মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

১৬ মার্চ, ২০২০ ২২:৩৪

সুনামগঞ্জে বেড়েছে বখাটেদের উৎপাত!

প্রতীকী ছবি

কয়েকমাস আগেও সুনামগঞ্জ শহরে বখাটেদের উৎপাত তেমন না থাকলেও এখন আবার তাদের অপতৎপরতা বেড়েছে। বিশেষ করে শহরের হোসেন বখত চত্বর এলাকাকে কেন্দ্র করে তাদের উৎপাত বিস্তৃত রয়েছে মহিলা কলেজ রোডসহ আশপাশের এলাকায়। এতে ছাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কে আছেন অভিভাবকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের স্কুল-কলেজের যাতায়াত পথে বখাটেপনার শিকার হচ্ছে ছাত্রীরা। ছাত্রীদের অভিযোগ স্কুল শুরুর আগে ও স্কুল ছুটির শেষে বিভিন্ন এলাকায় বখাটেরা তাদেরকে যাতায়াত পথে উত্যক্ত করে। বিশেষ করে সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লবজান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়, পৌর কলেজ এবং সরকারি কলেজ এলাকাতেই বখাটেপনা হয়ে থাকে বেশি।

ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তাদের স্বজনরা জানান, ক্লাস শুরুর আগে শহরের হোসেন বখত চত্বর, বুবির পয়েন্ট, উকিলপাড়া পয়েন্ট, সরকারি কলেজের সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে দল বেধে জড়ো হয় বখাটেরা। উঠতি বয়সী বখাটেদের বেশিরভাগই অছাত্র। তারা কখনো মোটরসাইকেল যোগে, কখনোবা হেঁটে হেঁটে ছাত্রীদের পিছনে ও সামনে থেকে অশ্লীল মন্তব্য করে। অনেক সময় গাঘেঁষেও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

আরও জানা যায়, বখাটেরা তাদের বখাটেপনার ধরন বদলিয়ে এখন কাঁধে নিয়েছে স্কুলব্যাগ। কখনো কখনো সাদা শার্ট পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ছাত্র সেজে দিনভর দাঁড়িয়ে থাকে বিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে। কখনো একা আবার কখনো কয়েকজন বখাটে একসঙ্গে ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে উত্ত্যক্ত ও কটূক্তি করে। তাছাড়া বিদ্যালয় ছুটির পর দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে মেয়েদের বিরক্ত করে থাকে বখাটেরা। কিছু বখাটে আবার মোটরসাইকেল চালিয়ে ছাত্রীদের পিছু নেয়। পাশাপাশি তাদের মোবাইল ফোনে ছাত্রীদের ছবিও তুলে নেয়। কোনো ছাত্রী এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে গালমন্দ করে বখাটেরা।

এদিকে, গত শনিবার সকালে সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক মিলে আটক করেন তিন বখাটেকে। সে সময় বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মফিজুর রহমানের হাতে ধারালো বস্তু দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায় এক বখাটে। পরে শিক্ষকরা বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেন। পরবর্তীতে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ সময় বখাটেরা তাদের দোষ স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে এমন করবে না বলে মুচলেকা দেয়। পুলিশ জানায়, আটককৃত বখাটেদের বয়স ১৮ বছর না হওয়ায় তাদের মুচলেকার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, যাদের আমরা ধরেছিলাম তারা আমাদের ছাত্রীদের বিভিন্ন রকমের কুপ্রস্তাব দিতো। তারা ছাত্রীদের বিভিন্ন রকমের টাকার অফার দিতো তাদের সাথে যাওয়ার জন্য। পরে ছাত্রীরা আমাদের বিষয়টি জানালে আমরা তাদেরকে ধরার চেষ্টা করি এবং সেসময় একজন পালিয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন ছাত্রী জানান, কিছু ছেলে সারাক্ষণ বিদ্যালয় এলাকার আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় তারা আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে এবং ইচ্ছে করে ধাক্কা দিবে। তাছাড়া তারা বিভিন্ন রকমের অশ্লীল শব্দ এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিও করে থাকে। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের সময় আমরা আতঙ্কে থাকি।

অভিভাবক রূপক দাশ বলেন, মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় থাকি। দিনকাল যেমন হয়েছে কখন কোন অঘটন ঘটে তার নিশ্চয়তা নাই। ইদানীং বখাটেদের উৎপাত আবার বেড়েছে। এদের কঠোরভাবে দমন করা উচিত।

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, আমাদের কলেজে বখাটেদের উৎপাত বেড়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা প্রতিদিনই ক্যাম্পাসের ভেতরে এসে ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল কথাবার্তা বলে। রাস্তাঘাটেও তারা উত্ত্যক্ত করে।

সুনামগঞ্জ সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদুর রহমান বলেন, বিভিন্ন পয়েন্টে স্কুল-কলেজে ক্লাস শুরুর আগে পরে আমাদের টহল দল থাকে। ছাত্রীরা যাতে নিরাপদে ক্লাসে যেতে পারে সে কারণেই টহল। কোথাও অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তবে এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত