মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

২৬ এপ্রিল, ২০২০ ২২:৫৮

সুনামগঞ্জে লকডাউন মানছে না কেউ

সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের কারণে চলছে লকডাউন। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেরও বিভিন্ন জেলায় করোনা প্রতিরোধে মানুষকে ঘরে রাখতে চলছে লকডাউন। যার মধ্যে হাওরপ্রধান জেলা সুনামগঞ্জকেও করা হয়েছে লকডাউন। প্রথমে একজন রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসক লকডাউন ঘোষণা করলেও বর্তমানে লকডাউন মানছেন না কেউ।

বর্তমানে সুনামগঞ্জে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৫ জন হলেও বাইরের চিত্র বলছে অন্যকিছু। এছাড়া শুরুর দিকে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া নিরাপত্তা থাকলেও বিগত কয়েকদিন ধরে সেটিও যেন আর নেই।

জানা যায়, সুনামগঞ্জে শনিবার পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও দুইজন শিশুসহ ১৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ২ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, শাল্লা উপজেলায় ৩ জন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২ জন, ছাতক উপজেলায় ২ জন এবং জগন্নাথপুর উপজেলায় ২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। কিন্তু ১২ এপ্রিল সুনামগঞ্জে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলে লকডাউন ঘোষণা করে সবাইকে জরুরি কারণ ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও বর্তমানে মানুষের ভিড় চোখে পড়ার মতো।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে পরিবহন চলাচলে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটা মানছেন না কোন সিএনজি, অটোরিকশা চালক। তাছাড়া মসজিদে গণজমায়েত না করার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটা মানছেন না অনেক মসজিদ।

সরজমিনে, সুনামগঞ্জ শহরের আলফাত উদ্দিন স্কয়ার রোড, জেল রোড এলাকা, মধ্যবাজার, কাজির পয়েন্ট, ষোলঘর এলাকায় মানুষের জনসমাগম চোখে পড়ার মতো ছিলো। কারণে অকারণে অনেকে বের হচ্ছেন অনেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক আর হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছেন অনেক তরুণ যুবকরা। যার বাজারে যাওয়ার নাম করে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দিতে। এছাড়া দুপুরের দিকে পুলিশ সদস্যরা খাওয়ার জন্য গেলে কোন রকমের ভীতি ছাড়া মানুষজন বাহিরে বের হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন সদস্য বলেন, আমাদের মানুষকে যতোই বলেন না কেন ওরা কোনদিন বুঝবে না। করোনাভাইরাসের কারণে যখন বিশ্বের মানুষ ঘরে অবস্থান করছে সেখানে আমাদের দেশের মানুষেরা নানা অজুহাতে বের হবে। পুলিশ কঠোর হলে সাংবাদিকরাই নিউজ করবে ওই পুলিশ সদস্য পিটিয়েছেন তাই আমরা এখন মানুষে যতটুকু সম্ভব বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠাচ্ছি।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিজন সেন রায় বলেন, মানুষজন বের হচ্ছে, রোগটি সংক্রামিত জেনেও বের হচ্ছে। মানবিক দৃষ্টিতে যদি দেখি তাহলে পেটে ক্ষুধায় মানুষজন বের হচ্ছে এবং হবেই। আর কয়েক শ্রেণির লোক আছে যারা বিনা কারণে বের হবেই। তাদেরকে নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। প্রতিটি পাড়া মহল্লায় পুলিশের টহল জোরদার করতে হবে।

সিএনজি চালক রুবেল আহমদ বলেন, পেটের খিদার কারণে বের হইছি। আমার ঘরে কেউ খাবার দেয়নি তো আমি কি করবো আমাকেও তো সংসার চালাতে হবে। তাই বের হই। যদি ঘরে খাওন থাকতো তাহলে আমরা বের হতাম না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিত্য বনিক বলেন, আমরা সচেতন হওয়ার চাইতে ঝুঁকি বেশি নিয়ে নিচ্ছি। প্রতিনিয়ত আমরা বের হচ্ছি ঘুরছি বাজারে যাচ্ছি। করোনার ভয় আমাদের নেই বললেই চলে কিন্তু করোনার মতো এতে বড় ভাইরাসকে আমরা পাত্তা দিচ্ছি সেটার ভয়াবহতা তে কি হবে সেটাই ভাবতে অবাক লাগে। এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ১৫জন আক্রান্ত ভবিষ্যতে কি হবে সৃষ্টিকর্তাই জানেন।

অন্যদিকে সুনামগঞ্জের হাওরে হাওরে আগাম বন্যা মোকাবেলায় চলছে ধান কাটা। যার কারণে বিভিন্ন জেলা থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে ধান কাটার শ্রমিক। তাই প্রশাসন বলছে শুধুমাত্র ধান কাটার ক্ষেত্রে ও হাওরের কৃষকের জন্য লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। কারণ তারা ধান ঠিকমতো কাটতে পারলে দেশের খাবারের ঘাটতি হবে না। এছাড়া সংক্রামণ ঝুঁকি এড়াতে হলে অবশ্যই বাড়িতে অবস্থান পরামর্শ দিচ্ছেন সিভিল সার্জন।

সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, যেহেতু সুনামগঞ্জে করোনা রোগীর সংখ্যা ২ থেকে ১৫-তে চলে গেছে তাই আমাদের এখন বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। যতোটা সম্ভব জরুরী কারণ ছাড়া বের না হওয়াই এখন আমাদের জন্য নিরাপদ। তাছাড়া হাওরে যারা ধান কাটছেন আমরা তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেই কাজে পাঠিয়েছি সেক্ষেত্রে ভয় কিছুটা কম। কিন্তু অন্যান্যরা বাহিরে ঘুরাঘুরি করলে করোনা সংক্রামণ হওয়া আশঙ্কা থাকবে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আপনারা জানেন সরকার সীমিত আকারে শিল্পকারখানা ও অফিসগুলো খোলা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং রমজান চালতে তাই মানুষজন কিছুটা বের হচ্ছে, তাছাড়া অনেকে বিভিন্ন রকমের অজুহাত নিয়ে বাহিরে বের হচ্ছে ধরেন প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে বা বাজারের থলি হাতে নিয়ে এখন সেগুলো আমরা ছেড়ে দিতে হয় কারণ সে কোন অপরাধ করছে না আর যারা নি¤œ আয়ের মানুষজন আছে তাদের একটু ছাড় দিতেই হয়। তবুও আমরা কয়েকদিন দেখবো পরে আবারও আমরা কঠোর অবস্থান নিবো।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, শহরের মানুষজন শিক্ষিত এখন তারা যদি এগুলো না বুঝে এখন আমি তাদের উপর চড়াও হতে পারবো না। তাদের ভালোমন্দ বুঝার ক্ষমতা তাদের আছেই এখন তারা যদি এমন কাজ করে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখন হাওরের ধান কাটাকে গুরুত্ব সহকারে দেখতেছি। কারণ ধান যদি কেটে নেই তাহলে কৃষকের মুখে হাসি থাকবে তাই ধান কাটার ক্ষেত্রে লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই আমাদের কাজ করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত