জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

০৩ মে, ২০২০ ২১:১২

ফসল ঘরে তুলতে হাওরে হোড়ায় বসতি স্থাপন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে পুরোদমে ধান কাটা, মাড়াই আর শুকানো নিয়ে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। জেলার ছোট বড় সব গুলো হাওরেই এখন শ্রমিক, কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।

হাওর থেকে পাকা ধান কেটে আনছেন শ্রমিক আর সেই ধান মাড়াই ও শুকাচ্ছেন কৃষাণ কৃষাণীরা। কষ্টের ফলানো সোনার ফসল ঘরে তুলতে কৃষক ও শ্রমিকরা এখন ধানের খলায় হোড়া (ছোট ঘর) স্থাপন করেছেন। দিনভর হাওরে ধান কাটার পর খলায় মাড়াই শেষে রাতে এই হোড়ায় অবস্থান করেন শ্রমিকরা। এতে করে খলায় রাখা ধানের নিরাপত্তাও দিতে পারছেন কৃষকরা।

সরেজমিন বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বছর এই জেলায় অন্য জেলার ধান কাটার শ্রমিক আসলেও এবার অনেক কম এসেছেন। তাই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শ্রমিকরা এসে বিভিন্ন হাওরে অস্থায়ী ভাবে খলায় হোড়া স্থাপন করে থাকছেন। ধান সংগ্রহ ও তদারকি করার জন্য হোড়ায় বসতি শুরু করেছেন কৃষকরা।

ধান ঘরে তোলতে রাত্রিযাপন করার জন্যই হাওরে শতাধিক ছোট ছোট অস্থায়ী ছনের ঘরে (হোড়া) তৈরি করা হয়েছে। আবার অনেক কৃষক তাদের বাড়ির কাছেই খলা তৈরি করে সেখান হোড়া তৈরি করে থাকছেন।

ধান কাটা মাড়াইয়ের পাশাপাশি সকাল, দুপুর ও রাতের রান্না করার জন্য চুলা বানিয়ে রান্না-বান্না করছেন তারা। থাকা খাওয়া বিশ্রাম সব কিছু হচ্ছে হাওরের ছোট এই ঘরটিতেই।

হাওরে অনেক দিনমজুর রয়েছেন যাদের কোন জমি নেই, তারপর বছরের খাবার যোগার করতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে হাওরের এক খণ্ড অনাবাদী উঁচু জমিতে ছন ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী ঘর বানিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে অন্যর জমির ধানকটা, মাড়াই, ঝাড়া, শুকানোর কাজ করতে পুরু বৈশাখ মাস জুড়েই হাওরেই থাকেন তারা। এর বিনিময়ে তিন থেকে চার মন ধান পান তারা।

শনির হাওরের খলায় হোড়ায় বসতি স্থাপনের পাশে রান্না করছেন মাসুক মিয়া। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, তিন বছর ধরে তিনি ধান কাটেন। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন থেকে এবারও এসেছেন রহমত আলী দল নেতা, ফুল মিয়ার সাথে। তাদের দলে রয়েছে ২১ জন। ধান কাটবেন উজান তাহিরপুর গ্রামের আশাফুল ইসলামের। ধান কাটার পাশা পাশি ধান কাটা শ্রমিকদের খাবারের ব্যবস্থার দায়িত্ব তার। পুরু বৈশাখ মাসেই থাকবেন হোড়াই।

মাটিয়ান হাওরের কৃষক সাজিদ জানান, মাটিয়ান হাওরে তাদের দুই হাল (১২ কেদারে এক হাল) জমি আছে। বাড়ি থেকে জমির দূরত্ব অনেক বেশী হওয়ায় হাওরে অস্থায়ী হোড়া বানিয়ে বসতি স্থাপন করছেন।

তিনি বলেন, রান্না, খাওয়া সব কিছুই এখনে। হাওরে ধান কেটে মাড়াই দিয়ে শুকিয়ে পরে বস্তায় ভরে গাড়ি দিয়ে বাড়ি নিয়ে যাব। এর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হোড়ায় আমাদের বসতি।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাওরে কৃষকরা পুরুদমে ধান কাটা, মাড়াই আর শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। আর এর জন্য ধান কাটার শ্রমিক ও কৃষকরা খলায় হোড়া (ছোট ঘর) বানিয়ে বসতি স্থাপন করেছেন। এই হোড়া হাওরাঞ্চলের কৃষকরা প্রতি বছরেই তৈরি করেন। ধানের নিরাপত্তা ও নিজেদের বাড়ি থেকে জমি দুরে থাকায় এই হোড়া তৈরি করা হয়।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত