সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

৩০ আগস্ট, ২০১৬ ১৬:১৭

৫০টি নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে দুই দিনের ভ্রমণোৎসবের উদ্যোগ

পর্যটন উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলার দাবি

আন্তর্জাতিক রামসার সাইট খ্যাত জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন সম্ভাবনা দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিতে ও পর্যটন উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তোলার দাবিতে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌযাত্রা করবে উপজেলা পরিষদ। এতে থাকবে ৫টি বিরাট লঞ্চসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক ইঞ্জিনচালিত নৌকা। দেশের যে কোন স্থান থেকেই এই নৌ যাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য পর্যটক ও ভ্রমণপিয়াসীদের আহ্বান জানিয়েছে উপজেলা পরিষদ।

উপজেলা চেয়ারম্যানের পরিকল্পনায় দু’দিনের ভ্রমণোৎসবে টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যখানে ভাসমান মঞ্চ করে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। শেষের দিন সীমান্ত নদী যাদুকাটা সংলগ্ন বড়গোপটিলায় একই ব্যবস্থা থাকবে। আজ সোমবার বিকেলে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছরই টাঙ্গুয়ার হাওরে বর্ষা-শীত মৌসুমে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ স্বপরিবারে বেড়াতে আসেন। তাদের যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা না থাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হলেও সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে টাঙ্গুয়ার বৈচিত্রময় সৌন্দর্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশ-বিদেশের ভ্রমণার্থীরা। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যটন প্রচারণার লক্ষ্যে এবং টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রিক পর্যটক অবকাঠামো গড়ে তোলার দাবিতে এই নৌযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র আরো জানায়, প্রায় অর্ধশতাধিক নৌকাযোগে টাঙ্গুয়ার হাওরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করা হবে। উপস্থিতিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে সৌন্দর্য্য ও বৈচিত্র্যের। উৎসবের প্রথম রাত টাঙ্গুয়ার হাওরের মধ্যখানে ভাসমান মঞ্চে কাটানো হবে। রাতে থাকবে বারভিকিউ ও বাউল গানের অনুষ্ঠান। পরদিন হাওর ঘুরে নৌবহর এসে লাগবে রূপের নদী যাদুকাটায়। এখানে ঘনসবুজের খাড়া ও ঢালু টিলা বড়গোপটিলা (বারেকের টিলা) মঞ্চ করে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।

এদিকে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের ভ্রমণার্থীদের দুই দিনের উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। যারা স্বপরিবারে আসতে আগ্রহী তাদের জন্যও পারিবারিক বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। উৎসবকালীন দুই দিনের আলোচনায় মূল্যবান মতামত নিয়ে সরকারের কাছে পর্যটন বিষয়ক সুপারিশ জানাবেন আয়োজকরা।

এ ব্যাপারে ভ্রমণোৎসবের পরিকল্পক উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, প্রতিদিন শত শত মানুষ টাঙ্গুয়ার হাওর দেখতে আসেন। পর্যটন অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে তারা টাঙ্গুয়ার পুরো সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন না। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরে এই নাওযাত্রার মাধ্যমে একদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরের পর্যটন সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে চাই, অন্যদিকে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাব।

তিনি আরো বলেন, প্রায় ৫০টি নৌকার মাধ্যমে এই নাওযাত্রার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকেই নামমাত্র খরচে এই উৎসবে যোগ দিতে পারবেন যে কেউ।

উল্লেখ্য ৯৭.২৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই অনন্য জলাভূমিতে ৫২টি বিল, ১২০টি কান্দা-জাঙ্গাল রয়েছে। ১৪১ প্রজাতির মাছ, ২০০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২১৯ প্রজাতির পাখি, ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি, ১২১ প্রজাতির দেশীপখি, ২২ প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস, ১৯ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী পাণী, ২৯ প্রজাতির সরিসৃপ, ১১ প্রজাতির উভচর প্রাণীসহ অসংখ্য স্থলজ, জলজ প্রাণী ও জীববৈত্রি রয়েছে রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত