মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট

০৯ মার্চ, ২০২০ ১৪:৪৬

‘তথ্য আপা’র সেবায় উপকৃত হচ্ছেন গোয়াইনঘাটবাসী

সিলেটের গোয়াইনঘাটে সরকারের সেবার পরিধি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে তথ্য সেবা সংস্থা 'তথ্য আপা'। সরকারের জনসেবা গ্রহণ করে উপকারিতা ভোগের এক অনন্য নজিরও বলা চলে এই প্রতিষ্ঠানকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী-শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, ই-কমার্স, ই-লার্নিং, আইন সহায়তাসহ সরকারের তাৎক্ষনিক তথ্য সেবার এই প্রতিষ্ঠানটি গোয়াইনঘাটে জনগণের দোরগোড়ায় থেকে সেবার মানসিকতা দেখিয়ে আসছে।

২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরের একটি ভবনের নিচ তলায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়ে 'তথ্য আপা'র গোয়াইনঘাট উপজেলার কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে।

১৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদ চত্বরে তথ্য আপার কার্যালয় পরিদর্শনকালে দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ। তিনি ব্লাড পেশার পরীক্ষা, ডায়াবেটিস, সুগার এবং উচ্চতাসহ ওজন পরিমাপ করান। গোয়াইনঘাটের উপজেলা তথ্য আপা কেন্দ্রের কর্মকর্তা জান্নাতুল মাওয়া মীম ও অপরাপর তথ্য সেবা সহকারীরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদের তাৎক্ষনিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

সময়ের ব্যস্ততায় স্বাস্থ্য সেবার তাৎক্ষনিক রিপোর্ট নিতে পারেননি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ। কিছুক্ষণ পর তার ব্যক্তিগত ই-মেইলে স্বাস্থ্য সেবার সকল তথ্যাদির আপডেট পাঠানো হয়।

১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার তথ্য আপার সেবার পরিধির অনুরূপ চিত্র চোখে পড়ে গোয়াইনঘাটের ৪নং লেঙ্গুঁড়া ইউনিয়নের শনিরগ্রাম গ্রামেও। সেখানে একটি উঠান বৈঠকে জনগণের তথ্য সেবার পরিধির আওতায় সেবাসমূহ উপকারিতাসহ জনসচেতনতা নিয়ে উঠান বৈঠকে উপস্থিত নারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখছিলেন গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব।

এ সময় জরুরী ভিত্তিতে কিভাবে সরকারের তথ্য সেবা পাবেন সেই লক্ষ্যে তিনি উপস্থিত নারীদের স্বচক্ষে বুঝিয়ে দেন। একজন নারীর মোবাইল ফোন থেকে তিনি ফোন করেন সরকারের জরুরি তথ্য সেবা ৯৯৯ এ। সেখানে ফোন করে তিনি বলেন, আমাকে সিলেটের গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম্বারটি দিন। আমি জরুরী একটি তথ্য প্রদান করব। ৯৯৯ এ ফোনের পর মাত্র এক মিনিটের ভিতরে ওই প্রান্ত থেকে ফোন করে তাৎক্ষনিক গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নম্বরটি সরবরাহ করা হয়।

এই প্রক্রিয়ায় সরকারের তথ্য সেবা থেকে জরুরী যেকোনও সেবা নিতে এবং তথ্য দিয়ে সরকারকে সহায়তায় এগিয়ে আসতে উপস্থিত নারীদের সচেতন হওয়ার পরামর্শের পথ শিখিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব। সমবেত নারীদের নিয়ে তথ্য আপার উঠান বৈঠকে গোয়াইনঘাটের উপজেলা প্রকৌশলী রাসেন্দ্র চন্দ্র দেব ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ইকবাল মিয়া উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত নারীদের জনগণের জন্য সরকারের সেবার পরিধির বিষয়ে অবহিত এবং সচেতন হতে পরামর্শমূলক বক্তব্য দেন।

উপকারভোগী সমবেত নারীরা উপজেলা তথ্য আপা কর্মকর্তা জান্নাতুল মাওয়া মীম এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুস সাকিবের গঠনমূলক বক্তব্য থেকে জনগণের জন্য সরকারের সেবাসমূহ অবহিত হয়ে অত্যন্ত খুশি হন।

তারা জানান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী-শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, ই-কমার্স, ই-লার্নিং, আইন সহায়তাসহ সরকারের তাৎক্ষণিক তথ্য সেবার বিষয়ে আমরা ইতিপূর্বে জানতাম না। তথ্য আপার এই উঠান বৈঠক থেকে আমরা আরও সচেতন হয়ে চলার খোরাক পেয়েছি। জনগণের দোরগোড়ায় এমন সেবার পরিধি বাস্তবায়িত হওয়ায় আমরা উপকারভোগীরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা তথ্য আপা কেন্দ্রের তথ্য সেবা কর্মকর্তা জান্নাতুল মাওয়া মীম জানান, দুইজন তথ্য সেবা সহকারী, একজন তথ্য সেবা সহায়ক নিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের একটি ভবনের নিচ তলায় গোয়াইনঘাট তথ্য আপার উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর। উপজেলায় সেবার সার্বিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এরই ধারাবাহিকতায় গোয়াইনঘাট উপজেলা সদর থেকে শুরু করে সুদূর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও জনগণের দোরগোড়ায় গিয়ে আমরা তথ্য সেবা দিয়ে আসছি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা ১২শ ৩২ জনকে তথ্য সেবা, ৪ হাজার ৯ শ ২১ জনকে ডোর টু ডোর এবং ২২টি উঠান বৈঠকের মাধ্যমে ১১শ জন নারীকে সরকারের বিভিন্ন তথ্য সেবা প্রদান করি। উঠান বৈঠকে সমবেত নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে, ই-কমার্স, ই-লার্নিং, আইন সহায়তাসহ জনগুরুত্বপূর্ণ সেবা গ্রহণে তথ্য দিয়ে এসেছি। আমাদের উঠান বৈঠকে উপকারভোগী নারীদের দুপুরের খাবার এবং সম্মানী ভাতাও দেয়া হচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় সরকারের সেবা এমন মানসিকতা নিয়েই আমরা তথ্য আপা কেন্দ্র থেকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ জানান, সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য আপা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সেবার সরকারি এই কেন্দ্রটি জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে। আমি নিজেও এই সেবা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছি। অত্যন্ত চমৎকার এবং আধুনিক পদ্ধতির সেবার মানসিকতা গোয়াইনঘাটসহ সারা দেশে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে সরকার। গোয়াইনঘাটে চলমান এই তথ্য আপার সেবার পরিধি থেকে গোয়াইনঘাটবাসী উপকৃত হচ্ছেন।

গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব বলেন, জনগণের জন্য বর্তমান সরকারের নানাবিধ সেবা চালু রয়েছে। তথ্য আপা সেবাটিও এরই আওতাভুক্ত। এই সেবার আওতায় নারী শিশুরা ব্যাপক হারে উপকৃত হবেন। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী শিশু নির্যাতন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ই-কমার্স, ই-লার্নিং, আইন সহায়তাসহ সরকারের যেকোন সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তথ্য আপা কাজ করে যাচ্ছে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত