মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

২৩ এপ্রিল, ২০২০ ২০:৪৯

সাংসদ থেকে শিক্ষার্থী- হাওরে ধান কাটছে সবাই

হাওর প্রধান জেলাগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জ অন্যতম। হাওরের প্রধান ফসল বোরো ধান। বছরে এই একবারই ধান হয় এখানে। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার খাদ্যের জোগান দেয় এই ধান।

এবছর সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের কারছে ফসল তোলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষকরা। একদিকে বাইরের শ্রমিক নিয়ে আসতে হলে সংক্রামক ঝুঁকি অন্যদিকে সরকারের দেওয়া হারভেস্টার মেশিন সকলের কাছে পৌছেনি। আছে বন্যায় পষল তুলিয়ে যাওয়ার শঙ্কাও। এঅবস্থায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা। কৃষকের সাথে মাঠে ধান কাটতে নেমেছে বিদ্যালয়-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, প্রশাসনের লোকজন এবং ছাত্রলীগ যুবলীগসহ নানা রাজনৈতিক সংগঠন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এমন সহযোগিতায় সাহস পাচ্ছেন হাওরের কৃষকরা।

বিজ্ঞাপন



জানা যায়, সুনামগঞ্জের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুই সপ্তাহে টানা বৃষ্টিপাতসহ আগাম বন্যার আশঙ্কা রয়েছে যার ফলে বিশাল হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ফলে বিশ্বে এমিতেই খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। এঅবস্থায় হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান রক্ষা করা না গেলে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা থাকায় প্রশাসনের অনুরোধে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক দলগুলো। স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে হাওরে মাঠে ধান কেটে দিচ্ছেন তারা।

এদিকে হাওরের কৃষকদের ধান কাটতে উৎসাহ প্রদান করতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছেন সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার। তিনি কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন। এছাড়া হাওরে হাওরে গিয়ে ধান কাটছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা, তাহিরপুর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার অসহায় কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছে তারা, তাদের পাশাপাশি যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপলের নির্দেশে হাওরে গিয়ে ধান কাটছে যুবলীগের নেতৃবৃন্দরা। অন্যদিকে বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারাও মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে ধান কাটছেন এবং বিদ্যালয় পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও হাওরে গিয়ে কৃষকদের ধান কাটতে দেখা গিয়েছে।

কথা হলে সদর উপজেলার কাটাইল ইউনিয়নের ডাকুয়া হাওরের কৃষক আমিনুল হক বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছিলাম না। ফলে ধানগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিলো কিন্তু ছাত্রলীগের ছেলেরা এসে আমার জমির ধান কেটে দিয়ে ঘরে নিয়ে দিয়ে এসেছে এ বিপদে তাদের পাশে পেয়ে আমি এখন শঙ্কামুক্ত। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

এদিকে তাহিরপুর উপজেলার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, বাগলী উচ্চ বিদ্যালয়, এমএ জাহের আলী উচ্চ বিদ্যালয়, ট্যাকেরঘাট স্কুল এন্ড কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী  উপজেলার শনি, মাটিয়ানসহ ছোটবড় সবগুলি হাওরের কৃষকের পাঁকা বোরো ধান কাটার কাজে যুক্ত হয়েছেন।

তাদের মধ্যে হাজী এমএ জাহের উচ্চ বিদ্যালয়ে এ্সএসসি পরিক্ষার্থী মোরছালিন আহমদ বলেন, , কৃষকরা হলো এদেশের প্রাণ। তারা আমাদের প্রতিবছর ভাতের যোগান দেন এ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যদি আমরা তাদের পাশে না দাড়াই তাহলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই আমরাও হাওরে গিয়ে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছি।

এছাড়া সুনামগঞ্জের হাওরে নেতাকর্মীদের নিয়ে যুবলীগ, কৃষকলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন ও স্কাউটস গ্রুপের সদস্যদেরও মাঠে গিয়ে ধান কাটতে দেখা গিয়েছে।

কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ধান কাটতে যাওয়া সুনামগঞ্জ-সিলেট সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার বলেন, এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি মাঠে কাজ করছি। আমাদের একটাই চিন্তা কৃষকরা ফস গুলো যেন ভাল ভাবে ঘরে তুলতে পারে। আমরা যদি ধানটা ঘরে তুলতে পারি তাহলে আমাদের যে খাদ্যের অভাব সেটা আর থাকবে না, এবং আমি বিশ্বাস করি সুনামগঞ্জে যে বাম্পার ফলন হয়েছে শুধু সুনামগঞ্জ নয় সারা বাংলাদেশের খাদ্যের অভাব পূরণ করতে পারবে। তাই আসুন আমরা সবাই কৃষকের পাশে দাড়াই।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপংকর কান্তি দে বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নিদের্শনার মধ্য দিয়ে আমরা জেলার সকল উপজেলায় ছাত্রলীগ কর্মীদের অনুরোধ করেছি হাওরে গিয়ে ধান কাটার। আমরাও হাওরে হাওরে গিয়ে ধান কাটছি। আমাদের মূললক্ষ্য আগাম বন্যার আগে ধানগুলো কৃষকের ঘরে তুলে নেওয়া।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমাদের একটি আগাম বন্যার সর্তকবার্তা রয়েছে তাই কৃষকরা যেনো দ্রুত ধানগুলো ঘরে নিয়ে আসতে পারেন সেজন্য প্রশাসনের কমকর্তারা মাঠে রয়েছেন। তারা কৃষকদের ধান কাটতে সহযোগিতা করছেন এবং যারা বাহির থেকে শ্রমিক নিয়ে আসছেন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এবছর সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে দুই লাখ ২০ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ মেট্রিক টন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত