মুজাহিদ সর্দার, দিরাই

১৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৫:০৪

দিরাইয়ে দ্রব্যমূল্য যেন পাগলা ঘোড়া

সরকারের নির্দেশনা মেনে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন নিজ ঘরে। এ অবস্থায় কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। চৈত্র-বৈশাখ মাসে এমনিতেই হাওরপাড়ের মানুষ থাকেন অভাবে। এর মধ্যে করোনার কারণে কর্মহীন। যদিও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহন লকডাউনের আওতার বাইরে। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে দ্রব্যমূল্য যেন এখন পাগলা ঘোড়া। বর্তমানে বহুবিধ সমস্যার অন্যতম দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি।

নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের প্রতিনিয়ত দাম বাড়তে থাকায় কিছু মুনাফা শিকারি ও বিত্তশালী বাদ দিলে অবশিষ্ট জনসাধারণের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দুঃখ-দৈন্যে দিশেহারা। পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী, নির্দিষ্ট আয়ের চাকরিজীবী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ও জীবন সংগ্রামে পর্যুদস্ত মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

মহামারীর সংকটময় মুহূর্তে পণ্যসামগ্রীর চাহিদা ও জোগানের সমতা রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম ঘাটতি তৈরি করে মুনাফা লুটতে না পারে সেদিকে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি জোরদার করার আহ্বান জানান হাওরের জনপদ দিরাইবাসী।

এই দুর্যোগে হাওরবাসীর জন্য সরকারি ত্রাণ খুবই অপ্রতুল উল্লেখ করে দিরাই পৌর শহরের মজলিসপুর গ্রামের প্রণয় তালুকদার বলেন, আমাদের এলাকায় অধিকাংশ মানুষই খেটে খাওয়া দিনমজুর। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মানুষ ঘরবন্দি। এই মুহূর্তে গত দুই-তিনদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, রসুনের দরও কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। দ্রব্যমূল্যে লাগামহীন বৃদ্ধি পাওয়ায় মহাবিপাকে পড়েছি আমরা নিম্নআয়ের মানুষ। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরার পাশাপাশি সরকারি ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধির দাবি জানাই প্রশাসনের কাছে।

দিনমজুর আব্দুর রউফ ময়না বলেন, করোনাভাইরাসের ভয়ে ঘর থেকে বের হই না। যদিও অভাবের তাড়নায় বের হই পুলিশ-সেনাবাহিনীর ভয়ে ঘরে ফিরে আসি। জিনিসপত্রের যে দাম ছেলে-মেয়েদের নিয়ে তিন বেলা খাওয়া তো দূরের কথা এক বেলা পেট ভরে খেতেই হিমশিম খাচ্ছি। টিভিতে দেখছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরীব অসহায় মানুষের জন্য অনেক বরাদ্দ দিয়েছেন, আমরা দাবি জানাই তা যেন সেনাবাহিনীকে দিয়ে বিতরণ করা হয়।

দিরাই পৌরসভার বাজার মনিটরিং স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ বলেন, পণ্য সরবরাহ থাকার পরও ইদানিং কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে, ইউএনও মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে বাজার মনিটরিং জোরদার করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সফি উল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে জনজীবনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। খুব শীঘ্রই এই সংকট কেটে উঠবা। ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছি। যারা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অবৈধ মুনাফা নিতে চায় আমরা শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবো।

প্রসঙ্গত, সারাবিশ্বে মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন-দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রায় সারাদেশই লকডাউন। এর ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জ জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত