বেশীর ভাগ কাজ এখনও শেষ হয়নি। অনেক বাঁধ এখনও অরক্ষিত রয়েছে।

উপজেলার শনির হাওর পাড়ের বীর নগর গ্রামের কৃষক সাদেক আলী বলেন, পানি কমেছে আরও আগেই কিন্তু অনেক বাঁধে এখনও কাজ শেষ হয়নি। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তাড়াতাড়ি নাম মাত্র কাজ করা হয়েছে বাঁধে। বৃষ্টি বাদলে দিন শুরু হওয়ার আগে বাঁধের কাজ শেষ না হলে হাওরের বোরো ফসল ঘরে উঠানো নিয়ে আমরা শঙ্কিত।

মাটিয়ান হাওরপার গ্রামের কৃষক শফিক মিয়া বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ৩১ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা কিন্তু অধিকাংশ পিআইসি বাঁধে কাজ শুরু করছে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে। তাহলে কাজ কিভাবে শেষ করবে। ২৮ তারিখ পার হয়ে গেলেও অনেক বাঁধের কাজ এখনও বাকী রয়েছে। ইতোমধ্যে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। তাই বাঁধ নিয়ে আমরা আতঙ্কের মাঝে আছি।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, এবার হাওরের অবস্থা খুবই নাজুক। পিআইসি সভাপতি ও সদস্য সচিবকে আটক করে মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হচ্ছে নিজেদের উপর থেকে দায় সরানোর জন্য। আমরা তাদের স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, যথাযথ সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ার ফলে হাওর ডুবি হলে এর দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিজেন ব্যানার্জী বলেন, আমি প্রতিদিনেই প্রতিটি বাঁেধ সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি। যারা এখনও বাঁধের কাজ শেষ করেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এই বিষয়ে কেউ কোন ছাড় পাবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত