প্রান্ত রনি, রাঙামাটি

০৫ অক্টোবর, ২০১৬ ২২:৩১

রাঙামাটিতে ধ্বসে পড়া ভবনে উদ্ধার তৎপরতা সমাপ্ত

রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ এলাকায় হ্রদে হেলে পড়া ভবন থেকে বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় সাজিদুল নামে আরো এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে উদ্ধারকারী দল। এ নিয়ে মোট পাঁচজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সাজিদুলের মৃতদেহ উদ্ধার করার পর আরো ধ্বসে পড়া ভবনে আর কেউ না থাকায় উদ্ধারকারী দল উদ্ধার তৎপরতা বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এ উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস অংশ নেয় বলে জানিয়ে নৌবাহিনীর কমান্ডার রায়হান জানান, আর কেউ ভবনে আটকে না থাকায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

এর আগে হেলে পড়া ভবন থেকে মঙ্গলবার মধ্যরাত পর্যন্ত চারজনকে মৃত ও পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। ভবনে আটকে পড়া একটি রুম থেকে রফিকের এক শিশুপুত্র সামিদুলকে মৃত উদ্ধার করা হলেও আরেক শিশুপুত্র সাজিদুলকে পাওয়া যাচ্ছিল না। বুধবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

ভবন ধ্বসের ঘটনায় নিহত জাহিদ হোসেন ও তার মেয়ে পিংকির মরদেহ দাফনের জন্য তাদের গ্রামের বাড়ী ভোলার চরফ্যাশনে এবং নিহত দুই সহোদর সাজিদুল ও সামিদুলকে চট্টগ্রামের চন্দনাইশের গ্রামের বাড়ীতে ও তাদের গৃহ শিক্ষক উম্মে হাবিবার মরদেহ রাঙামাটিতে দাফন করা হবে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

নিহতরা হলেন ওই ভবনের বাসিন্দা ট্রাকচালক জাহিদুল ইসলাম (৪০), তার মেয়ে পিংকি (১৩) ভবনের আরেক বাসিন্দা রফিকের ছেলে সাজিদুল (১০) ও সামিদুল (৭), গৃহশিক্ষক রাঙামাটি সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্রী উম্মে হাবিবা রুনা (২২)।

এদিকে ভবন ধ্বসের পর এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। এর আগে তৈয়ব কন্ট্রাক্টরের একটি নির্মাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তখনও একটি মামলা হয়েছিলো। বারবার একই মালিকের বিভিন্ন ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় এলাকাবাসীও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

রাঙামাটির কোতোয়ালী থানা সূত্র জানায়, ভবন ধ্বসের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে তিনজনকে আসামি করে নিহতের এক আত্মীয় মো. লিটন মিয়া তিনটি ধারায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন, রেজাউল করিম, তৈয়ব কন্ট্রাক্টর, নঈমুদ্দীন টিটু। ইমারত আইনের ১২ ধারা, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫/১ ধারা ও দন্ডবিধি ৩০৪ ধারায় এই মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার বিকাল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি, তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোয়াজ্জেম হোসাইনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুকমল চাকমা, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুল্লাহ।

রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেছেন, সাধারণত পৌর কর্তৃপক্ষ রেকর্ডীয় জায়গার ওপর নির্মিত ভবন অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু মহিলা কলেজ এলাকায় নির্মিত ভবনটি রেকর্ডীয় জায়গায় নির্মিত হয়নি। তাই এটি পৌরসভারও কোনো অনুমোদন নেই। যেহেতু খাস জায়গার ওপর ভবনটি নির্মিত তাই এ বিষয়ে প্রশাসনই আইনগত ব্যবস্থা নেবে। তবে এক্ষেত্রে যা যা সহায়তা করা প্রয়োজন আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেছেন, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাঙামাটি সদরে মহিলা কলেজ সড়কের হ্রদের পাড়ে অবস্থিত দ্বিতল ভবনটি হেলে পড়তে শুরু করে। মাত্র ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে ভবনটির নিচতলা পুরোটাই হ্রদের পানির নিচে চলে যায়। এ সময় ভবনের দুটি ফ্লোরে অন্তত চারটি পরিবার আটকা পড়ে। তবে পাশের একটি নারিকেল গাছের কারণে পুরো ভবন তলিয়ে যেতে পারেনি। তখন ভবনের কয়েকজন বাসিন্দা বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।

রুবি আক্তার নামে এলাকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিকেল থেকেই ভবনটির সড়কের পাশের মাটি সরছিল এবং ভবনটি ধীরে ধীরে হেলে পড়তে শুরু করে। একপর্যায়ে বিকট শব্দে ভবনটি হেলে পড়ে এবং হ্রদের পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে।

কাপ্তাই থেকে নৌবাহিনীর একটি দল রাত আটটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে। এর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত