দেবকল্যাণ ধর বাপন

১০ মার্চ, ২০২০ ০২:৪১

সিলেটে মাস্ক কেনার হিড়িক, দাম বেড়েছে কয়েকগুণ

করোনাভাইরাস আতঙ্কে সিলেটে মাস্ক কেনার হিড়িক পড়েছে। এই সুযোগে দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতা। একইসঙ্গে বাজারে মাস্কের সঙ্কটও তৈরি হয়েছে।

সোমবার (৯ মার্চ) নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসি ঘুরে দেখা যায়, আগে যে মাস্ক বিক্রি হতো ৫০ টাকায় এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকায়। দাম বৃদ্ধির জন্য মাস্কের সঙ্কটকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে মাস্কের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার নগরীতে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৩১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রোববার রাতে ও সোমবার দুপুরে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে মাস্ক পরে চলাফেরা করতে দেখা যায়। এসময় আলাপকালে তাদের কয়েকজন জানান, নগরে ধুলাবালুময় পরিবেশে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধির আশঙ্কা থাকে। এসব থেকে বাঁচতেই তারা মাস্ক পড়ছেন। এছাড়া সম্প্রতি আলোচিত করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণেও অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন।

এ ব্যাপারে গৌতম মুন্না নামে সিলেটের একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, তার কর্মক্ষেত্র নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় হওয়ায় প্রতিদিন অফিসে আসতে বা বাড়িতে যেতে যাতায়াত করতে হয় মোটরসাইকেলে। কিন্তু সংস্কার কাজের কারণে সড়কে প্রচুর পরিমাণে ধুলাবালি উড়ে। তাই বাধ্য হয়েই মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া সারাদিন ব্যাংকে অনেক লোকের সাথে কাজের তাগিদে কথা বলা লাগে। এক্ষেত্রে তাদের কাশি বা শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে রোগ-জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে, তাই নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করেন তিনি।

এ ব্যাংক কর্মকর্তা মতো রাস্তায় চলাচল করা আরও অনেকের সঙ্গে কথা হলে তারা করোনাভাইরাস আতঙ্কে মাস্ক ব্যবহার করছেন বলে জানা যায়। একইভাবে সিলেটের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ও তাদের সাথে থাকা অভিভাবকদেরও মাস্ক পড়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। এসময় বেশ কয়েকজন অভিভাবক এবং শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেও করোনাভাইরাস আতঙ্কে মাস্ক ব্যবহারের কথা জানা গেছে।

অভিভাবকরা জানান, সন্তানদের সুস্থতার কথা ভেবে মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছি। তাছাড়া  সড়কে ধুলাবালুর দাপটতো আছেই। এজন্য মাস্ক ব্যবহার একপ্রকার বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে।

এদিকে বাংলাদেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে এমন খবরে পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মাস্ক কেনার জন্য। রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে পরা করোনা ভাইরাসের আতংককে পুঁজি করে মাস্কের দাম বাড়াতে থাকে ফার্মেসি ও সার্জারি পণ্য বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় মাস্কের সঙ্কট থাকায় দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারের মানসম্মত সব মাস্ক চীন থেকে আমদানি করা হয়। বর্তমানে চীন মাস্ক রপ্তানি বন্ধ রেখেছে। বাজারে সরবরাহ কম, তাই দামও বাড়তি।

নগরীর জিন্দাবাজারের মুক্তিযোদ্ধা গলির সম্মুখে ফারুক আহমদ নামে এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘আমার কাছে কয়েক ধরনের মাস্ক ছিল। যেমন-কাপড়ের নরমাল মাস্ক, বাংলা ফিল্টার মাস্ক, চায়না ফিল্টার মাস্ক। এছাড়াও ছিল টিস্যু পেপারের তৈরি ওয়ান টাইম মাস্ক। রোববার সন্ধ্যার পর করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও আক্রমণ করেছে এমন খবর শোনার পর মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মাস্ক কেনার জন্য। রোববার সন্ধ্যায় আমার কাছে যা মাস্ক ছিল তা সব বিক্রি করে ফেলেছি। সোমবার সকালে মাস্ক কিনতে গিয়ে দেখি বাজারে মাস্কের সঙ্কট।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাইকারি দোকানিরা আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছেন। বাধ্য হয়েই বেশি দামে মাস্ক কিনে নিয়ে এলাম। মাস্কগুলোর দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে যেখানে চায়নার অরিজিনাল ফিল্টার মাস্ক ৪০ টাকায় বিক্রি করতাম সেখানে চায়না ফিল্টার মাস্কের মতো দেখতে দেশীয় নিম্ন মানের মাস্ক বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ টাকায়। কারণ এখন বাজারে চায়না মাস্ক নেই। আর কাপড়ের নরমাল মাস্ক আগে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করতাম। সে মাস্ক এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আর টিস্যু পেপারের তৈরি ওয়ান টাইম মাস্কতো এখন উধাও।’

তার পাশেই ব্যবসা করা আরেক ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘দাম নিয়ে কারো সাথে দ্বিতীয়বার কথা বলতে হয়নি। সবাই আসছে আর কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে মুহূর্তেই সব মাস্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। রোববার সারাদিন তেমন বেচাবিক্রি না হলেও সন্ধ্যার পর তিন থেকে পাঁচশ পিছ মাস্ক বিক্রি করেছি। বাজারে এখন মাস্কের চাহিদা বেশি বলেও জানান তিনি।

নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ও ফার্মেসির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই বেশিরভাগ দোকান ও ফার্মেসির মাস্ক শেষ হয়ে যায়। এমনকি হ্যান্ড স্যানিটাইজারও শেষ হয়ে যায়। তাও যাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাস্ক রয়ে গেছে, সেগুলোকে তারা বিক্রি করছেন চড়া দামে।

বাজারঘুরে দেখা যায়, ডিস্পোজেবল নন ওভেন ফ্যাব্রিক মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, কটন মাস্ক ১২০ টাকা, স্পঞ্জ অ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক ৫০ টাকা, এন ৯৫ (৮২১০) মাস্ক ২৫০ টাকা, চায়নার অরিজিনাল ফিল্টার মাস্ক ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

কেন এতো দামে মাস্ক বিক্রি হচ্ছে, এমন প্রশ্নে কয়েকটি ফার্মেসির বিক্রেতারা বলেন, ফার্মেসি ভেদে ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ১ হাজার টাকা দামের মাস্ক রয়েছে। এসবের মধ্যে সার্জিক্যাল মাস্ক, ফিল্টার মাস্ক, রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক ছাড়াও একটানা তিন-চারদিন ব্যবহার উপযোগী এন ৯৫ মাস্ক, পি ৯৫ মাস্ক, এন ৯৯, এন ১০০, ও এয়ার পিউরিফিকেশন মাস্ক বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মাস্কের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিলেট নগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট মহানগর। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিলেটে বিভিন্ন ফার্মেসি ও সার্জারি পণ্য বিক্রয়কারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত এ অভিযানে ৩১ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও তা আদায় করে বিক্রেতাদের সতর্ক করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সোমবারের চলা এ অভিযানে বন্দর বাজারের আল হেরা ফার্মেসিকে ৫ হাজার টাকা, মেডিসিন কর্নার ফার্মেসিকে ৫ হাজার টাকা, জিন্দাবাজারের ইদ্রিস মার্কেটের আদিল সায়েন্টিফিক স্টোরকে ৫ হাজার টাকা, চৌহাট্টা পয়েন্টের ইউনিক ফার্মেসিকে ২ হাজার টাকা, সুবিদ বাজার এলাকার আল মক্কা ফার্মেসিকে ৭ হাজার টাকা এবং ডেইলি শপকে আরও ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ব্যবসায়ীরা একেকটা মাস্ক ২০০ টাকা দামে বিক্রি করছেন। যা নিয়মিত মূল্যের থেকে ৫গুন বেশি। আমরা সিভিলে লোক পাঠানোর পর এর সত্যতা পেয়ে এ অভিযান চালাই।

জাতীর ক্রান্তিকালীন সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে অধিদপ্তর। অভিযান চলাকালে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সচেতনতামূলক লিফলেট ও পাম্পলেট বিতরণ করা হয় বলেও জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত