তপন কুমার দাস, বড়লেখা

১৬ এপ্রিল, ২০২০ ২৩:৩২

বৈরি আবহাওয়ার আশঙ্কায় বড়লেখায় বোরো ধান কাটা শুরু

২৬ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। পয়লা বৈশাখের বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা শুরু হয়। বৈরি আবহাওয়ার আশঙ্কায় পাকা ধানগুলো আগেভাগেই কাটা শুরু হয়েছে। আগাম বন্যার সতর্কবার্তায় পেকে যাওয়া ধানগুলো যত দ্রুত সম্ভব কাটার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও কৃষকদের মাঝে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এবছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।

বড়লেখা উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন মিলিয়ে বোরো আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৫৭৫ হেক্টর। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৪৬৮ হেক্টর। কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ১০৭ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ধান আবাদ হয়েছে হাকালুকি হাওর পাড়ের তিন ইউনিয়ন তালিমপুর, সুজানগর ও বর্ণিতে। অন্য ৭টি ইউনিয়নেও কম-বেশি ধান আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে ২৬ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, বড়লেখায় কৃষক পর্যায়ে নিজস্ব লোকজন দিয়েই ধান কাটানো হয়। তাছাড়া এবার করোনাভাইরাসে অনেক দিনমজুর কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অন্য কাজ না থাকায় এদের ধান কাটায় কাজে লাগানো যাবে। শ্রমিক সংকটের কোনো আশংকা নেই। শুধুমাত্র আবহাওয়া ভালো থাকলেই ধান কেটে ঘরে তুলা সম্ভব হবে। আগামী ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের মেঘালয় ও আসামের বরাক অববাহিকায় ভারী (১০০ মিমি থেকে ২৫০ মিমি) বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য কৃষি বিভাগ যেখানে ধান পাকছে, সেখানেই দ্রুত কৃষককে ধান কাটতে উৎসাহিত করছেন। ইতিমধ্যে কৃষক সমিতিগুলোকে ধান কাটার যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। এলাকাগুলোতে প্রচারপত্র বিলি হচ্ছে। ৮০% পরিপক্ব হলে ধান সংগ্রহের আহবান জানানো হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) পয়লা বৈশাখের বিকেলে ধান কাটতে উৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিক কৃষকদের সাথে ধান কাটায় অংশ নেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান, ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, নারী ভাইস চেয়ারম্যান রাহেনা বেগম হাছনা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন, কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, হাওলাদার মো. আজিজুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্ত দাস, সাংবাদিক লিটন শরীফ, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পলাশ দত্ত ও সুবিনয় চন্দ্র দাস, কৃষক আব্দুল আজিজ, জয়নাল উদ্দিন, সফর উদ্দিন, সেবুল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগ সহসভাপতি সুমন আহমদ প্রমুখ। বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা-খুটাউড়া সিআইজি (ফসল) কৃষক সমবায় সমিতির আয়োজনে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনী প্লটে স্বল্প মেয়াদী বোরো নতুন জাতের ব্রি ধান ৮৮ ক্ষেতে এ ধান কাটা হয়।

কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘কৃষিবিভাগ আমাদের সহায়তা করছে। পরামর্শ দিচ্ছে। পেকে যাওয়া ধান দ্রুত কাটার আহবান করছে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। আবহাওয়ার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আগাম বন্যা হলে হাওরের নিম্নাঞ্চলের ধান ডুবে যেতে পারে। বন্যার আগে ধান কাটতে পারলে আমারা ভালো ধান তুলতে পারব আশা করছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার বলেন, ‘এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ বেশি হয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকদের পেকে যাওয়া ধানগুলো দ্রুত কাটার আহবান জানাচ্ছি। এ জন্য প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। আগের বছরের চেয়ে এবার বোরো ধানের ফলন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। ধান ঘরে তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে আশা করছি। এখানে ধান কাটার শ্রমিকদের সংকট হবে না। কৃষকরা লোকালে কাটে। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন থেকে কৃষি শ্রমিকদের ত্রাণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য অনেকেই ধান কাটায় আগ্রহী হবেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত