তাহিরপুর প্রতিনিধি

৩০ এপ্রিল, ২০২০ ২০:৫৪

করোনাকালে কষ্টে আছেন সাবেক এমপি কালিচরণের বংশধরেরা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় আসাম আইনসভার সাবেক এমপি কালিচরণ রবি দাসের বংশধররা বর্তমান করেনা সংকটে কষ্টের জীবন যাপন করছেন। এ খবর পেয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করোনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের আনোয়ার-নোয়াহাট গ্রামে গিয়ে তোদের সাথে দেখা করেছেন।

এ সময় আসাম আইনসভার এমপি কালিচরণের বংশধররা তাদের কষ্টে জীবন যাপনের কথা জানান। চেয়ারম্যানও তাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, কালিচরণ রবি দাস সুনামগঞ্জ মহকুমার তাহিরপুর থানার আনোয়ারপুর নয়াহাট গ্রামে ১৮৯০সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ক্ষুদিরাম রবি দাস। মৃত্যুবরণ করেন ১৯৫২সালে। ভারতের আজমগর জেলায় ছিল তার পূর্ব পুরুষের বসবাস।

রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও কংগ্রেস কর্মীরা আসাম প্রাদেশিক পরিষদের শূন্য পদে দাড় করিয়ে দিয়েছিলেন (ব্রিটিশ শাসন ও তাদের দেয়া সীমিত নির্বাচনের বিরোধিতা করে)। ভাগ্যগুণে তিনি স্বতন্ত্র রিজার্ভ আসন থেকে পাশ করেছিলেন। তার সাথে ১৯২২সালে আসাম প্রাদেশিক পরিষদে আরও যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা হচ্ছেন, রায় বাহাদুর অমরনাথ রায়, রায় সাহেব প্যারীমোহন দাশ ও মৌলভী মুনাওর আলী প্রমুখ।

কিন্তু একজন এমএলএ এর দায়িত্ব পালনের মত না ছিল তার অভিজ্ঞতা না ছিল শিক্ষাগত যোগ্যতা। তার কাজে সহযোগিতা করার জন্য সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করা হয় বাবু লালা নিরেন্দু দে বুলি বাবু মোক্তারকে। বর্তমানে তিনিও বেঁচে নেই।

সুনামগঞ্জের রাজনীতির এই প্রবাদ পুরুষ অনেক আগে প্রয়াত হলেও তার বংশধররা এখনও তার স্মৃতি অবদানকে স্মরণ করেন।

কালিচরণ ৪ পুত্র ও ১ কন্যার জনক ছিলেন। তন্মধ্যে সিও নারায়ণ রবি দাস, মেজো ছেলে মাখন রবি দাস, কাপ্তান রবি দাস আনোয়ার নয়াহাট গ্রামেই লোকান্তরিত হন। জ্যেষ্ঠ পুত্র দেশভাগের আগেই ভারতে চলে যান এবং সেখানেই লোকান্তরিত হন। একমাত্র কন্যা পিয়ারী রবি দাস বৈবাহিক সূত্রে বিশ্বম্ভরপুর থানার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাঘমারা কাইলাকান্দি গ্রামে বসবাস করতেন এবং সেখানেই লোকান্তরিত হন।

বর্তমানে কালিচরণ রবি দাসের ভাতিজা (সুরেশ লাল রবি দাসের একমাত্র ছেলে) সঞ্জয় রবি দাস বসবাস করে তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের আনোয়ারপুর নয়াহাটে।

কালিচরণ রবি দাসের দৌহিত্র রুপলাল রবি দাস বলেন, আনোয়ারপুর নয়াহাট গ্রামে আমাদের পূর্ব পুরুষদের প্রায় ৭০/৮০বছরের বসতি। আমার নানা বাবু কালিচরণ মুচিকে এই এলাকার মানুষ প্রথমে ভোট দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বানায়। তখন ঐ এলাকায় শিক্ষিত লোকের সংখ্যা খুব কম ছিল। সমগ্র ইউনিয়নে ভোটারের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২০জন। ভোটারদের ভোটাধিকারের যোগ্যতা ছিল ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাশ। বাবু কালিচরণ রবি দাস শিক্ষিত হওয়ার কারণে তিনি মেম্বার পদে প্রার্থী ও নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরে সাহস করে এমপি পদে প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসামের আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কংগ্রেস দলের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

কালিচরণ রবি দাসের সহোদর মহাবীর রবি দাসের পুত্রবধূ শিব নারায়ণ রবি দাসের স্ত্রী বাসন্তী রবি দাস নামের এক বিধবা বৃদ্ধাকে পাওয়া যায় নয়াহাট গ্রামে। কিভাবে তারা জীবিকা নির্বাহ করছেন জানতে চাইলে বাসন্তী রবি দাস বলেন, এখন শুধু মুচির কাজ করে আমাদের চলে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জুতা সেলাইয়ের পাশাপাশি, সেলুন দিয়ে চুল কাটা, মদ বিক্রি ও দিনমজুরী করে চলতে হয়। তবে আমরা স্বাধীন এই দেশের নাগরিক হলেও আমাদের বেলায় বৈষম্যের শেষ নেই। লেখাপড়া করলেও আমাদের সন্তানদের চাকুরী হয় না। বিপদে আপদে আমরা সরকার প্রশাসনের সহযোগিতা পাইনা।

তাহিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, তৎকালীন সময়ে সুনামগঞ্জের শীর্ষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তারা প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী হলেও আসাম আইনসভার এমপি বাবু কালিচরণ রবি দাস (কালিচরণ মুচি) ছিলেন স্বভাবতই সহজ সরল সাদাসিধা নরম মেজাজের নিরহংকারী মানুষ। এমপি নির্বাচিত হলেও অতি সাধারণের মতোই ছিল তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বর্তমানে তার বংশধর রা নানান ভাবে কষ্ট করেই জীবনযাপন করছে আমি আমার সাধ্য মত তাদের সহযোগিতা করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত