তাহিরপুর প্রতিনিধি

১০ মার্চ, ২০২০ ১৯:০১

তাহিরপুরে জরিমানা আতংকে নৌ মালিক-শ্রমিকরা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হাজার হাজার নৌযানের শব্দে দিন ভর মুখরিত থাকত যাদুকাটা নদীর লাউড়েরগড় থেকে ফাজিলপুর বালিপাথর মহাল পর্যন্ত। কিন্তু এখন চারদিকে এক প্রকার নীরবতা আর নৌ মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে জরিমানা আতংক। তাই অনেকেই নদীতে না গিয়ে নৌকা বাড়ির পাশে নোঙর করে রেখেছেন। আবারও অনেকেই আতংক নিয়েই যাদুকাটা নদীতে নৌযান চলাচল করছে। ফলে ব্যবসায়ীরা নৌযান মালিক ও শ্রমিক সবাই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যে পরেছে ভাটা।

গত ৫ মার্চ বৃহস্পতিবার সীমান্ত নদী যাদুকাটার পাঠানপাড়া মিয়ারচড় খেয়াঘাট সংলগ্ন গাঘড়া এলাকায় অবৈধ নৌযানে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের উপ-সচিব ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. বদরুল হাসান লিটন অভিযান পরিচালনা করে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এর বিভিন্ন ধারায় ১৭টি নৌ যানকে ৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার পর থেকে নৌযান শূন্য হয়ে পড়েছে পুরো যাদুকাটা নদী।

জানা যায়,তাহিরপুর উপজেলার লাউড়েরগড়, মিয়ারচর, বিন্নাকুলি, ঘাগটিয়া এলাকা থেকে প্রতিদিন তিন শতাধিক ছোটবড় নৌকা যাদুকাটা নদী থেকে বালি পাথর পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের আকস্মিক অভিযানের ফলে নৌযান মালিকরা অনেক নৌকা চলাচল বন্ধ রেখেছেন। দীর্ঘদিন যাবৎ তারা স্টিলবডি নৌকা দিয়ে নদী বালিপাথর পরিবহন করে ব্যবসা করলেও লাইসেন্স নেয়ার বিষয়টি তারা অবগত ছিলেন না। আর জেলায় বিআইডাব্লিউটির কোন অফিস না থাকা ও তাদের কোন কার্যক্রম না থাকায় কোথাই গিয়ে তারা এই বিষয় সম্পর্কে জানতেও পারছেন না। এজন্য অনেক নৌযান মালিক তাদের নৌযানের লাইসেন্স করেননি।

নৌযান মালিক সফর উদ্দিন বলেন,নৌযান মালিকরা জরিমানার দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে নৌকা চালানো বন্ধ রেখেছেন। তারা আরও জানান,আমরা সবাই বৈধ উপায়ে নদীতে নৌযান চালাতে চাই। আমাদের আগে থেকে অবহিত না করে আকস্মিক ভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানোর কারণে আমার মত অনেক নৌযান মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে নৌকা চালানো বন্ধ রেখেছেন।

নৌকা চালানোর জন্য যে রেজিস্ট্রেশনসহ আরও কিছু বিষয় আছে ও জিনিসপত্র লাগে তা আমাদের জানা ছিলো না বলে জানান,বিন্নাকুলি গ্রামের জাহিদ মিয়া। তিনি আরও বলেন,অভিযানের পর আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। অভিযান পরিচালনার পূর্বে নদীতে মাইকিং বা লাইসেন্স এর বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবহিত করার পরও লাইসেন্স না করলে এভাবে আটক এর পর জরিমানা করা উচিত ছিল।

বালিপাথর ব্যবসায়ী কামাল মিয়া বলেন,আমরা নৌকা ভাড়া করে বালিপাথরের ব্যবসা করি গত দু যুগ ধরে। এর মধ্যে কোন দিন নৌযানের নিয়ম ও নীতি সহ অন্যান্য বিষয়ে কেউ কোন কথা বলে নি। সব বিষয়ে জনগণকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেও নৌযানের বেলায় এমন কেন। হঠাৎ নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান রীতিমতো অবাক করেছে সবাইকে, অনেকে ভয় পেয়ে নৌকা মালিকরা নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখেছেন। কোথাও যাচ্ছে না। আমরা ব্যবসায়ীরা এখন বিপদে আছি।

নৌ শ্রমিক আমির উদ্দিন জানান, জরিমানার কোন নিয়মনীতি নেই। ৭ শত ফুটের নৌকা থেকে জরিমানা আদায় করে বিশ হাজার টাকা। যা ৪০ বা তারও বেশী ফুটের নৌকার বেলাও তাই। যা আমাদের জন্য খুবই কষ্টের। অভিযানের আগে একটি সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালানো হলে সবার জন্য ভালো হতো। আমরা সবাই কম জানা লোক যারা বেশি জানেন তারা কি করে সর্তক না করেই অভিযান চালাল।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের বিষয়টি আমাদেরকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। যারা লাইসেন্স করবেন না তারা দ্রুত নৌযানের লাইসেন্স করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

অভ্যন্তরীণ জাহাজ পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহজাহান সিরাজ (ছাতক ও ভৈরব) বলেন, সকল নদীতে চলাচলকৃত  নৌযানের বৈধ কাগজ পত্র, নৌকায় জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম, নৌকা চালকের (মাঝির) ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা আবশ্যক। না থাকা সরকারী নিয়মের খেলাপ। তাই সবাইকে সরকারী নিয়ম মানা ও নৌ যান চালকদের নিরাপত্তার জন্যই আমাদের অভিযান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত