সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ মে, ২০২৩ ১২:৫৬

প্রয়াত আলী আশরাফের ম্যুরাল ভাঙল কে?

কুমিল্লার চান্দিনার একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে তৈরি করা প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ও সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের ছবি সংবলিত ম্যুরাল ভাঙার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা জন্ম দিয়েছে। ম্যুরালটি ভাঙা হয়েছে, নাকি ভেঙে পড়েছে—এনিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছে, আলী আশরাফের ম্যুরালটি ভাঙা হয়নি, এটি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। মঙ্গলবার স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন স্কুলের সভাপতি নাজনীন আক্তার।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রয়াত সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ দোল্লাই নবাবপুর বালিকা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় দুই বছর আগে ওই বিদ্যালয়ের দেয়ালে আলী আশরাফের ছবি দিয়ে ওই ম্যুরালটি তৈরি করা হয়। গত ২৩ মার্চ থেকে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগ নেত্রী নাজনীন আক্তার। গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) ওই বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং গ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। ওই দিন রাতেই দুর্বৃত্তরা ম্যুরালটি ভেঙে ফেলে।

স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বিদ্যালয়ের নতুন ম্যানেজিং সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ ও সংসদ সদস্যের বিদ্যালয়ে আগমনের সাথে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতার ম্যুরাল ভেঙে ফেলার যোগসূত্র থাকতে পারে। যদিও নতুন সভাপতি নাজনীন আক্তার বলেছেন, ‘ম্যুরাল ভেঙে ফেলার বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভায় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রয়াত আলী আশরাফ আমাদের দলীয় এমপি ছিলেন, তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন তার ম্যুরাল ভাঙার প্রশ্ন আসবে কেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ম্যুরাল যেভাবেই ভাঙুক একই স্থানে নতুন করে ম্যুরাল পুনঃস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

গত বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে তা ভেঙে ফেলা হলেও ঈদের বন্ধের পর রোববার বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হলে বিষয়টি ব্যাপকভাবে জানাজানি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও চান্দিনার বিভিন্ন এলাকায় প্রয়াত ওই সংসদ সদস্যের নামে বিভিন্ন স্থাপনায় থাকা ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধনী ফলক অপসারণ, ভেঙে ফেলা ও নষ্ট করার অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

ম্যুরাল নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২ মে) স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন স্কুলের সভাপতি নাজনীন আক্তার।

তিনি বলেন, পুরো স্কুলটি সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। ম্যুরালটি ভেঙে পড়ার দিন ঝড়বৃষ্টি ছিল। সেসময়ে বিদ্যুৎ ছিল না। তাই সিসি ক্যামেরা চালু ছিল না। ২৯ এপ্রিল স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে ম্যুরালটি ভেঙে পড়ার খবর পাই। তিনি আমাকে জানান, এটি ঝড়ের সময় পড়ে গেছে। ভুল বোঝাবুঝি যাতে না হয়, তাৎক্ষণিক স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষককে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করার কথা বলি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্ট্যাটাস দিয়ে ম্যুরালটি ভাঙার কারণ স্পষ্ট করেন। তারপরও আমরা তদন্ত কমিটি করি। তদন্ত কমিটি হোস্টলের ছাত্রী ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানিয়েছে, ম্যুরালের টাইলসে সিমেন্ট ঠিকভাবে না লাগাতে সেখানে গ্যাপের সৃষ্টি হয়। ওই গ্যাপের কারণে গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে ম্যুরালের টাইলস দুর্বল হয়ে যায়। ঝড় আসায় সেটি ভেঙে পড়ে। কিন্তু একটি পক্ষ কোনো কিছু না বুঝেই দুর্বৃত্তরা ম্যুরালটি ভেঙে ফেলেছে বলে অপপ্রচার করছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা, তদন্ত কমিটির প্রধান বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বরকরই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ মজুমদার, নবাবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি এবিএম সলিমুল্লাহ, সহকারী প্রধান শিক্ষক বেণী মাধব দেবনাথ, অভিভাবক সদস্য তোফায়েল আহমেদ, মাহবুব আলম মজুমদার, প্রসেনজিৎ দেবনাথসহ অন্য শিক্ষকরা।

এদিকে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ জুলাই সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফের মৃত্যুর পর এ আসনে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এমপি নির্বাচিত হন। এর থেকেই প্রয়াত সাংসদ আশরাফের পুত্র মুনতাকিম আশরাফ টিটু ও তার অনুসারীদের সাথে বর্তমান সংসদ সদস্যের বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। টিটু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী টিটুর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। সাংসদ ডা. প্রাণ গোপাল দত্তও একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বর্তমানে সাংসদের সাথে টিটুর অনুসারীদের এখন সাপে-নেউলে সম্পর্ক। তাই গত ১৬ই জানুয়ারি চান্দিনায় মডেল মসজিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টিটুর পরিবার ও তার অনুসারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যদিও ওই মডেল মসজিদের জমিদাতা ছিলেন টিটুর বাবা প্রয়াত সাংসদ অধ্যাপক আলী আশরাফ। সেই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তরও অপসারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার চান্দিনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পাননি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু ও তার অনুসারীরা।

গত এক বছরে ডাকবাংলোর ফলক ও পিপুইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম ফলক থেকে প্রয়াত সংসদ সদস্য আলী আশরাফের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। বারির চর এলাকায় জামে মসজিদের ফলক, বাতাখাসি এলাকায় একটি সড়কের উদ্বোধনী ফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে। নাওতলা সিনিয়র মাদ্রাসার ভিত্তি প্রস্তর অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন স্থাপনায় প্রয়াত আলী আশরাফের নামে থাকা উদ্বোধনী ও ভিত্তি প্রস্তরের ফলক ভেঙে ফেলা, অপসারণ ও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

এ বিষয়ে মুনতাকিম আশরাফ টিটু বলেন, আমার বাবা চান্দিনা আসনের ৫ বারের এমপি ছিলেন এবং প্রায় ৫৮ বছর এখানে রাজনীতি করেছেন। তাই প্রতিটি গ্রামে তার উন্নয়নের স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। তা ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে তার (আলী আশরাফ) স্মৃতি চিহ্ন মুছে ফেলা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে এমপি প্রাণ গোপাল দত্তের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত