জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

১০ মার্চ, ২০২০ ২১:৩০

তাহিরপুরে ১৩ পদে পাঁচ চিকিৎসক, ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র হাসপাতাল বলতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এতে চিকিৎসকের পদ ১৩টি থাকলেও শূন্য রয়েছে ৮টি। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। উপজেলার রোগীদের বিশেষ সেবা দেয়াতো দূরের কথা, হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজ করতেও হিমশিম খাচ্ছেন এখানকার কর্মীরা। বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট দেশের উপজেলার একমাত্র হাসপাতাল। জনবলের পাশাপাশি হাসপাতালটিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট। এ অবস্থায় হাসপাতালটি চিকিৎসাসেবা দিতে দিনের পর দিন সামর্থ্যহীন হয়ে পড়ছে।

জানা যায়, ৩০ শয্যা নিয়ে সেবা দিতে শুরু করা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি গত বছরের ২৫ জানুয়ারিতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পর ঘটা করে এর উদ্বোধন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য। উন্নীত হওয়ার পূর্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কখনো ২ জন, কখনো ৩ জন চিকিৎসকের উপস্থিতি ছিল। উন্নীত হওয়ার পর ৩৯ তম বিসিএসএ ৬ জন চিকিৎসক একসাথে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে ৩ জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যান এবং ৩ জন এখনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলা ৭টি ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর সেবা দেওয়ায় জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ৮টি পদই শূন্য রয়েছে। শূন্য পদগুলো হলো আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১ জন, ডেন্টাল সার্জন ১জন, কনসালটেন্ট ৪জন (সার্জারি,মেডিসিন,গাইনি) ও এনেস্থিসিয়া ইউনিয়ন মেডিকেল অফিসার ২ জনের পদ শূন্য রয়েছে।

শুধু ডাক্তার সংকট নয় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নেই ল্যাব টেকনোলজিস্ট, একেই অবস্থা রেডিওগ্রাফার, ফার্মাসিস্ট পদের। এক্সরে মেশিন ৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি রুম তালাবন্ধ আছে। আর হাসপাতালের শুরুতেই উন্নত মানের তিনটি জেনারেটর চালু হলেও কয়েক বছর ব্যবহারের পর তা বর্তমানে অকেজো হয়ে পরে আছে। ফলে আগত রোগীরা কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হলে বাহিরে পরীক্ষা নিরীক্ষা কাজটি সারতে হচ্ছে। সম্প্রতি একটি এ্যাম্বুলেন্স দিলেও ব্যবহার করতে পারছেন না জরুরী প্রয়োজনে রোগীরা।

৩৯তম বিসিএসএ তাহিরপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানকৃত ডাক্তার নিলুফার ইয়াসমিন জানান, ৬ জন ডাক্তার একসাথে যোগদান করেছিলাম। ৩জন অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন। আমি আর যায়নি। থেকে গেলাম হাওর পাড়ের মানুষ পাশে থেকে চিকিৎসা সেবা দিতে। সব জায়গাতেই তো চিকিৎসা সেবা দিতে হবে, তাহিরপুর থাকি বা অন্যত্র যাই। বর্তমানে যারা উপস্থিত রয়েছি সবাই চেষ্টা করছি সঠিকভাবে আগত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে।

উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ঝর্ণা মনি জানান,হাসপাতালে নতুন মহিলা ডাক্তার আসছে শুনে আসলাম চিকিৎসা করানোর জন্য। তিনি ছিলেন না তখন আমার মত অনেকেই মন খোলে রোগের কথা বলতে পারছিলাম না এখন সুবিধা হয়েছে। তিনি আরও জানান প্রতিটি হাসপাতালে দুই একজন নারী ডাক্তার থাকা খুবই দরকার।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন জানান, ৩ জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অবশিষ্ট চিকিৎসক গণ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার সুমন বর্মণ বলেন, ১৩জন চিকিৎসকের স্থলে ৫জন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ফলে প্রতিদিনেই আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা থাকলেও তিনি মাসের অধিকাংশ সময় অফিসিয়াল কাজকর্ম, মিটিং, সেমিনার নিয়ে ব্যাস্ত থাকছেন।

তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইকবাল হোসেন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার থাকতে চান না। নতুন নিয়োগ দিলেও তারা যোগদানের দিন থেকে অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমরা যারা এখানে আছি প্রত্যেকেই চেষ্টা করছি আমাদের সেবাটুকু দেয়ার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত