সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৮:৪৬

আদনান হত্যাকাণ্ড: গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে র‍্যাব

রাজধানীর উত্তরায় চাঞ্চল্যকর কিশোর আদনান কবীর (১৩) হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে যে ৮ জনকে আটক করা হয়েছিলো তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করলো র‍্যাব।

গ্রেফতার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে র‍্যাব সদরদপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, আটককৃতদের মধ্যে আদনান হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি ও কথিত ডিস্কো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু ওরফে রায়হান আহমেদ সেতু ওরফে ডিস্কো সেতু (২২)। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারভুক্ত অপর আসামি ও কথিত বিগবস গ্যাং গ্রুপের দলনেতা মো. আক্তারুজ্জামান ছোটন (১৯), মো. শাহীনুর রহমান (১৭), মো. রমজান মোবারক (১৭), মো. সেলিম খান (২৩), মো. ইব্রাহীম হোসেন ওরফে সানি (২৮), মিজানুর রহমান সুমন (২২) ও জাহিদুল ইসলাম জুইসকে (২১) আটক করা হয়।

এ সময় অভিযান চলাকালে গ্রেফতারদের হেফাজত থেকে ৩টি চাকু, ২টি চাপাটি, ২টি রড, ৩টি চেইন, ৩টি স্প্রে কালার বোতল, ২টি স্কুল ব্যাগ ও ৪ পুরিয়া গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এ ৮ জনের মধ্যে শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতুসহ দুইজন ডিস্কো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের সদস্য। আর আক্তারুজ্জামান ছোটনসহ বাকি ৬ জন বিগবস গ্যাং গ্রুপের সদস্য। এদের মধ্যে ছোটনের নামে আগেই মামলা ছিল। ডিস্কো বয়েজ গ্যাং গ্রুপের দলনেতা শাহরিয়ার বিন সাত্তার সেতু উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। তার বাবা এয়ারপোর্টের একজন সিএন্ডএফ এজেন্ট। সে বর্তমানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বিবিএ'র ছাত্র। আর ডিস্কো গ্রুপের অপর সদস্য জাহিদুল ইসলাম জুইস বর্তমানে উত্তরা স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র। তার বাবা একজন মুদি দোকানের ব্যবসায়ী।

আটকদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মুফতি মাহমুদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাইনস্টার গ্রুপ ও ডিসকো বয়েজ গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিগবস গ্রুপটি ডিসকো বয়েজের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

এর ধারাবাহিকতায় ৩ জানুয়ারি উত্তরা ১৩নং সেক্টরের ব্রিজের ওপর ডিসকো বয়েজ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টার গ্রুপের দলনেতা রাজুকে মারধর করে। এরই প্রতিশোধ নিতে ৫ জানুয়ারি আজমপুর ফুটওভারব্রিজের গোড়ায় নাইনস্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্রুপের ছোটনকে আক্রমণ করে।

এরপর থেকে বিগবস ও ডিসকো বয়েজ গ্রুপের সদস্যরা রাজুকে মারতে পরিকল্পনা করতে থাকে। রাজুকে শিক্ষা দিতে ৬ জানুয়ারি ১৩নং সেক্টর ১৭নং রোডের ১৫নং বাড়ির সামনে রাজু ও তার সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।

হামলায় রাজুসহ অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আদনান পালাতে পারেনি। সে সময় আদনানকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে খুন করে তারা।

আটকদের মধ্যে জুইস সরাসরি আদনানকে আঘাত করে আর বাকিরা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এসব গ্যাং গ্রুপের সাথে প্রাথমিকভাবে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এসব গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা সাধারণত উঠতি বয়সী কিশোর। তাদের উদ্দেশ্য এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তার করা।

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবীরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষ। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আদনানকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় আদনানের বাবা কবীর হোসেন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় আগেও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন আদালতে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত