কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১১ মার্চ, ২০২০ ২০:৪৭

এসএমপির পুলিশ সদস্যের উপর কমলগঞ্জে জমি দখলের অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে জমি দখল করে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্য তামিম মিয়া ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। জমি দখলের অভিযোগ করেন কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোলের হাওর গ্রামের কৃষক লুৎফুর মিয়া।

কৃষক লুৎফুর মিয়ার ৬ শতক জমি দখল করার ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় ও আদালতে দুটি অভিযোগ করা হয়েছে। তবে দুটি অভিযোগের পুলিশি তদন্তে সত্যতা মিললেও জমি ফেরত নিতে পারছেন না বলে জানান ভুক্তভোগী লুৎফুর মিয়া।

কমলগঞ্জ থানা ও আদালতে করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোলের হাওর গ্রামের মসুদ আলির ছেলে মিছবর মিয়া ১৯৭৬ সালে ৪৭২২ দলিলমূলে তার নানী মালিক নেছা বিবির কাছ থেকে দুই দাগে ৩২.৫০ শতক জমি ক্রয় করেন। বর্তমান যা গুলের হাওর মৌজার আরএসএ খতিয়ান ১৮১ ও এসএ খতিয়ান ৪৪১ এর এসএ দাগ নং ৮৫৬ ও আরএস দাগ নং ১১৫৭ এর দুই দাগে ৩২.৫০ শতক জমি। জমি ক্রয় করার কিছুদিন পর তিনি অবিবাহিত অবস্থায় মারা গেলে জমিটি তার পিতা মসুদ আলি ও তার বোন গুলবাহারের নামে মাঠ ফর্সাসহ রেকর্ড সৃষ্টি করা হয়। কয়েক বছর পর মসুদ আলিও মারা গেলে ওয়ারিশান সূত্রে জমিটির মালিক হন তার ছোট ছেলে লুৎফুর মিয়া। তিনিই পরবর্তীতে জমি ভোগ করে আসছিলেন। বিগত দু'তিন বছর আগ থেকে তাদের খরিদা ওই জমির উপর লোভদৃষ্টি পড়ে তাদের প্রতিবেশী আমিন আলির ছেলে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগে কর্মরত পুলিশ সদস্য তামিম মিয়া ও তার পরিবারের।

এক পর্যায়ে তামিম ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে লুৎফুর মিয়ার খরিদা ৩২.৫০ শতক জমির এক পাশ থেকে ৬ শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ঘর নির্মাণে বাঁধা দিলে কৃষক লুৎফুর মিয়াসহ তার পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যদের নানা ভাবে হুমকি দেন পুলিশ সদস্য তামিম। এমনকি তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এনকাউন্টারে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বাধ্য হয়ে লুৎফুর মিয়া কমলগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ।

ভুক্তভোগী লুৎফুর মিয়া জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে কমলগঞ্জ থানার এএসআই আনিছুর রহমান ঘটনাস্থল তদন্ত করে ভূমি দখলের সত্যতার প্রমাণ পেয়ে উভয় পক্ষকে থানায় উপস্থিত হওয়ার জন্য বলেন। গত ৬ মার্চ উভয় পক্ষ থানায় উপস্থিত হলে বিবাদী তামিম মিয়া ভূমি দখলের কথা স্বীকার করে তা ছেড়ে দেয়ার কথা বললে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন এএসআই আনিছুর রহমান।

পরে পুলিশ সদস্য তামিম বাড়িতে গিয়ে ভূমিটি ছেড়ে না দিয়ে রাতের আঁধারে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করলে ভুক্তভোগী লুৎফুর মিয়া গত ৯ মার্চ মৌলভীবাজার অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে তার জমিতে অনুপ্রবেশ বন্ধে মামলা দায়ের করেন।

বুধবার (১১ মার্চ) সকালে সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী লুৎফুর মিয়া ও তার পরিবারের সাথে আলাপ করা হয়। ভুক্তভোগী লুৎফুর মিয়া বলেন, বিষয়টি বিচার প্রক্রিয়াধীন থাকার পরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ সদস্য তামিম লোকবল নিয়ে জোর পূর্বক ভূমি দখল করে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এতে বাধা দিলে, সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমি ও আমার পরিবারের উপর হামলা চালায়। আমাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে আমরা প্রাণে রক্ষা পাই। আমরা সিলেটের ডিআইজি অফিসে এই পুলিশ সদস্য ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করবো।

তবে জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ সদস্য তামিমের মা রীনা বেগম বলেন, ১৯৭৩ সালে আমার শশুর সবিল মিয়া মালেক নেছা বিবির কাছ থেকে ১৫ শতক ভূমি খরিদ করেন। পরবর্তীতে মাঠ আমিন আমাদেরকে ২০ শতকের একটি মাঠ ফরচা দেন। তাই সেই জমি ভোগ দখল করে সেখানে ঘর নির্মাণ করছি। বাকি ৫ শতক জমি কোথা থেকে আসলো এ প্রশ্নের জবাবের কোন জবাব দেননি রিনা বেগম।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ থানার এএসআই আনিছুর রহমান বলেন, জমি সংক্রান্ত ব্যাপারটি থানায় উভয়পক্ষ নিয়ে এসে সমাধান করা হয়েছিল। এরপর আর কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি।

কমলগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাশ জমি দখল করে ঘর নির্মাণ নিয়ে এক পুলিশ সদস্যের উপর থানায় ও আদালতে দুটি পৃথক মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন দুইজন উপ-পরিদর্শক মামলার তদন্ত করেছেন। বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছেন। তদন্ত পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত