দেবকল্যাণ ধর বাপন

১৯ মার্চ, ২০২০ ০২:১৯

বন্ধের নির্দেশ অমান্য করে সিলেটে চলছে কোচিং বাণিজ্য

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয় চিন্তা করে সরকার যেখানে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা সেখানে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সিলেটের কোচিং মালিকরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কোচিং বাণিজ্য।

সরকারের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকটি কোচিং সেন্টার তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ও নিয়মিত ক্লাস করাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের।

বুধবার (১৮ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে সিলেট নগরীর লামাবাজার এলাকার প্রয়াস কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর শিক্ষার্থীর ভিড়। যারা ক্লাস করার জন্য অপেক্ষা করছেন।

পরে কোচিং সেন্টারের উপরের তলায় উঠে দেখা প্রায় তিন চারটি কক্ষে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অনেকটা ঘাবড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তাদের। এ সময় কথা হয় অষ্টম শ্রেণির ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীর ক্লাস নেয়া এক শিক্ষকের সাথে।

তার কাছে ক্লাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্কুল বন্ধ তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালু রাখতেই নাকি তাদের কোচিংয়ে আসতে বলা হয়। যাতে স্কুল বন্ধকালীন সময় বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এ সময় প্রয়াস কোচিং সেন্টারের বাইরে ও ভিতরে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের দেখা যায় অপেক্ষা করতে। বাইরের শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে পরবর্তী ব্যাচে পড়ানোর জন্য, আর ভিতরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে আরও কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। এসময় বাইরে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

জনসমাগম এড়াতে যেখানে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে সেখানে এই নির্দেশনা উপেক্ষা করে কোচিং সেন্টার খোলা রাখার বিষয়ে সেন্টারটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সুরনজিত তালুকদার সরকারের এই সিদ্ধান্তে জানেন না বলে বলেন, এধরনের নির্দেশনা আমরা পাইনি। তবে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা ভেবে আজই (বৃহস্পতিবার) শেষ ক্লাস নিচ্ছি। আগামীকাল থেকে আমরা কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখব।

প্রয়াস কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে এর আগেও সরকারের নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে। দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় সকল প্রকার কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকলেও এ কোচিং সেন্টারটি অবাধে চালিয়ে যেত তাদের কোচিং বাণিজ্য।

তবে অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের যাতে পড়ালেখায় ক্ষতি না হয় সেজন্য কোচিং সেন্টারে নিয়ে এসেছেন তারা। এরমধ্যে কিছু অভিভাবকদের সাংবাদিকদের দেখে বিরূপ মন্তব্য করতেও শোনা যায়। অনেকে ব্যঙ্গ করে বলতেও শোনা যায়, সাংবাদিকদের আর খেয়ে কাজ নাই তারা এসেছেন বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটাতে।

এদিকে, নগরীর জল্লারপার এলাকার স্টুডেন্ট কোচিং সেন্টারে বাচ্চাদের ১৫ থেকে ২০ জোড়া জুতা কোচিং সেন্টারের ভিতরে দেখা গেলেও কর্তৃপক্ষ বলছে সেখানে কোন বাচ্চাদের কোচিং করানো হচ্ছে না। কিন্তু ভেতরে বেশ কয়েকজন অভিভাবক অপেক্ষা করছেন তাদের বাচ্চাদের জন্য।

জুতোগুলোর অস্তিত্ব শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রমাণ করছে জানানো হলে কোচিং সেন্টারটির স্বত্বাধিকারী  খোরশেদ আলম বলেন, বাচ্চারা ভুল করে অনেকে স্যান্ডেলগুলো ফেলে গেছে। এ পর্যায়ে সংবাদকর্মীদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শারমিন সুলতানা সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয় চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা সবাইকে মানতে হবে নিজেদের ভালোর জন্যই।  তাই আম সকলকে আহবান জানাবো যাতে তারা নিজের নিজের জায়গা থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসবেন।

তিনি আরও বলেন, আজ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারির আওতায় নিয়ে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত