সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ জুলাই, ২০১৬ ২০:১৭

শবে কদর আজ

২৬ রমজানের দিনগত রাত বা ২৭ রমজানের রাত ‘শবেকদর’ বা ‘লাইলাতুল কদর’ হিসেবে পরিচিত। এ রাতকে বিশ্বের মুসলমানরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে।

এ রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয় কেন—এ ব্যাপারে তাফসিরবিদরা বেশ কয়েকটি ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছেন। ‘কদর’ শব্দের অর্থ পরিমাণ নির্ধারণ ও হুকুম। যেহেতু এ রাতে সৃষ্টিকুলের ভাগ্যলিপিতে নির্ধারিত অংশের যেটুকু এ রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত বাস্তবায়নযোগ্য, তা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আদিষ্ট ফেরেশতাদের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তাই এ রাতের নামকরণ করা হয় ‘লাইলাতুল কদর’। আবার কদর শব্দের আরেকটি অর্থ হলো—সম্মান, মাহাত্ম্য। আবু বকর ওয়াররাক (রহ.) বলেন, এই রাতের নাম ‘কদরের রাত’ এ জন্য বলা হয়েছে যে এ রাতের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যপূর্ণ কিতাব আল কোরআন মর্যাদাবান ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) নিয়ে আসেন সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার অধিকারী, সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে।

লাইলাতুল কদরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো—এ গৌরবময় রজনীতে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তির সনদ ঐশীগ্রন্থ ‘আল কোরআন’ অবতীর্ণ হয়েছে। শবেকদর সম্পর্কে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)

এটি শ্রেষ্ঠতম রাত। এ রাতের ইবাদতে রয়েছে সবিশেষ গুরুত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬০; বুখারি, হাদিস : ২০১৪)

শবেকদর সম্পর্কে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বিতর্কমুক্ত অভিমত হলো, শবেকদর শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতেই  হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে কারো জন্য ইবাদত করা সম্ভব হলে ২৭তম রাত্রিতে কিছুতেই গাফেল থাকা উচিত নয়। বিশেষ করে ওই দিন মাগরিব ও এশার নামাজ মসজিদে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আদায় করলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সেও শবেকদরের ফজিলত পেয়ে যাবে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)

এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ বলে থাকেন, ২৭তম রজনীকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া অবৈধ কিংবা বিদআত! অথচ এর সপক্ষে হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামদের আমল রয়েছে। হজরত শুবা (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) শবেকদরের রাত্রিতে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি তা সম্পর্কে অবগত আছি। (আর তা হলো ২৭তম রাত্রি) কেননা রাসুল (সা.) এ রাতে আমাদের নামাজে দাঁড়াতে আদেশ করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ৭৬২)

অনুরূপ ধারণা পোষণ করতেন হজরত মুয়াবিয়া (রা.), হজরত ইবনে আব্বাস (রা.), হজরত হাসান (রা.) ও আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)। (কুরতুবি)

শবেকদরের আমল রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের শবেকদর সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য বের হয়ে এসেছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তির ঝগড়ার কারণে আমাকে তা ভুলিয়া দেওয়া হয়েছে।’ (বুখারি) সুতরাং দুই ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যকার ঝগড়াবিবাদ মিটিয়ে দেওয়া এ রাতের অন্যতম ইবাদত।

এ ছাড়া হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, হে আল্লাহর  রাসুল (সা.)! যদি আমি শবেকদর পেয়ে যাই, তবে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, এ দোয়া পড়বে—‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুম তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নি।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাকারী এবং আপনি ক্ষমাকে পছন্দ করেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’

এই পবিত্র রজনী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আলাদা বাণী দিয়েছেন।

মহিমান্বিত এ রজনী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহর সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানিয়ে বলেছেন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়েছে। তিনি বলেন, লাইলাতুল কদর মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহ তাআলার রহমতের এক অনন্য নিদর্শন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে দেশবাসী ও বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘পবিত্র এ রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তাঁর অসীম রহমত, বরকত ও মাগফিরাত।’ এই পবিত্র রজনীতে তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, অব্যাহত শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত