সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ জুন, ২০২০ ১৫:৩৫

ব্যবসায়ী হেলাল হত্যার মূল আসামি রূপম গ্রেপ্তার

রাজধানীর দক্ষিণখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হেলাল হত্যায় মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২২ জুন) ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন এ তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, পঞ্চাশ হাজার টাকার লোভে চার্লস রূপম নামে এক ব্যক্তি নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করেন হেলালকে। ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে পরে বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এরপর বঁটি দিয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে একেক জায়গায় মৃতদেহের একেকটি অংশ ফেলে রেখে আসেন রূপম।

এ কাজে তাকে স্ত্রী ও শাশুড়ি সহযোগিতা করেন। ওই দুজনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ইতিমধ্যে দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ১৫ জুন উত্তরার দক্ষিণখান এবং বিমানবন্দর থানা এলাকায় হেলালের দেহের খন্ডিত অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। আঙুলের ছাপের মাধ্যমে যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরে হত্যার রহস্য উদঘাটনে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত করে।

নিহত হেলাল নারায়ণগঞ্জের একটা মাদ্রাসাতে ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে সে দক্ষিণখান থানা এলাকায় মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা করতো। সম্প্রতি মোবাইলের সিম, ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাতা কলম, স্টেশনারি এবং খেলনা সামগ্রী বিক্রয়ের ব্যবসা করে আসছিল।

গ্রেপ্তার রূপম সরকার প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের দায় দায়িত্ব স্বীকার করেছে। বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছে যে পূর্ব পরিচিত হেলালের কাছে অনেক টাকা-পয়সা আছে ভেবে টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরবেলা ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে হেলালকে ব্যবহৃত ফটোস্ট্যাট মেশিন কিনতে যাওয়ার কথা বলে রুপম সরকারের বাসায় আসতে বলে। বাসায় আসলে রুপম এবং তার স্ত্রী শাহিনা আক্তার ওরফে মনি সরকার হেলালকে চা পান করতে দেয়। চা তৈরি করার সময় রুপম চায়ের মধ্যে দুটি ঘুমের বড়ি গুঁড়ো করে মিশিয়ে দেয়। চা পানের এক পর্যায়ে হেলাল ঘুমিয়ে পড়ে। পরে ডিস এন্টেনার তার গলায় স্বামী-স্ত্রী দুই দিক থেকে টেনে টেনে হেলালকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর হেলালের পকেটে থাকা ২৫৩ টাকা, মোবাইল থেকে বিকাশ এবং নগদ একাউন্টে থাকা টাকার মধ্য থেকে ৪৩ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। রাতের বেলায় শপিং ব্যাগে করে খন্ডিত মাথাটি রেখে দেয় ভূঁইয়া কবরস্থান সংলগ্ন ডোবার ডাস্টবিনের মধ্যে।

মা রাশিদা আক্তারের কাছে ৩০ হাজার টাকা রেখে রুপমের স্ত্রী মনি সরকার বাসায় চলে এলে স্বামী-স্ত্রী মিলে খণ্ডিত দেহের বাকি অংশ গুলোর মধ্যে ধড়টি বড় একটি স্কুল ব্যাগে এবং পায়ের অংশ বস্তায় ভরে রাখে। পরের দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রুপম অটোরিকশায় করে বস্তা ও স্কুল ব্যাগটি নিয়ে গিয়ে উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে আসে।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সিসি ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম ১৮ জুন তারিখে রূপম স্ত্রী মনি সরকার এবং শাশুড়ি রাশিদা আক্তারকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্য এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি পুলিশ দক্ষিণখানের গাওয়ার এলাকার একটি ডোবা সংলগ্ন ডাস্টবিন থেকে যুবকের খণ্ডিত মাথা উদ্ধার করে। এই দুজনের কাছ থেকে লুট হওয়া ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করার পাশাপাশি মূল আসামি চার্লস রুপম কখন, কোথায়, কিভাবে হত্যা করে মৃতদেহ টুকরা টুকরা করে বিভিন্ন জায়গায় গুম করে রেখেছিল তা জানা যায়।

হত্যার পরে লুট করা টাকার অংশবিশেষ নিয়ে রুপম ঢাকা ও বগুড়ায় আত্মগোপন করে বরিশালে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। গতকাল রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ডিবি উত্তরের বিমানবন্দর টিম রাজধানীর গাবতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। রুপমকে নিয়ে দক্ষিণখান থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো সুইচগিয়ারটি ও ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

আসামি চার্লস রূপম সরকারকে আদালতে পাঠিয়ে পুলিশ রিমান্ডে এনে আরও তথ্যের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানায় পুলিশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত