তাহিরপুর প্রতিনিধি

১৮ এপ্রিল, ২০২০ ১৩:২৭

ত্রাণের তালিকায় মেম্বারের পরিবারের সদস্যরা!

করোনাভাইরাসের সংকট মুহূর্তে সরকার অসহায়, দিনমজুর, অসচ্ছল পরিবারে ত্রাণ সহায়তার হাত বাড়ালেও দেশের বিভিন্ন এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ত্রাণ সহায়তা ও নামের তালিকায় একের পর এক অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছেন। অসহায় পরিবারের পরিবর্তে এবার ত্রাণের তালিকায় ইউপি মেম্বার নিজে, এরপর মা, শাশুড়ি, শ্যালক, মেয়ের জামাইয়ের নাম যুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন অভিযুক্ত মেম্বার।

এমন ঘটনা ঘটেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৫নং বাদাঘাট ইউনিয়নে ৮নং ওয়ার্ডে সরকারি ত্রাণ সহায়তার অগ্রাধিকার তালিকায়। এ তালিকা প্রকাশিত হলে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড জাংগাল হাটি, লামা শ্রম, রাজারগাও, ডালার পাড়, লাউড়েরগড় গ্রামসমূহ নিয়ে গঠিত। আর এই ওয়ার্ডের মেম্বার সাদত আলীর ছেলে আব্দুল হক।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের তালিকা সূত্রে জানা যায়, সরকারি ত্রাণ সহায়তা জন্য আব্দুল হকের স্বাক্ষর ও সিলমোহরকৃত নামের তালিকায় ৪৮টি নাম রয়েছে। এর মধ্যে নারী মেম্বার মনোয়ারা বেগমের জন্য বরাদ্দ ১০টি নাম। অবশিষ্ট ২৮টি নামের মধ্যে ১০ জন তার আব্দুল হকের নিজ পরিবারের।

তালিকায় উল্লেখিত ক্রমিক নং-৪ জরিনা খাতুন স্বামী মৃত সাদত আলী (তিনি মেম্বারের মা), ক্রমিক নং-৩৫ আ. হক পিতা সাদত আলী (মেম্বারের নিজের নাম মোবাইল নম্বর সহজ অন্তর্ভুক্ত করেছেন)।

বিজ্ঞাপন

একই পরিবারের তিনজনের নাম ক্রমিক নং-২৯ তার শাশুড়ি, ক্রমিক নং-৩০ শ্যালিকা, ক্রমিক নং-২৪ শ্যালক ও ৩৭নং ক্রমিকে ওয়ার্ড নং ৯ এর বাসিন্দা অপর এক শ্যালকের স্ত্রীর নাম ও ক্রমিক নং-১৬ মেম্বারের মেয়ের জামাই ৯নং ওয়ার্ড বাসিন্দা। ক্রমিক নং-৩১ তার আপন মামা শ্বশুর।

এছাড়া কিছু নামের সাথে পিতা কিংবা স্বামীর নামের মিল নেই।

অসহায় লোকজন কর্মহীন লোকজন ক্ষোভের সাথে বলেন, যেখানে অসহায় লোকজন কর্মহীন হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে আর তিনি কি না তাদের ন্যায্যতা নিয়ে ধোঁকাবাজি করছেন। সেই সাথে সরকারি সহায়তা আত্মসাৎ করার জন্য নিজ পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকায় রেখেছেন। এর পূর্বেও ভিজিএফ, ঘরসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়ার কথা বলে টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে মেম্বারের বিরুদ্ধে।

তালিকায় প্রকাশের পর সাংবাদিক আলম সাব্বির জানান, লাউড়েরগড় বাজারে শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি ফার্মেসিতে ওষুধ নিতে গিয়ে মেম্বারকে পেয়ে বলি নিজের নাম বাদ দিয়ে অসহায় লোকজনের চিন্তা করা উচিত। বর্তমান সময়ে সবাই বিপদে। এক ঘরে তিনজনের নাম না দিয়ে দেখে শুনে দিলে কি হয়। এই কথা বলার পর মেম্বার আব্দুল হক অসদাচরণ করেন। তখন উপস্থিত জনতা মেম্বারের অসদাচরণের প্রতিবাদ জানান।

তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মেম্বারের সামনেই তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করি। তিনি অবাক হন এবং বিষয়টি ভালোভাবে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। পরক্ষণেই আমাকে বাড়ি যাওয়ার পথে দেখে নেবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যান মেম্বার।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার আ. হক বলেন, আমি আমার নিজের ও মায়ের নাম দিয়ে ভুল করেছি। ইউএনও স্যার বলেছেন নাম কেটে দিতে, তাই আমি কেটে দিয়েছি। আর বাকীদের যাচাই করেন তারা পাওয়ার যোগ্য কি না।

সাংবাদিককে হুমকির বিষয়ে বলেন, আমি কাউকে হুমকি দেইনি। ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত