সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০১:৫৩

বাখরাবাদের ৩৬ কোটি টাকার গ্যাস লুট, ১০ ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

বছরে ৩৬ কোটি টাকার গ্যাস লুট করছে কুমিল্লার ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন। বাখরাবাদ অঞ্চলের মাত্র ১৬টির মধ্যে পরিচালিত এক অভিযানে ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অবৈধ সংযোগ ও টেম্পারিংয়ের প্রমাণ পাওয়ায় ওই সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বাখরাবাদ অঞ্চলে মোট ৪৭টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয়ে এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম খান এ সব তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে বাকি সিএনজি স্টেশনগুলোতেও অভিযান পরিচালিত হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সিএনজি মালিকদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে বলেও জানানো হয়। ওই প্রকৌশলী ১৭ কোটি টাকা বকেয়া থাকা সত্ত্বেও কোন সিএনজি স্টেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন নি।

এ প্রসঙ্গে জানানো হয়, প্রকৌশলী আবুল বাসার ইচ্ছাকৃতভাবে সিএনজি মালিকদের নিয়ে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বকেয়া স্বত্বেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে সিএনজি মালিকদের সহযোগিতা করে আসছিলেন। সিএনজি মালিকদের যথাসময়ে বকেয়া আদায় না করে দীর্ঘদিন সরকারি রাজস্ব না পরিশোধের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। বাখরাবাদের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী এহসানুল হক পাটোয়ার ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবুল বাসার, সিএনজি এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ও অন্যান্য সিএনজি মালিকদের একত্রিত করে প্রতি মাসে বিপুল অংকের সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎ করে আসছে।

অবৈধ গ্যাস সংযোগের সাথে জড়িত থাকায় মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) প্রকৌশলী এহসানুল হক পাটোয়ারী এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবুল বাসারকে বদলি করা হয়েছে।

অবৈধ সংযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ১০টি সিএনজি স্টেশনের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বরোডের ঝাগুর-ঝুলির রাহ্মা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ২৭ সেপ্টেম্বর সুয়াগঞ্জ ভূঁইয়া সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ৮ অক্টোবর নিমসার সৈয়দপুর-ডুবাইচরের নূর-এন্ড-ব্রাদার্স সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও আলেখার চড় সাবুরিয়া সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ৯ অক্টোবর বুড়িচং কালাকচুয়ার সাকুরা সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ১০ অক্টোবর মিয়াবাজার হাইওয়ে লিংক সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও চান্দিনার আর এন আর সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং ১৭ অক্টোবর পদুয়ার বাজার রিভার ভিউ সিএনজি ফিলিং স্টেশন এবং ঝাগুর ঝুলির মুক্তি সিএনজি ফিলিং স্টেশন।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম খান জানান, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সিএনজি স্টেশনগুলো প্রতিদিন যদি ৮০ ভাগ চাপে গ্যাস বিক্রি করে থাকে তাহলে মাসে তারা ৩ কোটি টাকার গ্যাস চুরি করেছে। আর যদি ১০০ ভাগ চাপে গ্যাস বিক্রি করে থাকে তাহলে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার গ্যাস চুরি করেছে।

তিনি জানান, কুমিল্লার বাখরাবাদ থেকে ৮৮টি সিএনজি পাম্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লা অফিসের আওতায় ৪৭টি, গৌরীপুর অফিসের আওতায় ৬টি, দেবীদ্বার অফিসের আওতায় ৩টি, লাকসাম অফিসের আওতায় ১টি, চাঁদপুর অফিসের আওতায় ৫টি, নোয়াখালী অফিসের আওতায় ৭টি, ফেনী অফিসের আওতায় ১২টি, লক্ষিপুর অফিসের আওতায় ২টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া অফিসের আওতায় ৫টি সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কুমিল্লার ১৬টি স্টেশনে অভিযান চালিয়ে ১০টিতে অবৈধ সংযোগ পাওয়া গেছে। বাকিগুলোতেও পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের নির্দেশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও চেয়ারম্যান বিজিডিসিএল বোর্ড এর নেতৃত্বে এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমেদ ও অতিরিক্ত সচিব এর নির্দেশনায় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম খানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং পরিচালনায় কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস), প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়), প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান ও ভিজিল্যান্স টিম সোমবার দিবাগত রাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ অভিযান পরিচালনা করেন।

এ অভিযানে রাত আনুমানিক ১১.২০ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থিত পদুয়ার বাজারের সন্নিকটে রিভার ভিউ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস মিটারে অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। একইভাবে মিটারে অবৈধ হস্তক্ষেপ করে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের কারণে রাত আনুমানিক দেড়টায় মুক্তি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মিটার কর্তন করে গ্যাস সংযোগ তাৎক্ষণিক বিচ্ছিন্ন করা হয়।
সূত্র : কুমিল্লার কাগজ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত