সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৫:০১

পুরোহিত সেজে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করা কোরানে হাফেজ আটক

আশরাফুল ইসলাম মিলন (৩৫) একজন কোরআনে হাফেজ। কিন্তু নিজেকে মিলন চক্রবর্তী পরিচয় দিয়ে চার বছর আগে বিয়ে করেন এক হিন্দু মেয়েকে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ডিবি পুলিশ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) মিলনকে আটক করেছে।

জানা যায়, বিয়ের পর থেকে মাগুরা সদর উপজেলার চেঙ্গাডাঙ্গা গ্রামে শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন তিনি। গলায় ব্রাক্ষ্মণের পৈতা পরে পুরোহিত সেজে 'মিলন ঠাকুর' পরিচয়ে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে করে বেড়িয়েছেন পূজা-অর্চণা। এ পর্যন্ত এক ডজনের ওপর হিন্দু বিয়েও পড়িয়েছেন তিনি।

মাগুরা ডিবি পুলিশের এসআই মো. সালাহ উদ্দিন জানান, ২০ পারা কোরআনে হাফেজ আশরাফুল ইসলাম মিলন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঞ্চন নগর গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। সেখানে তার আগের স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। ভারতে যাতায়াতের সূত্র ধরেই সেখানে মাগুরা সদরের চেঙ্গারডাঙ্গা গ্রামের বিকাশ বিশ্বাসের সাথে তার পরিচয় হয়। এ পরিচয়ের সূত্র ধরে মাগুরার চেঙ্গারডাঙ্গা গ্রামে বিকাশ বিশ্বাসের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করেন মিলন।

পরে ২০১৩ সালে হিন্দু ব্রাক্ষ্মণ পরিচয়ে বিকাশ বিশ্বাসের মেয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিতা বিশ্বাসকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। একই সাথে এলাকায় পুরোহিত সেজে পূজা করতেন ও বিয়ে পড়াতেন। নিয়মিত পূজার পাশাপাশি তিন বছরে তিনি বিয়ে পড়িয়েছেন এক ডজনের বেশি।

এসআই জানান, মিলনের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা প্রতারণা ও দালালির অভিযোগ রয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার নাম করে চয়ন বিশ্বাস নামে এক যুবকের কাছ থেকে ৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। চয়ন বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার ডিবি পুলিশ মিলনকে আটক করে।

তিনি জানান, এ সময় পুলিশ তার নামে একাধিক পাসপোর্ট উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতে তার একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে। ওইসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তিনি তার আসল বাবা ও সাবেক স্ত্রীর কাছে টাকা পাঠাতেন।

এসআই জানান, পাসপোর্টে দেখা গেছে মিলন চক্রবর্তী পরিচয়ে গত দুই/তিন বছরে তিনি ৫০ বার ভারতে গিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতে শ্বশুরের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে তিনি এই বেশ ধারন করতে পারেন। মিলন চরমপন্থী সদস্য কিনা, খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, ডিবি অফিসে সাংবাদিকদের কাছে মিলন দাবি করেন, তিনি প্রতারক নন। তিনি ২০ পারা কোরআনে হাফেজ। তার আগের স্ত্রী, সন্তান রয়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালে তিনি ভারতের যাদবপুর গিয়ে হরিপদ চক্রবর্তী নামে এক ব্যাক্তিকে ধর্ম বাবা ডাকেন। এ সময় তিনি আইনগতভাবে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন।

মিলনের দাবি, তিনি প্রায়ই ভারতে যান। কারণ, সেখানে তার জমির ব্যবসা রয়েছে। ভারতে তার বর্তমান শ্বশুরের জমি-জমাও রয়েছে, যেগুলো তিনি দেখাশোনা করেন। চাকরি দেওয়ার নাম করে চয়ন নামক যুবকের কাছ থেকে তিনি টাকা নিলেও তাদের সাথে আগেই বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে।

মিলনের স্ত্রী মাগুরা সরকারি কলেজের দর্শন বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিতা বিশ্বাস জানান, বিয়ের আগে মিলন মুসলমান ছিলেন এবং তার আগের স্ত্রী, সন্তান আছে সেটা তিনি গোপন করেছিলেন। তবে এখন তিনি মিতার বাবার বাড়িতে তার সাথে স্বাভাবিকভাবে সংসার করছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত